লিবিয়া থেকে নৌ-পথে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় হবিগঞ্জের দুই যুবক নিখোঁজ হয়েছেন।
Advertisement
নিখোঁজরা হলেন, সদর উপজেলার লোকড়া গ্রামের হাজী আলাউদ্দিনের ছেলে আব্দুল কাইয়ুম (২২) ও আব্দুল জলিলের ছেলে আব্দুল মোক্তাদির (২২)। তবে তাদের সঙ্গী একই গ্রামের মর্তুজ আলীর ছেলে নূরুল আলম (২৪) ইতালী পৌঁছে গেছেন। অপর সঙ্গী সদর উপজেলার আষেঢ়া ভাটপাড়া গ্রামের আব্দুল হাইয়ের ছেলে মামুন মিয়া (২৩) সাগরে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার হলেও বর্তমানে তিউনিসিয়ার উদ্বাস্তু শিবিরে রয়েছেন।
কাইয়ূম ও মুকতাদিরের পরিবারের লোকজন শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়েছে। নাওয়া খাওয়া নেই। উৎকণ্ঠার মধ্যে তাদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে।
নিখোঁজদের পরিবার জানায়, কাইয়ূম, মুকতাদির, নূরুল আলম ও মামুন মিয়া ইতালী যাওয়ার জন্য ৬/৭ মাস আগে বাড়ি থেকে বের হন। দালালের মাধ্যমে তারা প্রথমে লিবিয়া যান। তাদের সঙ্গে সিলেট, মৌলভীবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আরও লোকজনকে একত্রিত করে দালাল। গত ৮ মে রাতে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে দু’টি নৌকায় তোলা হয় তাদের। আব্দুল কাইয়ুম, আব্দুল মোক্তাদির ও মামুন মিয়া এক নৌকায় ছিলেন। ওই নৌকায় যাত্রী ছিল ৭৫ জন। অপর নৌকায় ছিলেন নূরুল আলম। এ নৌকাটি সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি পৌঁছে যায়। ইতালি পৌঁছে নূরুল আলম পরিবারকে তার পৌঁছানোর খবর নিশ্চিত করেছেন।
Advertisement
এদিকে কাইয়ূম, মুক্তাদির ও মামুনকে বহনকারী নৌকাটি তিউনিসিয়া উপকূলে ডুবে যায়। মামুনের কাছে বড় বেলুন থাকায় তিনি পানিতে ভাসতে থাকেন। এ সময় মুক্তাদিরও তার হাত ধরা ছিল। সাগরে সাঁতরানোর একপর্যায়ে মামুন নিজেকে রক্ষায় মুক্তাদিরকে ছেড়ে দেন। এরপর মুক্তাদির কোন অবস্থায় আছেন, মারা গেছেন নাকি বেঁচে আছেন এর কিছুই বলতে পারেন না মামুন।
এদিকে প্রায় ৮ ঘণ্টা সাগরে ভাসমান অবস্থায় থাকার পর মাছ ধরার একটি ট্রলারের লোকজন দেখতে পেয়ে মামুনকে উদ্ধার করে। ডুবে যাওয়া নৌকাতে ৭৫ জন যাত্রী ছিল বলে জানা যায়।
লোকড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. জাহির মিয়া জানান, উদ্ধার হওয়া মামুন মিয়া তার ভাগ্নে। মোবাইলে মামুন মিয়া জানিয়েছেন নৌকাডুবির পর মোক্তাদিরের সঙ্গে তিনি হাত ধরে সাঁতার কেটেছেন অনেকক্ষণ। হাত ছেড়ে দেয়ার পর আর মোক্তাদিরকে দেখতে পাননি।
আব্দুল কাইয়ুমের বাবা হাজী আলাউদ্দিন জানান, গত বুধবার (৮ মে) তার ছেলে বাড়িতে ফোন করে ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা দেবে বলে জানায়। নৌকাডুবির পর থেকে তাদের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
Advertisement
কাইয়ূমের ভাই আলতাব হোসেন জানান, কাইয়ূম গত বছর বৃন্দাবন সরকারি কলেজ থেকে বিএ পাস করেছেন। তিনি সদর উপজেলা পরিষদে মাস্টার রোলে চাকরি করতেন। ৬/৭ মাস আগে কাইয়ূম, মোক্তাদির, নূরুল আলম ও আষেঢ়া গ্রামের মামুন ইতালি যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন। তারা দালালের মাধ্যমে লিবিয়া পৌঁছান।
সেখান থেকে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে দালালের মাধ্যমে গত ৯ মে নৌকায় ওঠেন। নৌকাডুবির পর তাদের আর খবর পাওয়া যাচ্ছে না। তবে মুক্তাদির যে মামুনের হাত ধরা ছিল সেটা মামুন জানিয়েছে। এছাড়া আর কোনো খবর তারা পাচ্ছে না। দালালের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি। তবে দালালও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছে না।
বিষয়টি নিশ্চিত করে লুকড়া ইউপি চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন আব্বাস জানান, তাদের নিখোঁজের বিষয়টি তিনি জেনেছেন। সার্বক্ষণিক তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ দুইজনের হদিস পাওয়া যায়নি। তবে তারা জীবিত না মারা গেছেন সেটাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এফএ/জেআইএম