দেশজুড়ে

লিবিয়ায় বাংলাদেশি অপহরণ : পরিবারে চলছে মাতম

আর কয়েকটা দিন পর বাড়িতে ফেরার কথা ছিলো লিবিয়া প্রবাসী আব্দুল মান্নানের। তাই আনন্দের বন্যা বইছিল মেহেরপুরের রাইপুরে তার গ্রামের বাড়িতে। কিন্তু গত ১৯ আগস্ট থেকে নিখোঁজ হওয়ার ১৮ দিন পার হলেও মেলেনি তার  সন্ধান।এদিকে তার নিখোঁজের সংবাদে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। মান্নান বেঁচে আছে না মরে গেছে জানে না তার পরিবার।লিবিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা জানিয়েছেন, দেশটিতে গৃহযুদ্ধের ফলে প্রবাসী সকল বাংলাদেশিদের দিন কাটছে চরম আতঙ্কের মধ্যে। দেশে টাকা পাঠানোর নানা সমস্যা এবং কাজ করে পারিশ্রমিক না পাওয়ার নিদারুণ কষ্টও রয়েছে তাদের মাঝে।মান্নানের স্ত্রী নাজেরা খাতুন জাগো নিউজকে জানান, আর্থিক স্বচ্ছলতার আশায় লিবিয়ায় পাড়ি জমায় তার স্বামী। বাড়িতে থাকতে তিনি মেশিনারিজ মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। লিবিয়ায় গিয়ে বেরাকুলি শহরে টাইলস মিস্ত্রীর কাজ করতেন তিনি। দীর্ঘ ২ বছর ৮ মাস পর আগামী ১২ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরার কথা ছিল তার। কিন্তু ১৯ আগস্ট সকালে তার স্বামী ও তার সহকর্মীরা কাজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে হঠাৎ একটি গাড়ি বাড়ির সামনে গিয়ে হর্ন বাজায়। গেট খুলতেই অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বেধড়ক পেটাতে থাকে তাদের। এতে গুরুতর আহত হয় মেহেরপুরের লিটন ও রংপুর জেলার খাইরুজ্জামান। লিটনের বাড়িও রাইপুর গ্রামে। তাদের দুইজনকে কম্বলে জড়িয়ে ফেলে রেখে অপহরণ করে নিয়ে যায় মান্নানকে। সেখান থেকে তাদের জমিয়ে রাখা নগদ টাকা ও ১২টি মোবাইল ফোন নিয়ে যায় অস্ত্রধারীরা। তারপর থেকেই তার আর কোনো খোঁজ মিলেনি। পরদিন দুুপুরে আহত লিটন মোবাইল ফোনে মান্নানের বাড়িতে বিষয়টি জানান। এ সংবাদ শোনার পর থেকেই তার পরিবারে চলছে শোকের মাতম। স্বামীকে জীবিত ফিরে পেতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর একটি আবেদনও করেছেন তার স্ত্রী নাজেরা খাতুন। মান্নানের ছেলে মইনুদ্দীন জাগো নিউজকে জানায়, কে বা কারা তার বাবাকে অপহরণ করেছে কিছুই জানে না তারা। তার বাবাকে উদ্ধারের জন্য সরকার এগিয়ে আসবে এমন আশাই ব্যক্ত করেছেন তিনি।লিটন মোবাইল ফোনে জানান, দেশ অস্থিতিশীল থাকার কারণে তারা বাড়িতে কোন টাকা পাঠাতে পারছেন না। ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে গেলে মোটা অংকের বাড়তি টাকা খরচ করতে হয় তাদের। ফলে অনেক সময় তাদের কাছেই উপার্জিত টাকা জমা রাখতে হয়। এ কারণে প্রায়ই হামলার শিকার হতে হয় তাদের। কাজ ছাড়া বাইরে বের হতে পারেন না তারা। আবার কাজ করে টাকা চাইতে গেলে অস্ত্র তাক করে ভয় দেখানো হয়। এ সকল সমস্যার কথা দূতাবাসে জানালেও বরাবরই মিলছে আশ্বাসের বাণী। আব্দুল মান্নানের নিখোঁজের বিষয়টি দূতাবাসে জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি। বাধ্য হয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনীকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।  ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক খাইরুল হাসান জাগো নিউজকে জানান, আবেদনটি দ্রুত প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। দূতাবাসের মাধ্যমে তাকে খুঁজে বের করে দেশে ফিরিয়ে আনারও আশ্বাস দেন তিনি।এসএস/এমএস

Advertisement