ফরহাদ হোসেন। প্রতিমন্ত্রী, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসনের উন্নয়ন, সমস্যা ও চ্যালেঞ্জসমূহ নিয়ে সম্প্রতি মুখোমুখি হন জাগো নিউজ-এর। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে খোলামেলা আলোচনা করেন নিজের মন্ত্রণালয় প্রসঙ্গে। এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছেন বলে উল্লেখ করেন। প্রশাসনকে দক্ষ করে তুলতে সময়োপযোগী উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
Advertisement
আরও পড়ুন >> দুর্নীতি অবশ্যই সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ
তবে সরকারের জন্য দুর্নীতিই বড় চ্যালেঞ্জ এবং প্রশাসনের মধ্যেও দুর্নীতি আছে বলে মত দেন এ রাজনীতিক। বলেন, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন তৈরি করতে পারলেই জনসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে শেষটি।
জাগো নিউজ : রাজনৈতিক বিবেচনায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তাকে ওএসডি করে রাখা হয়- সব সরকারের বিরুদ্ধেই এমন অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগের বিপরীতে কী বলবেন?
Advertisement
ফরহাদ হোসেন : দায়িত্ব নেয়ার পর ওএসডি নিয়ে আমার মধ্যেও একপ্রকার প্রশ্ন জেগেছিল। এ কারণে আমাকে বিষয়টি জানতে হয়েছে। গুরুতর অপরাধ বা দেশদ্রোহীর মতো অপরাধ না থাকলে কাউকে রাজনৈতিক বিবেচনায় ওএসডি করার কোনো কারণ আছে বলে মনে করি না। বিনা কারণে একজন অফিসারকে বসিয়ে রাখার পরিস্থিতি এখন আর নেই।
অনেকেই বিদেশে পড়ালেখা করতে দেশের বাইরে যান। তাদের ওএসডি করে প্রথমে রিজার্ভে রাখা হয়। এটা সম্মানের। আবার পদায়নের আগেও একজন অফিসারকে ওএসডি করে আবার অন্য জায়গায় পাঠানো হয়। আবার কেউ কেউ এমন কিছু অপরাধ করেন, তিনি আর কর্মস্থলে কোনোভাবেই থাকার যোগ্যতা রাখেন না, আবার তাকে চাকরি থেকে বরখাস্তেরও বিধান নাই। এমন অবস্থায় তাকে ওএসডি করে রাখা হয় এবং তাকে নৈতিকতার বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন করিয়ে নতুন কোনো জায়গায় পাঠানো হয়। মারাত্মক কিছু অপরাধের কারণে কোনো কোনো অফিসারকে কোথাও কোথাও পদায়ন করা সম্ভব হয় না। কেউ তাদের নিতে চান না। তখন আর ওএসডি ছাড়া উপায় থাকে না। এসব কারণে অফিসারদের ওএসডি করা হয়। রাজনৈতিক কারণে ওএসডি কোনোভাবেই গুরুত্ব পায় না এবং সেটা একেবারেই শোভনীয় নয়। কাউকে শুধু শুধু বসিয়ে রাখার মতো বিলাসিতা মনে হয় বাংলাদেশ সরকারের নাই। তবে স্বাধীনতাবিরোধী মতাদর্শের সঙ্গে কোনো অফিসারের মতের মিল থাকলে প্রমাণসাপেক্ষে তাকে এমন জায়গায় পদায়ন করা হয়, যেখানে রাষ্ট্র বা সরকারের জন্য ঝুঁকি কম। কিন্তু ওএসডি করার মতো সিদ্ধান্ত নেয়া হয় না।
জাগো নিউজ : কত সংখ্যক অফিসার এখন ওএসডিতে আছেন?
ফরহাদ হোসেন : সুনির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। কারণ প্রতিদিনই কম-বেশি হয়। তবে সংখ্যাটা এখন ৩০০-এর মতো হতে পারে। ২৫০ থেকে ৩০০-এর মধ্যে থাকে। যে কয়টি কারণ উল্লেখ করলাম, সেসব কারণে এ সংখ্যক ওএসডি। তবে একজনের বেলাতেও রাজনৈতিক পরিচয় গুরুত্ব পায়নি।
Advertisement
জাগো নিউজ : ৩০০ অফিসার ওএসডিতে। অথচ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও দেয়া হচ্ছে?
ফরহাদ হোসেন : প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেছেন, কাউকে অযথা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে একটি পদ আটকে রাখব না। অনেকেই অপেক্ষমাণ রয়েছেন। চুক্তিতে নিয়োগ দিলে অপেক্ষায় থাকা কর্মকর্তা বঞ্চিত হবেন।
আরও পড়ুন >> শিক্ষায় গলদ আছে বলেই সমাজে বর্বরতা বাড়ছে প্রধানমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। কিন্তু এমন কিছু জায়গা থাকে অথবা এমন কিছু টেকনিক্যাল জায়গা থাকে যেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই ব্যক্তির কোনো বিকল্প নাই। বাধ্য হয়ে তাকে চুক্তিভিত্তিক ফের নিয়োগ দেয়া হয়। তবে এখন মাত্র এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী আমাকে স্পষ্ট করে বলেছেন, সঠিক জায়গার জন্য সঠিক ব্যক্তি খুঁজে বের কর, যাতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ না দিতে হয়। বিকল্প না পেলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়।
জাগো নিউজ : উচ্চপর্যায়ে শতশত অতিরিক্ত কর্মকর্তা। এ পরিস্থিতি বিশেষ অসুবিধা তৈরি করে কিনা?
ফরহাদ হোসেন : বিষয়টি নিয়ে আমার পরিষ্কার ধারণা নেই যে, আসলে কতজন অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন। তবে অতিরিক্তের সংখ্যা দিনদিন কমে আসছে। আমরা প্রতিনিয়ত চোখ রাখছি, মনিটরিং করছি।
জাগো নিউজ : ওএসডি, চুক্তিভিত্তিক ও অতিরিক্ত দায়িত্ব- এ তিন শ্রেণির কর্মকর্তাদের নিয়ে চাপ অনুভব করেন কিনা?
ফরহাদ হোসেন : আমরা ইচ্ছা করেই এ তিন শ্রেণির কর্মকর্তার পদ তৈরি করছি না। সমস্যা দূরীকরণে আমরা বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছি। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এতে সঠিক ব্যক্তি সঠিক জায়গায় দায়িত্ব পাবেন বলে আমার বিশ্বাস।
কিছু সমস্যা তো আছেই। তা না হলে তো চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের দরকার হতো না। নতুন অফিসারদের স্ব-স্ব অবস্থান থেকে দক্ষ করে তোলা হচ্ছে। কার কোনটাতে আগ্রহ, কার কোনটাতে দক্ষতা বেশি, একাডেমিক বিষয় কী ছিল- এসব বিবেচনা করে এখন পদায়ন হচ্ছে। আশা করছি, অদূর ভবিষ্যতে জনপ্রশাসনের মধ্যকার চাপ অনেকটা কমে যাবে।
জাগো নিউজ : প্রশাসনে তরুণ অফিসারদের কেমন দেখছেন?
ফরহাদ হোসেন : তরুণদের নিয়ে আমরা সবচেয়ে বেশি আশাবাদী। প্রশাসনের তরুণ অফিসাররাই অধিক কর্মঠ ও মেধাবী। নানা কারণে সরকারি চাকরির প্রতি মানুষের বিশেষ আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরা এখন প্রশাসনে আসছে। অনেকে এমবিবিএস পাস করেছে কিন্তু বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিচ্ছেন। বুয়েট থেকে পাস করেও অনেকে জনপ্রশাসনে যোগ দিচ্ছেন। মেধাবীদের এখন প্রধান পছন্দ প্রশাসন ক্যাডার। তার মানে এখানে যারা আসছেন, তারা অপেক্ষাকৃত মেধাবী, যোগ্য ও দক্ষ।
আরও পড়ুন >> রাজধানী সরে যাক নতুবা জাপানের নীতি গ্রহণ করুক
জাগো নিউজ : নানা সুযোগ দিয়ে সরকারি চাকরির প্রতি আকর্ষণ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু পদ সীমিত। লাখ লাখ চাকরিপ্রত্যাশী। এতে বেকারত্ব বাড়ছে কিনা?
ফরহাদ হোসেন : দেশ এগিয়ে নিতে চাইলে মেধাসম্পন্ন প্রশাসন ছাড়া সম্ভব নয়। সুবিধা বাড়ানো হয়েছে বলেই সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরা প্রশাসনে আসছে। তারাই কিন্তু বাংলাদেশের একপ্রকার চালিকা শক্তি।
এ মেধাবীরাই আগামী দিনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে। সরকার হাজারও উদ্যোগ নিচ্ছে। সরকারের নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে লাখ লাখ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। আমার তো মনে হয় তখন প্রবাসী শ্রমিকদের অনেকেই দেশে ফিরবেন কাজের পরিবেশ পেয়ে।
তবে আমি মনে করি, শিক্ষার্থীদেরও চিন্তা-ভাবনা করে বিষয় নির্ধারণ করা উচিত। সবাই যদি বিবিএ পড়ে তাহলে তো বেকারত্ব বাড়বেই। নিজের মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী এখন সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে।
জাগো নিউজ : প্রশাসনের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে আনতে আপনার পরামর্শ কী?
ফরহাদ হোসেন : আমি এর আগে পাঁচ বছর সংসদ সদস্য থেকে উপলব্ধি করেছি, একজন সাধারণ মানুষ ডিসি বা ইউএনও অফিসে যেতে ভয় পান। সাধারণ মানুষ মনে করেন, তারা অফিসে ঢুকতে পারবেন না, ঢুকলেও বসার জায়গা পাবেন না অথবা তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করা হবে না। এ অভিযোগ অবান্তর নয়। ভীতি আছে।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে চিত্র পাল্টেছে। এখন অধিকাংশ ডিসিই দক্ষ, মেধাবী। তাদের ব্যবস্থাপনার দক্ষতা অনেক ভালো। মানুষের সঙ্গে তারা অত্যন্ত ভালো ব্যবহার করেন।
তবে ইউএনও-পর্যায়ে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। ইউএনও-পর্যায়ে আরও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। আমরা সমস্যা সমাধানে আন্তরিক। ইউএনও-পর্যায়ে যেসব সমস্যা রয়েছে, তা চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে। সমস্যা অনুযায়ী সমাধান করতে পারলে মানুষের আর অভিযোগ থাকবে না বলে মনে করি।
আমরা চাই, মানুষ যেন মনে করে সরকারি প্রতিটা অফিস শেখ হাসিনার অফিস। মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে শেখ হাসিনা যে আন্তরিকতা দেখাচ্ছেন, একই আন্তরিকতা যেন সরকারি কর্মকর্তারাও দেখান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি জনসাধারণের যে আবেগ তৈরি হয়েছে, তার প্রকাশ যেন সব জায়গাতেই থাকে। একজন ডিসি শিক্ষককে যে সম্মান দিয়ে কথা বলেন, একই সম্মান যেন কৃষককেও দেখান। কারণ সাধারণ মানুষ একান্ত বিপদে না পড়লে ডিসি বা ইউএনও অফিসে আসেন না। মানুষের প্রয়োজনটা বুঝতে পারলেই রাষ্ট্র, সমাজ আরও কল্যাণমুখী হয়ে উঠবে।
আরও পড়ুন >> সংসদ এখন ব্যবসায়ীদের দখলে
ডিসি বা ইউএনওদের উদ্দেশ্যে বলি, আপনারা মনে রাখবেন, সাধারণ মানুষ আপনাদের কাছে আসেন নেতিবাচক ধারণা নিয়ে। আপনি সেই ধারণা পাল্টে দিন। এক কাপ চা অথবা হাসিমুখে একটু কথা বললেই ওই মানুষটির কাছে স্বর্গসুখ মনে হয়। এ সুযোগ হাতছাড়া করবেন কেন?
জাগো নিউজ : জনপ্রশাসনের সঙ্গে অন্য সেক্টরের কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্ব প্রায়শই খবরে আসে। নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে বিচার বিভাগ এবং পুলিশ প্রশাসনের দ্বন্দ্বের বিষয়টি পুরনো। এখনে কী বলবেন?
ফরহাদ হোসেন : রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের ওপর সরকারের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ রাখতে হয়। সরকারের কাছে সর্বাগ্রে দেশের সাধারণ মানুষ। একটি সেক্টরের সঙ্গে আরেকটি সেক্টরের দ্বন্দ্ব জিইয়ে রেখে সরকার মসৃণ পথে হাঁটতে পারে না। সুতরাং আমরা সকল প্রকার দ্বন্দ্ব নিরসনে বদ্ধপরিকর। পুলিশও এখন আগের চেয়ে আন্তরিক। একজন সাধারণ মানুষ যেকোনো সময় থানায় গিয়ে সেবা নিতে পারছেন। পুলিশ তার আন্তরিকতায় ঘাটতি রাখলে বিভাগীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। প্রশাসনের কেউ কারও প্রতিদ্বন্দ্বী নন।
বিচার বিভাগ তো এখন পুরোপুরি স্বাধীন। রাষ্ট্র, সমাজে ন্যয়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে বিচারকরাও আন্তরিক। সরকার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে যে উদ্যোগ নিচ্ছে, তার সঙ্গে বিচার বিভাগও একাত্মতা প্রকাশ করে চলছে। পরিবর্তনের হাওয়াটা সর্বত্র। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস রেখে রাষ্ট্রের সব কর্মকর্তা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কাজে নিয়োজিত। দ্বন্দ্ব নয়, সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করতে পারলে আগামীর বাংলাদেশ সুখী-সমৃদ্ধ হবে, গৌরবের বাংলাদেশ হবে।
জাগো নিউজ : বলছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি মানুষের আবেগের প্রকাশ ঘটছে। এ প্রশ্নে প্রশাসনের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করছে কিনা?
ফরহাদ হোসেন : কিছুকিছু অফিসার নিয়মের বাইরে থেকে অতিউৎসাহী হয়ে কাজ করেন। এটা অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। তবে ঢালাওভাবে এ অভিযোগ দেয়া ঠিক হবে না। প্রশাসনের একজন ব্যক্তি তার রাজনৈতিক মতাদর্শ কাজের মাধ্যমে প্রকাশ ঘটাক, তা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। এতে রাষ্ট্রীয় কাঠামো দুর্বল হয়।
আরও পড়ুন >> মন্ত্রীরা দেশে চিকিৎসা নিলে ভরসা পান সাধারণরা
দেশ স্থির থাকলেই প্রশাসন রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয় বলে বিশ্বাস করি। শেখ হাসিনার সরকার সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রেখে চলেছে। গণতন্ত্রের ভিত শক্তিশালী হলে প্রশাসনের কাঠামো শক্ত হয়, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়। এরপরও স্বীকার করছি, প্রশাসনের কেউ কেউ অতিউৎসাহী হয়ে আনুগত্য প্রকাশ করেন। মানুষ তো আসলে ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়।
জাগো নিউজ : তরুণ বয়সে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন। রাজনৈতিক আঙ্গিনায় কোথায় যেতে চান?
ফরহাদ হোসেন : আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম একজন সংগঠক ছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর ছিলেন তিনি। বাবা মেহেরপুরে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল অস্থায়ী সরকার শপথ অনুষ্ঠানের সার্বিক আয়োজনের দায়িত্বে ছিলেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য হওয়ার কারণে বাবার সেই সৌভাগ্য হয়েছিল। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হওয়ায় রাজনীতি আমার রক্তে মিশে আছে। রাজনীতির প্রতি, সাধারণ মানুষের সেবার প্রতি আমার আকর্ষণ আগে থেকেই ছিল। ছাত্রজীবনে সংগঠন করেছি। অধ্যাপনার পাশাপাশি রাজনীতিও করেছি। আওয়ামী স্বেচ্চাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বাবার আসন থেকে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয়। পাঁচ বছরে সাধ্যমতো মানুষের কাছে থাকার চেষ্টা করেছি। তার প্রমাণস্বরূপ ফের আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে আস্থা ও বিশ্বাস আমার প্রতি রেখে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন, সে বিশ্বাস অক্ষুণ্ন রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করি। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে মনে করি, বঙ্গবন্ধুর সহচর হিসেবে বাবারও স্বপ্ন ছিল দেশ স্বাধীন করা এবং সোনার বাংলা গড়ে তোলা। স্বাধীন করে গেছেন তারা। কিন্তু সোনার বাংলা গড়ে তোলার আগেই পাকিস্তানের দোসররা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। আমরা এখন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার পথচলার সারথি। তার হাতেই বাংলাদেশ নিরাপদ। গত ১০ বছরে বাংলাদেশে উন্নয়নের বিপ্লব ঘটেছে। আমরা সবক্ষেত্রে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশে সামান্য অবদান রাখতে পারলেই বাবার স্বপ্ন পূরণ হবে বলে মনে করি। আমরা সত্যিই সোনার বাংলা গড়তে চাই এবং এজন্য শর্তহীনভাবে নিবেদিত থাকতে চাই।
এএসএস/এমএআর/পিআর