আইন-আদালত

হাইকোর্টকে তারা কি হাইকোর্ট দেখাচ্ছে?

ওয়াসার নিরাপদ পানির বিষয়ে সরকারের দায়িত্বরতদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। ওয়াসার উদ্দেশ্যে সর্বোচ্চ আদালতের মন্তব্য, ‘তারা কি হাইকোর্টকে হাইকোর্ট দেখাচ্ছে?’

Advertisement

একই সঙ্গে আদালত রাজধানীর কোন কোন এলাকায় ওয়াসার পানি দূষিত ও অনিরাপদ, তা পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিল না করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষায় কত টাকা খরচ হবে এবং কোথা থেকে এ অর্থ আসবে- তা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চেয়েছেন আদালত।

আরও পড়ুন >> রাজধানীর ১৬ এলাকার পানি দূষিত, পরীক্ষার খরচ দেবে কোন প্রতিষ্ঠান?

আগামী ১৫ মের মধ্যে এ তথ্য আদালতে দাখিলের নির্দেশনা দিয়ে ওইদিন এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য দিনধার্য করেছেন হাইকোর্ট।

Advertisement

সোমবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে এদিন রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।

আদেশের আগে আদালত বলেন, ‘ঢাকা ওয়াসার ১১টি পানির জোন রয়েছে। প্রত্যেকটি থেকে দুই বোতল পানি নিয়ে তো পরীক্ষা করা যায়। কিন্তু তারা (স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়) তা করছে না। তারা বলছে, পানি পরীক্ষার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু কত টাকা লাগবে তাও বলছে না। তারা হাইকোর্টকে কি হাইকোর্ট দেখাচ্ছে?’

আদালতে রিট আবেদনকারী আইনজীবী জানান, ঢাকার ১৬টি এলাকার পানি ব্যবহারের অনুপযোগী। এসব এলাকা হলো- জুরাইন, দনিয়া, শ্যামপুর, উত্তরা সেক্টর- ৪, মিরপুর, পল্লবী, লালবাগ, রাজার দেউড়ি, মালিবাগ, বনশ্রী, মাদারটেক, গোড়ান, রায়সাহেব বাজার, মোহাম্মদপুরের বশিলা, কাজিপাড়া ও সদরঘাট।

গত বছর ৬ নভেম্বর হাইকোর্টের দেয়া এক আদেশে ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এবং আইসিডিডিআরবি’র প্রতিনিধির সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন >> খাদ্য নিরাপত্তায় ‘জরুরি অবস্থা’ চান হাইকোর্ট

এরপর কমিটির সদস্যদের নামের তালিকা গত ১৮ এপ্রিল অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে পাঠায় মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব মোহাম্মাদ সাঈদ-উদ-রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, ‘নমুনা সংগ্রহ করে তার নির্দিষ্ট পরীক্ষার পর বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করতে একটি তহবিলের পাশাপাশি ল্যাবরেটরিসহ ঢাকা ওয়াসার সামগ্রিক প্রচেষ্টা দরকার। এসব কাজের জন্য যদি তহবিল গঠন করা হয় এবং বিরতিহীনভাবে ওয়াসার তিনটি ল্যাবরেটরিতে একযোগেও যদি কাজ করে প্রতিবেদন তৈরি করে তাতেও কমপক্ষে চার মাস সময় প্রয়োজন।’

আজ (১৩ মে) স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিবের সেই চিঠি উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতকে জানান, কমিটি প্রতিবেদন দিতে একটি কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করেছে। তা আদালতে উপস্থাপনের জন্য সময় দরকার।

এর আগে, বাংলাদেশের পানি সরবরাহ, পয়োনিষ্কাশন, স্বাস্থ্যবিধি ও দারিদ্র্যতা নিয়ে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক একটি প্রতিবেদন দেয়। গত ১১ অক্টোবর রাজধানীর একটি হোটেলে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। সেখানে বাংলাদেশ নিয়ে তৈরি করা প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দেশের প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষ অপরিচ্ছন্ন ও অনিরাপদ উৎসের পানি পান করছে। পানির নিরাপদ উৎসগুলোর ৪১ শতাংশ ক্ষতিকারক ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়াযুক্ত এবং ১৩ শতাংশে রয়েছে আর্সেনিক।

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পাইপলাইনের পানির ৮২ শতাংশে রয়েছে ই-কোলাই। ৩৮ শতাংশ টিউবওয়েলের পানিতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। পাকস্থলি ও অন্ত্রের প্রদাহের জন্য ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়াকে দায়ী করা হয়।

আরও পড়ুন >> ‘বিনামূল্যে পানির ধারণা ভেঙে দিয়েছে এডিবি-বিশ্বব্যাংক’

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, নিম্নমানের পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা দেশের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। এরপর পানির পরীক্ষাসহ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ একটি রিট করেন।

ওই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ঢাকা মহানগর এলাকায় সরবরাহ করা ওয়াসার পানিতে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া আছে কিনা- তা পরীক্ষার নির্দেশ দেন এবং পানি পরীক্ষা করে দুই মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন আকারে দাখিলেরও নির্দেশ দেয়া হয়।

এফএইচ/এমএআর/এমএস