মতামত

যাত্রীর নয়, বাস নির্বিঘ্ন ধর্ষকের!!

আবারও চলন্ত বাসে ধর্ষণ। এবার কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে চলন্ত বাসে নার্স শাহিনুর আক্তার তানিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে ধর্ষকরা। এ যেন -চুরি আবার শীনাজুড়ি।

Advertisement

বাবার সঙ্গে প্রথম রোজা রাখতে মাতৃহীনা তানিয়া গত ৬ মে রাতে, ঢাকা থেকে বাসে বাজিতপুরের পিরিজপুর যাচ্ছিলেন। পথে উপজেলার গজারিয়া-জামতলী এলাকায় ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি। এ ঘটনায় বাসের চালক নূরুজ্জামান ও হেলপার লালন মিয়াসহ মোট পাঁচজনকে আটকও করে পুলিশ।

পরদিন তানিয়ার বাবা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বাজিতপুর থানায় মামলা করেন। এরই মধ্যে আসামিদের রিমান্ডেও নেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো এরপর কি হবে? আসলেই কি ধর্ষকদের বিচার হবে? চলন্ত বাসে ধর্ষণের তালিকাও তো ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। এটা কি ধর্ষকদের এক্সপ্রেস!! যা টাঙ্গাইল, সাভার ছাড়িয়ে এবার কিশোরগঞ্জে এসে থামলো। থামলো কি?

একটু খতিয়ে দেখা যাক। বেশিদূর যেতে হবে না, ৯ মে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের দেয়া শিশু ধর্ষণের তথ্যটিতে একটু চোখ বুলালেই দেখা যাবে, ধর্ষণ যেন ভাইরাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু ছড়াচ্ছেই। তরুণ, যুবক থেকে শুরু করে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধও ধর্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে।

Advertisement

সংগঠনটি চলতি মাসের প্রথম আটদিনে শুধু শিশু ধর্ষণের চিত্র দিয়েছে। যাতে দেখা গেছে, সারাদেশে ৪১ শিশু ধর্ষণ ও তিন শিশু ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে। ছয়টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে সংগঠনটি এ তথ্য দিয়েছে, যাতে ৩৭টি কন্যা শিশু ধর্ষণ এবং চারটি ছেলে শিশু বলাৎকারের শিকার হয়।

কোমলমতি শিশুরাই যেখানে ধর্ষকের পৈশাচিক থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছে না সেখানে কিশোরী, তরুণী কিংবা যেকোনো বয়সের নারীই বা বাদ থাকে কি করে?

কুমিল্লার তনু, ফেনীর নুসরাতকে মনে আছে? তাদের হত্যার পর, দোষীদের শাস্তি চেয়ে সোচ্চার হয়েছিল স্থানীয়রাসহ দেশবাসী। কিন্তু নুসরাত হত্যা মামলার আসামিদের বিচারের আওতায় আনা গেলেও তনু হত্যাকারীদের কি অবস্থা, আছে কি খোঁজ কারো কাছে? এখন চলন্ত বাসে নার্স তানিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মানববন্ধন হচ্ছে। প্রতিবাদ জানাচ্ছেন সচেতন মহল। কিন্তু শাস্তি কি পাবে ধর্ষকরা!

উদীয়মান এক নার্স যে হতে পারতো দেশের অনন্য সম্পদ, তাকেই কি-না কতিপয়ের লাম্পট্যের শিকার হতে হলো। কার জন্য এই বলীদান? তনু, তানিয়া, কিংবা নুসরাতরা দেখছো কি-না জানি না, তোমরা কি অভিসম্পাত করছো না এই সমাজকে, রাষ্ট্রকে? যারা তোমাদের সুরক্ষা দিতে তো পারেই-নি, পারেনি দোষীদের দৃশ্যমান কোন সাজাও দিতে। যাদের জন্য তোমাদের চলে যেতে হলো, তাদের দাঁত কেলানো হাসি আর বুক ফুলিয়ে চলা কত আর দেখবো, বলতে পারো কি?

Advertisement

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, বাংলাভিশন।

এইচআর/জেআইএম