কাঠফাটা রোদ, ভ্যাপসা গরম, নগরীর কোলাহল, যানজট, যানবাহন ও কল-কারখানা থেকে সৃষ্ট তীব্র শব্দদূষণ, কালো ধোঁয়া আর রিকশার টুং টাং শব্দ সব মিলিয়ে যেন নাকাল নগরজীবন। তবে এসবের মাঝেও একটুখানি প্রশান্তির খোঁজ মেলে ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে।
Advertisement
বাস থেকে নেমে প্রধান ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশের সাথে সাথে চোখে পড়ে বিশাল এক কৃষ্ণচূড়া গাছ। রক্তবর্ণের ফুল যেন আপন মহিমায় সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে। গাছের ডালে বসা দোয়েল পাখির ডাক যেন প্রাণে একটু হলেও প্রশান্তি এনে দেয়। পাশেই সবুজেঘেরা বেশ বড় একটি ফুলের বাগান। ছোট চড়ুই পাখির কিচির মিচির ডাক আর এক ডাল থেকে উড়ে অন্য ডালে বসার দৃশ্য ক্ষণিকের জন্য হলেও ভুলিয়ে দেয় খরতাপ রৌদ্র আর যান্ত্রিক জীবনের কোলাহলের কথা।
পথ ঘুরে বাগানে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে লাল রঙের গোলাকৃতির ‘মে ফুল’। এপ্রিলের শেষ দিকে এই ফুল ফোটা শুরু করে আর মে’র প্রথম সপ্তাহে এসে পূর্ণাঙ্গ রূপ ধারণ করে। অন্য অনেক ফুলই মে মাসে ফোটে কিন্তু এই ফুলের জীবনকাল শুধু মে মাসেই সীমাবদ্ধ। এজন্যই এর নাম রাখা হয়েছে মে ফ্লাওয়ার বা মে ফুল।
সবুজ ঘাসের চাদর বিছানো এই ফুলের বাগানে আরও রয়েছে হলদে রঙের সানফ্লাওয়ার, গোলাপি রঙের পিটোনিয়া, রক্তবর্ণের সেলভিয়া, রয়েছে মুসান্ডা অনেকে এটিকে নাগবল্লী বা পত্রলেখা বা শ্রীপত্র বলেন। রক্তকরবী, টিকুমা, বর্ষায় কসমস, লটকন জবা, রঙ্গন, ক্যানা বা কলাবতী, অ্যালমন, গন্ধরাজ, কামিনি, চেরি, বেলি, নয়নতারা, এমন হরেক রকমের ফুল।
Advertisement
মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাইন গাছ, ক্রিসমাস ট্রি, এরিকাপাম, বোতলপাম, তালপাম, তেজপাতা, বকুল, পামতুয়া, নিম গাছ, হরতকি এমন আরও বেশ কয়েক প্রজাতির গাছ।
রাস্তা দিয়ে পথচারী চলার সময় একবার হলেও গ্রিলের ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করে।
বাগানের পরিচর্যা করেন মুন্না দাস। ২৬ বছরের চাকরি জীবনে ২৩ বছরই আছেন ঢাকা কলেজে। সারাদিনই তার সময় কাটে বাগানের পরিচর্যা করে। পরম যত্নে তিনি গড়ে তুলেছেন এই বাগান। জানালেন একসময় না কি রাস্তার পাশের জায়গা আগাছা আর ডুমুর গাছের জঙ্গল ছিল। পুরো বাগানের জমি ছিল উঁচু নিচু। আগাছা পরিষ্কার আর জমি সমান করে গড়েছেন বাগান। এ কাজে তিনি বেশ আনন্দ পান বলেও জানান।
পাশেই বিজয় চত্বর। যেখানে খোশগল্প আর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। ক্লাসের আগে কিংবা ক্লাস শেষে চলে এই আড্ডা। সবুজ বৃক্ষের ছায়ায় বসে এমন আড্ডা যেন সব ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়।
Advertisement
কলেজের পুকুর পাড়ে সারি সারি নারকেল গাছে কাঠবিড়ালী আর কাঠঠোকরার আনাগোনা বেশ চোখে পড়ার মতো। নারকেল গাছের চিকন পাতা বাতাসে দোল খেয়ে যেন বাঁশি বাজাচ্ছে। পুকুরের চারদিকের কংক্রিটের বেঞ্চে বসে শীতল হাওয়ায় শরীর বেশ ঠান্ডা হয়ে আসে আর মনটাও জুড়িয়ে যায়। কোনো এক কোনায় বসে কেউ কেউ আবার চোখ বুলায় বইয়ের পাতায়।
স্নাতকপড়ুয়া ছাত্ররা যখন পুকুরের জলে ঝাঁপ দেয় মনে হয় কৈশোরের উদ্দীপনা বুঝি এদের মাঝেই আছে। তীব্র গরমে অনেকেই গা ডুবিয়ে পুকুরের স্বচ্ছ জলের পরশ নিচ্ছে। মাছের ঝাঁক ভেসে উঠেই মাছরাঙা হঠাৎ ছো মেরে ধারালো ঠোঁটে মাছ ধরে উড়ে গিয়ে বসে গাছের ডালে। এমন দৃশ্য খুব সহজেই দেখা যায় এই ক্যাম্পাসে।
প্রতিটি ছাত্রাবাস যেন সবুজে ঘেরা চত্বরের মাঝে এক টুকরো ইটের দেয়াল। শহুরে নিয়মের বাইরে এখানে অনেকেরই পাখির ডাকে ঘুম ভাঙে। সব মিলিয়ে যানবাহনের দীর্ঘ সারি আর কংক্রিটের শহরে তীব্র গরমে নাভিশ্বাস ওঠা জীবনে একটু হলেও প্রশান্তি পাওয়া ঐতিহ্যবাহী এই ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে।
এমবিআর/এমএস