নির্যাতনের বিচার না পেয়ে ক্ষোভ আর ঘৃণায় সাতক্ষীরার বিচার বিভাগ, পুলিশ ও বিবেকবান মানুষদের দগ্ধ করে সদর হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেলেন শিশু বিথি। বিথিকে নিয়ে যাওয়া হবে বাগেরহাটের শিশু সংশোধনাগারে। সাতক্ষীরা জুডিশিয়াল আদালতের বিচারক নুরুল ইসলাম ও স্ত্রী নাশাতার পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার হয়ে গত ১৫ দিন ধরে বিথি চিকিৎসা নিচ্ছিল সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে। বিথির শরীরে আগের মত দগ দগে গরম খুনতির স্যাঁকা ও নির্যাতনের সেই দগদগে ঘাঁ আর নেই। তবে রয়ে গেছে সব নির্যাতনের চিহৃ। শনিবার হাসপাতাল ত্যাগের আগে তার ইচ্ছার বিষয়ে জানতে চাইলে বিথি জানায়, লেখাপড়া শিখে পুলিশ হতে চায় সে। শাস্তি দিতে চাই তার উপর নির্যাতনকারীদের। আর শিশুদের যারা নির্যাতন করবে তাদের নিজের হাতে শাস্তি দিতে চাই। বিচারক নুরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী নাতাশা বেগম সেদিন পায়ে ধরে ছিল তার। যেন মারপিটের কথাগুলো পুলিশ বা অন্য কাউকে না বলে। এ কারণে ভয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করার পর প্রথমে কিছুই বলেনি। বিথির বাবা গোলাম রুসুলকে সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশ মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার বড়আমিনিয়া গ্রাম থেকে ডেকে এনে একটি অভিযোগ লিখে নিলেও সেটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করেনি। ৩০ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় রাত সাড়ে ১১টার দিকে বীথির বাবা পুনরায় সাতক্ষীরা থানায় মেয়ের উপর বর্বর নির্যাতনের বিচার চেয়ে এজহার দায়ের করেন। কিন্তু পুলিশ সেই এজহারটিও মামলা হিসেবে রেকর্ড করেনি।এ সকল বিষয়ে জানতে চাইলে সদর থানা পুলিশের ।অরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদ শেখ জাগো নিউজকে জানান, পুলিশ ও বিচার বিভাগে দূরত্ব সৃষ্টি করে লাভ কি ? যা হবার তা হয়ে গেছে। তারপরও তদন্ত চলছে। অপরাধীর শাস্তি হবে বলে দাবি করেন তিনি। গত ১৯ অগাস্ট সাতক্ষীরার বিচারক নুরুল ইসলামের শহরের পলাশপোল এলাকার ভাড়া বাসা থেকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট নিতাই চন্দ্র সাহা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সদর (সার্কেল) এএসপি আনোয়ার সাঈদ, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদ শেখ একত্রে সাংবাদিকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের বাসা থেকে শিশু বিথিকে উদ্ধার করে। কঙ্কালসার শরীর নিয়ে বিথিকে দ্রুত ভর্তি করা হয় সদর হাসপাতালে। সেখানে পুলিশ হেফাজতে চলে বিথির কিকিৎসা। এদিকে, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া বিথি আর কখনও তার বাবা মায়ের কাছে ফিরে যেতে চাই না। কারণ হিসেবে বলে, তার বাবা বিচারকের বাসায় কাজ করতে না দিলে তার এতো কষ্ট সহ্য করতে হতো না।সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনোয়ার সাঈদ জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয় আদালতে। আদালত শিশু বিথিকে সুস্থ হওয়ার পর বাগেরহাট শিশু সংশোধনাগারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত দেন।এদিকে, সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিথিকে দেখতে গিয়ে দেখা গেলো অন্য এক বিথিকে। বিচারক নুরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী নাতাশার খুনতির স্যাকা, গরম পানি দিয়ে ঝলসে দেয়া শরীরের দগ দগে ঘাঁ এখন আর নেই বিথির শরীরে। চিকিৎকেরা তাকে সুস্থ করে তুলেছে। হাসি খুশি বিথি এখন খুব ভাল আছনে। বিথি আরো বলেন, আমি (বিথি) খুব ভাল আছি। টেংরা মাছের ঝোল, গরুর মাংস, বিরিয়ানি তার খেতে ইচ্ছা হলেই পুলিশ আংকেলরা তাকে খেতে দেয়। কিন্ত বিথি যখন ম্যাজিস্ট্রেট নরুল ইসলামের বাসায় কাজের মেয়ে হিসেবে থাকত তখন কতবার তার সামনে ভাল খাবার তারা খেলেও তাকে দিত না। খেতে চাইলেই মারপিট করত। কারণে অকারণে বিথিকে বিচারকের স্ত্রী নাতাশা প্রায়ই মারতো। হা-পা বেঁধে রাখত। কাজ না পারলে গরম খুনতির স্যাকা দিত।সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. সামছুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, খেতে না পেরে বিথির শরীর কঙ্কার হয়ে গিয়েছিল।এসএস/এমএস
Advertisement