খেলাধুলা

মোস্তাফিজের ছন্দে ফেরা আর মিডল অর্ডারের জ্বলে ওঠার ম্যাচ

আগের দেখায় বাংলাদেশ জিতেছিল ৮ উইকেটে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৬১ রানে বেঁধে রেখে মাশরাফির দল মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে গিয়েছিল, ৮ উইকেট হাতে রেখেই। সেখানে আজ ১৪ রান কমে ২৪৮ রানে আটকে রেখেও টাইগারদের জয় ৫ উইকেট। এ রান টপকাতে খেলতে হয়েছে ৪৭.২ ওভার। স্কোর লাইন দেখলে আর খালি চোখে মনে হবে আজকের জয় প্রথম ম্যাচের মত অত বড় ও অনায়াস নয়। তুলনামূলক কষ্টের। খানিক অস্তত্বিরও।

Advertisement

হ্যাঁ, এটা সত্য। আগের ম্যাচে প্রথম উইকেটে উঠেছিল ১৪৪ (২৫.৬ ওভার)। আর আজ সেখানে উদ্বোধনী জুটি ভেঙ্গেছে ৫৪ রানে। প্রথম মোকাবিলায় ৮২ রানের (১১৬ বলে) দারুণ দায়িত্বপূর্ন ইনিংস খেললেও আজ তামিম ইকবাল আউট হয়ে গেছেন মাত্র ২৩ রানে।

আগের ম্যাচে ৬৮ বলে ৭৩ রানের ঝকঝকে ইনিংস উপহার দেয়া সৌম্য সরকার একবার কভারে নিশ্চিত ক্যাচ আউটের হাত থেকে বেঁচে বিদায় নিয়েছেন ৫৪ রানে।

শুধু দুই ওপেনার কম রানে আউট হওয়াই নয়। আগের ম্যাচের হার না মানা হাফ সেঞ্চুরি করে বিজয়ীর বেশে সাজঘরে ফেরা সাকিবও আজ তেমন বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। ফিরে গেছেন ২৯ রান করে।

Advertisement

মোটকথা, প্রথম দেখায় এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে যে তিনজন হাফ সেঞ্চুরি সহ ২১৪ রান করে দলকে জয়ের পথে ৮০ ভাগ এগিয়ে দিয়েছিলেন সেই তিন টপ অর্ডার তামিম (২১), সৌম্য (৫৪) ও সাকিব (২৯) আজ করেছেন ১০৪ রান। তার মানে আজ জয় থেকে বেশ দুরেই সাজঘরে পা বাড়িয়েছেন ওই তিন টপ অর্ডার। কাজেই জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে বাকিদের মানে মিডল অর্ডারের ওপর নির্ভর করতেই হয়েছে।

আশার কথা মিঠুন ও মুশফিকুর রহীম, মাহমুদউল্লাহরা সে দায়িত্ব পালন করেছেন বিশ্বস্ততা ও দায়িত্ব সচেতনার সাথে। সেটাও এ ম্যাচের বড় প্রাপ্তি।

অর্থাৎ টপ অর্ডারের কেউ একজন বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও ২৪৮ রান টপকাতে তেমন সমস্যা হয়নি। মিডল অর্ডাররা ঠিক দায়িত্ব নিয়ে খেলে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছেন।

মিডল অর্ডারের জ্বলে ওঠা এবং পরিবেশ-পরিস্থিতি সামলে দল জিতিয়ে বিজয়ের বেশে হাসি মুখে সাজ ঘরে ফেরা অবশ্যই এক ধরনের প্রাপ্তি। এটা দলগত বা টিম পারফরমেন্সের একটা বড় দালিলিক প্রমাণ।

Advertisement

আজকের ম্যাচ জানান দিল ওপরে তামিম, সৌম্য আর সাকিব বড় ইনিংস না খেললেও বাংলাদেশ আড়াইশো রান তাড়া করে জিততে পারে এবং সেটা মিডল অর্ডাররাই পারেন।

এর পাশাপাশি আরও একটি প্রাপ্তি আছে এ ম্যাচে। তাহলো কাটার মাস্টার মোস্তাফিজের নিজেকে খুঁজে পাওয়া। এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে ৮৪ রান খরচ করে ফেলায় তাকে নিয়ে কিছু তীর্যক কথা-বার্তার উদ্রেক ঘটেছিল। এর মধ্যে কোচ কোর্টনি ওয়ালশ মোস্তাফিজকে বিশ্রাম দিয়ে খেলানোর কথা বলে পানি আরও ঘোলা করে ফেলেছিলেন।

তার খোঁড়া যুক্তি, এইতো সেদিন ইনজুরি থেকে ফিরেছে মোস্তাফিজ। তাই তাকে যতটা সম্ভব বিশ্রামে রেখে খেলানোই হবে যুক্তিযুক্ত। মোটকথা মোস্তাফিজের বিষয়ে বাড়তি সতর্কতার কথাই বলেছিলেন টাইগার পেস বোলিং কোচ।

কিন্তু বাস্তবতা হলো আগের ম্যাচে যতোই ওভার পিছু ৮ রান করে দিক না কেন, কঠিন সত্য হলো- ইনজুরি বাঁধা হয়ে না দাঁড়ালে মোস্তাফিজ বাংলাদেশ দলের অটোমেটিক চয়েজ। অধিনায়ক মাশরাফির সেরা বোলিং ট্রাম্পকার্ড বাঁ-হাতি এ কাটার মাস্টার।

যতই ইনজুরি পিছু তাড়া করে বেড়াক আর খোদ বোলিং কোচ তাকে বিশ্রামের চিন্তায় মশগুল থাকেন না কেন, ভিতরের কথা হলো আয়ারল্যান্ডের মাটিতে কাটার মাস্টারের একটা পয়োমন্তঃ ভেন্যু আছে। সেটা আর অন্য কোথাও নয়, আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিন শহরেই। মাঠের নাম মালাইহাডের ‘দ্য ভিলেজ’।

এই মাঠে ঠিক দুই বছর আগে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে সুইং ও কাটারের অনুপম মিশ্রনে ২৩ রানে ৪ উইকেট দখল করেছিলেন মোস্তাফিজ। আজ আবারও সেই দ্য ভিলেজে বল হাতে দূর্বার, দূর্মনীয় তিনি।

মূলতঃ তার সুনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়েই আজ আড়াইশোর নীচে ক্যারিবীয়দের আটকে রাখা সম্ভব হয়েছে। তিন স্পেলে চার উইকেট শিকারী মোস্তাফিজ প্রথম স্পেলে পতন ঘটান দুই (৬-১-২৫-২) উইকেট। মাঝে এক ওভারের ছোট্ট স্পেলে কোন উইকেট না পেলেও দুই ওভারের শেষ স্পেলে আবার এক ওভারে দুটিসহ মোট ৯ ওভারে ৪৩ রানে চার উইকেট দখল করে ক্যারিবীয়দের ২৪৭ রানে বেঁধে ফেলতে রাখেন কার্যকর অবদান।

সব মিলে আগের ম্যাচে যা হয়নি, আজ হলো। মানে আজকের ম্যাচ টাইগারদের ঘাটতি পূরণের ম্যাচ। ফাইনাল নিশ্চিতের পাশাপাশি নিজেদের ত্রুটি-বিচ্যুতি কাটিয়ে ওঠা এবং ফাঁক-ফোকরগুলো যথাযথ ঝালাই করে ফেলাও যে বিশ্বকাপের আগে সুলক্ষণ!

এআরবি/আইএইচএস/