তার সাদা-শুভ্র দাঁড়ি সুন্দরভাবে ছাটানো। পরনে ঐতিহ্যবাহী হাফ হাতা ভারতীয় শার্টের ওপর হাতাকাটা জ্যাকেট। দেখতে অবিকল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মতোই। নিজেকে আসল মোদি বলে দাবি করেছেন তিনি। তার নাম অভিনন্দন পাঠক।
Advertisement
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির মতোই উচ্চতা ও শারীরিক গঠন তার। এমনকি তার হাঁটাচলাও মোদির মতো। মোদির ব্যর্থ প্রতিশ্রুতিতে বিরক্ত তিনি। এবারের ম্যারাথন লোকসভা নির্বাচনে মোদির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিরুদ্ধে লড়াই করছেন অভিনন্দন। ভক্ত এবং সমর্থকদের কাছ থেকে প্রচুর সমর্থন পাচ্ছেন তিনি।
৯ সপ্তাহের দীর্ঘ নির্বাচনী প্রচারণার শেষে ৯০ কোটি মানুষের ভোটের সর্ববৃহৎ এই গণতান্ত্রিক নির্বাচন শেষ হবে আগামী ১৯ মে।
ভারতের অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ রাজ্য উত্তরপ্রদেশের লক্ষ্ণৌওয়ের এক কক্ষের বাসভবনে বসবাস করেন ৫৮ বছর বয়সী অভিনন্দন পাঠক। তিনি বলেন, ‘মোদির বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে তা সত্য। আমি বুঝতে পারি, আমি কতদূর যাবো।’
Advertisement
আরও পড়ুন > মোদি ও মন্ত্রীদের সফর করেই খরচ ৩৯৩ কোটি টাকা
২০১৪ সালে মোদি যখন প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হন, তখন তার একজন সমর্থক ছিলেন অভিনন্দন পাঠক। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চেহারার মিল থাকার কারণেই তার সমর্থক ছিলেন। তিনি বলেন, ‘মানুষ আমাকে পছন্দ করতো, তারা আমার সঙ্গে সেলফি তুলতে চাইতো এবং আমাকে জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গন করতো।’
‘আমাকে মানুষ প্রচুর ভালোবাসতো। মানুষ মনে করতো যে, তারা আসল মোদির সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না; কিন্তু অবশ্যই আমার সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।’
২০১৪ সালে নির্বাচনের আগে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অন্যতম স্লোগান ছিল ‘আচ্ছে দিন আয়েঙ্গে’, অর্থাৎ ভালো দিন আসবে। ‘কিন্তু এখন মানুষ আমাকে দেখার পর রেগে যায়। তারা আমার কাছে জানতে চায়, সেই ভালো দিন কোথায় গেল।’
Advertisement
আরও পড়ুন > আমিরাতে সৌদির তেলবাহী জাহাজে হামলা
পাঠকের উজ্জ্বল স্মৃতি হয়ে আছে ২০১৪ সালের মে মাস। ওই মাসের একদিন উত্তরপ্রদেশের বারানসির এক বিজয় মিছিলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গন করেন। কিন্তু এর পর থেকে তার কপালে শনির দশা শুরু হয়। তখন থেকে বিজেপির স্থানীয় নেতারা তাকে উপেক্ষা করে চলতে থাকে। এ ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে অনেক চিঠি লিখেছেন তিনি, যেগুলোর জবাব এখনও পাননি।
ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসে অবিকল চেহারার প্রার্থী নতুন নয়। তাদের উপস্থিতি মানুষের মাঝে অনেক সময় কৌতূহল তৈরি করে, মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন তারা। মুম্বাইয়ের বাসিন্দা বিকাশ মহন্ত, তিনিও হুবহু মোদির মতো দেখতে। শহরের একটি জেলায় বিজেপির টিকেটে এবারের নির্বাচনে লড়াই করছেন তিনি।
৫৭ বছর বয়সী এই ব্যবসায়ী ২০১৭ সালে মোদিকে নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন। নির্বাচনী প্রচারণার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন তিনি। কিন্তু মাঝে মাঝে সহিংস হামলার শিকার হতে হয় তাকে। একবার স্থানীয় একটি সমাবেশে তাকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করে উত্তেজিত জনতা। পরে তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। বর্তমানে নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে দেহরক্ষী নিয়ে চলাচল করেন তিনি।
আরও পড়ুন > অমিত শাহকে সভার অনুমতি দিলেন না মমতা
২০১৭ সালে দেশটির ইংরেজি দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমসকে দেয়া এক স্বাক্ষাৎকারে বিকাশ মহন্ত বলেন, একবার র্যালি থেকে ফেরার সময় মধ্যরাতে একটি গ্যাং আমাকে আক্রমণ করে। তখন আমি শক্তি বাড়িয়ে দৌড় শুরু করেছিলাম, সব ধরনের সংকেত পেরিয়ে পালিয়েছিলাম। কেউ আমাকে থামাতে পারে নাই।
কিন্তু অবিকল চেহারার না হয়েও সব সময় নানা ধরনের ঝামেলার মধ্যে পড়তে হয়েছে গুজরাটের সুরাটের বাসিন্দা প্রশান্ত শেঠিকে। তার পরিবারের সদস্যরা সবাই বিজেপির কট্টর সমর্থক। প্রশান্ত নিজেও বিজেপির সমর্থক। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও বিপত্তি বাধছে তার চেহারা। কারণ তার চেহারার সঙ্গে মিল আছে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে।
গুজরাটে ফ্রায়েড চিকেন বিক্রি করেন তিনি। রাস্তায় বের হলে বিজেপির সমর্থকরাই তাকে উত্যক্ত করেন। এখন তিনি শরীরের ওজন বাড়িয়েছেন, দাঁড়ি বড় করেছেন, চুলের স্টাইল পরিবর্তন করেছেন, যাতে গান্ধীর মতো তাকে মনে না হয়। একবার সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাবও দেয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন > মসজিদে হামলার পর শ্রীলঙ্কায় ফেসবুক বন্ধ
শেঠি বলেন, ‘শুরু থেকেই আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা বিজেপির সমর্থক। কিন্তু শুধুমাত্র গান্ধীর মতো দেখতে মনে হওয়ায় বিজেপির সমর্থকরাও আমাকে উত্যক্ত করেন।’
তিনি বলেন, ‘লোকজন আমাকে পাপ্পু বলে ডাকে।’ ভারতে নির্বোধ মানুষজনকে গান্ধী বিরোধীরা এই নামে ডাকে। ‘যে কারণে আমি চেহারায় পরিবর্তন এনেছি।
কিন্তু লক্নৌওয়ের বাসিন্দা ছয় সন্তানের বাবা অভিনন্দন পাঠকের চেহারায় পরিবর্তন আনার ইচ্ছা নেই। ‘কেন আমি বদলাবো? ১৯৯০ এর দশক থেকে আমি রাজনীতি করে আসছি। আমি সবসময় দাঁড়ি এবং কুর্তার ভক্ত।’
তিনি বলেন, ‘আমিই আসল মোদি। আর মোদিই দেখতে আমার মতো।’
সূত্র : এএফপি।
এসআইএস/জেআইএম