পতনের বৃত্ত থেকে শেয়ারবাজারকে বের করতে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হলেও তার কোনো ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। বরং টানা দরপতন অব্যাহত রয়েছে। সেইসঙ্গে দেখা দিয়েছে চরম লেনদেন খরা।
Advertisement
মঙ্গলবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ১৪ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে। সেইসঙ্গে কমেছে সবকটি মূল্যসূচক।
শেয়ারবাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জানুয়ারি মাসে শেয়ারবাজারে বড় ধরনের উত্থান হয়। প্রায় এক মাস টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ে। কিন্তু জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে এসে ছন্দপতন ঘটে শেয়ারবাজারে। দেখা দেয় টানা দরপতন।
এরপর একে একে সাড়ে ৩ মাস কেটে গেলেও দরপতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারেনি শেয়ারবাজার। ফলে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শেয়ারবাজারের সমস্য সমাধানে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়। সরকারের উপর মহলের নির্দেশে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ ব্যাংক।
Advertisement
পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকের এক্সপোজার সংশোধনীর ইঙ্গিত দেয়া হয়। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) দেয়া হচ্ছে ৮৫৬ কোটি টাকার তহবিল। শেয়ারবাজার থেকে যাতে টাকা বের হয়ে না যায়, সে জন্য বন্ধ করা হয়েছে প্লেসমেন্ট। নতুন করে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।
শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে এমন নানামুখী উদ্যোগ নেয়ার পরও দরপতন অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের তুলনায় ২৯ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ২১৭ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২০৩ পয়েন্টে। আর ডিএসই-৩০ সূচক ১০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮২৫ পয়েন্টে নেমে গেছে।
মূল্যসূচকে এই পতনের দিনে ডিএসইতে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে প্রায় তার তিনগুণের। দিনভর বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া ৭৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২১৯টির এবং দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ৫২টির।
মূল্যসূচক ও সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতনের পাশাপাশি ডিএসইতে দেখা দিয়েছে লেনদেন খরা। বাজারটিতে ২০১৮ সালের ২৫ মার্চের পর সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে।
Advertisement
মঙ্গলবার টাকার অঙ্কে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২৫১ কোটি ৩৬ লাখ টাকার। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৩০৫ কোটি ৩ লাখ টাকার। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ৫৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
বাজারটিতে টাকার পরিমাণে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ফরচুন সুজের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৫ কোটি ২২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকার লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে যমুনা ব্যাংক এবং ৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা লেনদেনে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে ব্র্যাক ব্যাংক।
এ ছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, মুন্নু সিরামিক, পাওয়ার গ্রীড, গ্রামীণফোন, লিগাসি ফুটওয়্যার, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল এবং এস্কয়ার নিট কম্পোজিট।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএসসিএক্স ৫৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৬৬৫ পয়েন্টে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকার। লেনদেনে অংশ নেয়া ২২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৫২টির, কমেছে ১৪২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯টির।
এমএএস/জেডএ/পিআর