বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) রাজশাহী জেলা শাখা। বহুদিন ধরেই দলে এ অবস্থা বিরাজ করছে। কেন্দ্রীয় ঘোষণানুযায়ী আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কমিটি গঠন করাকে কেন্দ্র করে এ বিভক্তি চরম মাত্রায় রূপ নিয়েছে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে জেলা কমিটি দুইভাবে বিভক্ত হয়ে পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালন করছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা কমিটি, পৌর কমিটি, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি থেকে লোকবল এনে প্রত্যেকে তাদের স্ব স্ব শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করছে। জেলা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফা এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল মনিরের নেতৃত্বে এ বিভক্তি তৈরি হয়েছে।দলীয় কর্মীদের ভাষ্যমতে, ৩৭ বছরের মধ্যে বিএনপি বর্তমানে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে। প্রধানত সাংগঠনিক শৃঙ্খলা না মানা, ব্যক্তি স্বার্থপরতা, টাকার বিনিময়ে কমিটি বিক্রি করা, দলের মধ্যে কোনো গণতন্ত্রের চর্চা না থাকা, দলের মধ্যে একনায়কতন্ত্রের আধিপত্য বিস্তার, ঘরের মধ্যে কমিটি গঠন ও ত্যাগী নেতাদের কমিটিতে স্থান না দেয়ার কারণে জেলা বিএনপির মধ্যে এই নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে বলে নেতাকর্মীরা জানান।দলকে সুশৃঙ্খলভাবে সাজিয়ে রাজপথের লড়াকু শক্তিতে পরিণত করার জন্য কেন্দ্র ঘোষিত ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জেলার প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌর ও উপজেলা কমিটি গঠনের লক্ষ্যে জেলা কমিটির একাংশ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল মনিরের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারের সম্মেলনকক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে, জেলা বিএনপির সভাপতি নাদিম মোস্তফার নেতৃত্বে শুক্রবার বিকেলে সম্মেলন উপলক্ষে আরেকটি বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কামরুল মনিরের নেতৃত্বে আহূত সভায় জেলার ৮০শতাংশ নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন বলে দাবি করে জেলা কমিটির দফতর সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন জাগো নিউজকে জানান, পবা উপজেলার সভাপতি, নওহাটা, পুঠিয়া পৌরসভা, কাঁটাখালী পৌরসভার সভাপতি ছাড়া বাকি সকল উপজেলা-পৌর বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।সভায় অ্যাডভোকেট কামরুল মনির বলেন, যারা দলে সবচেয়ে ত্যাগী নেতা, জিয়াউর রহমানের সময় থেকে রাজনীতি করছেন, তাদের বাদ দিয়ে ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় নেতা এনে কমিটি গঠন করা হয়। এই সব আর হতে দেয়া হবে না। যারা ভীত, আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে থাকে না, তাদের কমিটিতে দেখতে চাই না। প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌর কমিটি ও উপজেলা কমিটিতে দলের সংবিধান মেনে কমিটি গঠনের জন্য এ সভা। সভায় জেলার ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌর ও উপজেলা কমিটিতে যে দল-উপদল আছে তার প্রত্যেকটি থেকে একজন করে নিয়ে সমন্বিত কমিটি গঠনের পরামর্শ দেন নেতারা। জেলা কমিটি ভেঙে অ্যাডভোকেট কামরুল মনিরকে আহ্বায়ক করে ‘আহ্বায়ক’ কমিটির মাধ্যমে বিভিন্ন ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌর ও উপজেলা কমিটি নেতাকর্মীদের উপস্থিতি গঠনের পরামর্শ দেন তারা। নেতাকর্মীরা আরো বলেন, আর যেন কোনো পকেট কমিটি করা না হয়, এয়ারকন্ডিশন ঘরে বসে যেন কোনো কমিটি না হয়। যারা ত্যাগী, দলের জন্য কাজ করতে প্রস্তুত, আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত তাদের যেন কমিটিতে রাখা হয়।তবে, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু জাগো নিউজকে জানান, দলের অনেক ত্যাগী নেতাকে জেলা ও নগর বিএনপি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। আগামীতে যেন এ সমস্ত ঘটনা না ঘটে। এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফা জাগো নিউজকে জানান, দলে যারা সংগ্রামী নেতা, আন্দোলন সংগ্রামে গত জানুয়ারি থেকে যুক্ত ছিলেন, যাদের নামে মামলা আছে তারাই দলে থাকবেন। শাহরিয়ার অনতু/এসএস/এমএস
Advertisement