জাতীয়

ধানসিঁড়ির ফ্রিজ খুলতেই দুর্গন্ধ, মিললো ২৭০০ টাকার পচা হাঁসভুনা

বনানীতে অভিযান চালিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঢুকলেন গুলশান-২ এর ধানসিঁড়ি রেস্টুরেন্টে। দোতলায় ঢুকতেই নড়েচড়ে বসলেন ম্যানেজারসহ অন্য স্টাফরা।

Advertisement

ম্যাজিস্ট্রেট ঢুকলেন রান্নাঘরে। এরপর খুললেন ফ্রিজ। বের করলেন একটি আস্ত হাঁসের ফ্রাই। রূপচাঁদা, রুই, কোরাল, পাবদা মাছের ফ্রাই আর বারবিকিউ।

ফ্রিজ থেকে বের করে এগুলো টেবিলে রাখতেই বের হলো পচা দুর্গন্ধ। প্রায় ১৫০০ স্কয়ার ফুটের রেস্টুরেন্টটির কোথাও গন্ধে থাকা যাচ্ছিল না।

ডিএমপির ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ম্যানেজার কে? উনাকে ডাকেন। তাকে এগুলা খাওয়াবো। উনি বলবেন এগুলো খাওয়ার যোগ্য কি না?’

Advertisement

চারদিকে খুঁজে পাওয়া গেল না ম্যানেজারকে। এবার ধানসিঁড়ির মেন্যু নিয়ে বসলেন ম্যাজিস্ট্রেট। দেখলেন হাঁসের ফ্রাইয়ের দাম ২৭০০ টাকা, রূপচাঁদা ৪৮৫০, রুই মাছের পিস ৫৫০ টাকা।

টেবিলের ওপর রাখা ২৭০০ টাকার (ফুল বেইজিং ডাক ভুনা) হাঁসটির চারদিকে ছত্রাকে ভরা। এটা অনেক দিন আগের। ম্যানেজারকে ডাকলেন তিনি। বললেন, 'আপনাদের বিবেক বুদ্ধি বলতে কিছু আছে? কীভাবে এগুলা খাওয়ান। কতদিন আগে রেখেছেন এগুলো?'

ম্যানেজার মো. শরীফ বললেন, 'এগুলো গতকালের।' ম্যাজিস্ট্রেট বললেন, 'কখনোই না। একদিন আগের হলে ছত্রাক ধরত না।'

সঙ্গে সঙ্গে গুলশান থানার পুলিশকে ডাকলেন ম্যাজিস্ট্রেট। অস্বাস্থ্যকর, নোংরা পরিবেশ আর পচা খাবার রাখার জন্য জরিমানা করলেন ২ লাখ টাকা। আরও বললেন, 'ম্যানেজারকে আটক কর। টাকা না দিতে পারলে দুই বছরের জেল।'

Advertisement

ম্যাজিস্ট্রেট যখন কাজ করছিলেন তখন ধানসিঁড়িতে এসে উপস্থিত হলেন এক ক্রেতা। মেয়েকে নিয়ে কেনাকাটা শেষে দুপুরের খাবার খাবেন তিনি। ভেতরে ঢুকে পচা খাবার দেখে চিৎকার করে শাসালেন ধানসিঁড়ির কর্মচারীদের। রিজিয়া বেগম বলেন, ‘আমি কয়েক বছর ধরে এখানে খাই। আজকেও খেতে এসেছিলাম। কিন্তু এসে দেখলাম টেবিলের ওপরে পচা মাংস রাখা। আমরা এতো ভরসা করে এখানে আসি, আর তারা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করে। তাদের সিলগালা করে দেয়া উচিত।’

ম্যাজিস্ট্রেটও বললেন, কয়েক দিন পর আবারও এখানে লোক পাঠাবো। এই অবস্থা থাকলে বন্ধ করে দেয়া হবে ধানসিঁড়ি। এরপর খাবারগুলো নিয়ে নিচে ফেলে দেয়া হয়।

এর আগে ডিএমপির অভিযানের শুরুতে বনানীর আহেলী কাবাব অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে হানা দেন ম্যাজিস্ট্রেট। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরির জন্য সেখানে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এরপর একই এলাকার শালিমার গার্ডেন রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে মাটিতে ময়দা খোলা অবস্থায় দেখতে পান ম্যাজিস্ট্রেট। পাওয়া যায় বাসি সুইট কর্ন। তাই তাদের ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শালিমারের স্টোর ম্যানেজার মোক্তার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের কাবাব ফ্রেস ছিল, কিন্তু সুইট কর্ন একদিন আগের ছিল। আমরা সবসময় চেষ্টা করি যথাযথভাবে খাবার সংরক্ষণ ও পরিবেশনের জন্য তারপরও ম্যাজিস্ট্রেট কিছু ভুল পেয়েছেন। ভবিষ্যতে আর এমন হবে না বলে আশা করছি।’

বনানীর স্বপ্নের আউটলেটেও অভিযান চালানো হয়। স্বপ্নের চিংড়ি মাছে দুর্গন্ধ থাকলেও সেটি পচা হিসেবে প্রমাণ করার টেকনিক্যাল সাপোর্ট না থাকায় তাদের কোন জরিমানা করা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ম্যাজিস্ট্রেট মামুন বলেন, মাছের সামান্য গন্ধ পাওয়ার পরেও তারা এটি স্বীকার করেনি। তাছাড়া আমাদের সঙ্গে আজ নিরাপদ খাদ্য অধিদফতরের বিশেষজ্ঞরা ছিলেন না। আমরা এটা প্রমাণ করতে পারিনি তাই তাদের সাজা দেয়া সম্ভব হয়নি।

এআর/এসএইচএস/এমএস