দেশজুড়ে

তোফা-তহুরা পেল সুখের নীড়

দেশব্যাপী আলোচিত কোমরে জোড়া লাগানো থেকে আলাদা করা যমজ দুই বোন তোফা-তহুরা পেল সুখের নীড়। মঙ্গলবার মা শাহিদা বেগমের কোলে চড়ে এ সুখের নীড়ে প্রবেশ করে তোফা-তহুরা।

Advertisement

মঙ্গলবান বিকেলে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়নের পশ্চিম ঝিনিয়া গ্রামে তোফা-তহুরার বাবা রাজু মিয়ার বাড়িতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের আর্থিক সহযোগিতায় তোফা-তহুরার জন্য নির্মিত হয় টিনশেড বাড়ি, যা তাদের থাকার সুখের নীড় হয়েছে।

তোফা-তহুরাকে এই সুখের নীড়ে প্রবেশ করিয়ে দেয় গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক আব্দুল মতিন ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোলায়মান আলী।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সোলেমান আলীর সভাপতিত্বে তোফা-তহুরার বাড়ির উঠানে এ উপলক্ষে আলোচনা সভা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন।

Advertisement

এ সময় বক্তব্য রাখেন, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক টিআইএম মকবুল হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক সাজেদুল ইসলাম, দহবন্দ ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম কবির মুকুল। পরে জেলা প্রশাসক তোফা-তহুরাকে সঙ্গে নিয়ে ফিতা কেটে নতুন ঘর সুখের নীড়ে প্রবেশ করেন।

জন্মের পর থেকে তোফা-তহুরা তার নানার বাড়ি রামজীবন ইউনিয়নের কাশদহ গ্রামে বাস করেছিল। তোফা-তহুরার বাবার বাড়িতে কোনো প্রকার ঘর ছিল না। ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক তোফা-তহুরাকে আলো বাতাস বয় এমন ঘরের মধ্যে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু তোফা-তহুরার বাবার সাধ্য ছিল না এমন একটি ঘর নির্মাণ করার। সে মোতাবেক তোফা-তহুরার মা-বাবা গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক আবদুল মতিনের কাছে ঘর নির্মাণ করে দেয়ার জন্য আবেদন করেন। এরই পরিপেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তোফা-তহুরার জন্য ঘর নির্মাণ করে দেন।

তবে তোফা-তহুরার বাবা রাজু মিয়া ঘর উদ্বোধনকালে বাড়িতে ছিলেন না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তোফা-তহুরার বাবা হতদরিদ্র রাজু মিয়াকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেয়। বর্তমানে রাজু মিয়া চাকরিস্থলে কর্মরত রয়েছেন।

তোফা-তহুরার মা শাহিদা বেগম জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ঘর নির্মাণ করে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান। শাহিদা বেগম জানান, বর্তমানে তোফা সুস্থ তবে তহুরা এখন কিছুটা অসুস্থ। তহুরা স্বাভাবিক অবস্থায় প্রসাব করতে পারছে না। ক্যাথেটারের সাহায্যে ৩ ঘণ্টা পর পর প্রস্রাব করাতে হয়। ঘর পাশাপাশি প্রশাসন একটি নলকূপ ও একটি বাথরুম তৈরি করে দিয়েছে।

Advertisement

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোলেমান আলী বলেণ, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় আমি ঘর নির্মাণ করে দিয়েছি। এজন্য নিজেকে ধন্য মনে করছি।

২০১৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কোমরে জোড়া লাগানো অবস্থায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামজীবন ইউনিয়নের কাশদহ গ্রামে নানার বাড়িতে তোফা ও তহুরার জন্ম হয়। মিড়িয়ায় বিষয়টি আলোচিত হলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর ১৬ অক্টোবর তাদের প্রথম অস্ত্রোপচার করা হয়।

২০১৭ সালের ১ আগস্ট তাদেরকে আলাদা করার জন্য করা হয় দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার। পরে সুস্থ হলে ওই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা থেকে গাইবান্ধায় আসে তোফা-তহুরা। আবারও অসুস্থ হলে ২০১৭ সালের ৮ অক্টোবর তহুরাকে ঢাকায় নেয়া হলে সাড়ে চার মাস চিকিৎসা শেষে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বাড়িতে আসে তোফা-তহুরা। সর্বশেষ চিকিৎসা শেষে ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর বাড়িতে ফিরে আসে তোফা-তহুরা।

জাহিদ খন্দকার/এএম/এমএস