খেলাধুলা

শেষ ওভারের নাটকীয়তায় চতুর্থবার চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই

মাত্র ১৪৯ রানের পুঁজি নিয়ে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স এতটা লড়াই করবে, কেউ স্বপ্নেও কল্পনা করেনি। তবে ক্যাচ মিসের মহড়া দিয়ে শেষ পর্যন্ত ম্যাচ হারার পর্যায়ে চলে গিয়েছিল মুম্বাই। কিন্তু শেষ ওভারের নাটকীয়তায় চেন্নাইকে ১ রানে হারিয়ে চতুর্থবারের মতো আইপিএল চ্যাম্পিয়নশিপের মুকুট পরল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। মুম্বাইয়ের করা ১৪৯ রানের জবাবে চেন্নাই থেমে যায় ৭ উইকেটে ১৪৮ রানে।

Advertisement

হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে ক্যাচ মিসের মহড়া দিতে দিতে ম্যাচটাই হারিয়ে ফেলেছিল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান শেন ওয়াটসনের তিনটি সহজ ক্যাচ মিস করে মুম্বাই। যার ফলে তার ব্যাটেই চতুর্থ শিরোপার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে চেন্নাই সুপার কিংস।

কিন্তু যে লাসিথ মালিঙ্গা ১৬তম ওভারে ২০ রান দিলেন সেই মালিঙ্গা শেষ ওভারে এসে চেন্নাইকে ৯ রান তুলতে দিলেন না। উপরন্তু শেন ওয়াটসনকে রানআউট করে মুম্বাইয়ের জয়ের পথ সুগম করেন।

৭ বলে চেন্নাইয়ের প্রয়োজন ছিল ১৩ রান। জসপ্রিত বুমরাহর লেন্থ বলটি কাট করতে চেয়েছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা। কিন্তু ব্যাট ফাঁকি দিয়ে বল চলে যায় উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি ককের হাতে। কিন্তু দাঁড়িয়ে থেকেও সোজা বলটি ধরতে পারলেন না ডি কক। বল গ্লাভসের ফাঁক গলে চলে গেলো তার সোজা পেছনে বাউন্ডারির বাইরে।

Advertisement

এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে চার রান বাই হিসেবে চলে যাওয়া কত বড় ক্ষতি! সেটা ভেবেই হয়তো ভেঙে পড়েছিলেন ডি কক। তাকে এসে সান্ত্বনা দেন উল্টো বুমরাহ নিজে।

শেষ ওভার করতে বল তুলে দেয়া হয় ডেথ ওভার মাস্টার মালিঙ্গার হাতে। ১৬তম ওভারে তিন বাউন্ডারি আর ১ ছক্কা খেয়ে বেদিশা হয়ে যাওয়া মালিঙ্গা এবার এসে যেন দিশা খুঁজে পেলেন। শেষ ওভারে চেন্নাইয়ের প্রয়োজন ছিল ৯ রান।

ওয়াটসন আর বিগ শট খেলতে পারলেন না। প্রথম বলে নিলেন ১ রান। দ্বিতীয় বলে জাদেজা নিলেন ১ রান। তৃতীয় বলে ২ রান নিয়ে নিলেন ওয়াটসন। চতুর্থ বলে ভুলটা করে বসলেন এই অস্ট্রেলিয়ান।

চেন্নাইকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে তুলে এনে মালিঙ্গার চতুর্থ বলকে ডিপ পয়েন্টে ঠেলে দিয়ে দ্রুত এক রান নিলেন। কিন্তু ওয়াটসন চাইলেন আবার স্ট্রাইকিংয়ে চলে আসবেন। ফিল্ডারের হাতে বল থাকার পরও তিনি দৌড় দিলেন। ফল যা হওয়ার তাই হলো। ক্রুনাল পান্ডিয়ার সরাসরি থ্রো ধরেই ডি কক ভেঙে দিলেন স্ট্যাম্প।

Advertisement

ওয়াটসন আউট হয়ে যাওয়ার পরই পুনরুজ্জীবন পেয়ে যায় যেন মুম্বাই। তবুও মালিঙ্গার পঞ্চম বল থেকে দুই রান নিয়ে নেন শার্দুল ঠাকুর। জয়ের জন্য শেষ বলে প্রয়োজন ২ রান। মুম্বাইয়ের অধিনায়ক রোহিত শর্মা, বোলার মালিঙ্গা, কিপার ডি কক থেকে শুরু করে সবার সে কি দফায় দফায় আলোচনা।

তবে মালিঙ্গাকে মূল মন্ত্রটি দিলেন সম্ভবত রোহিত শর্মা। বলে দিলেন যাই হোক, ইয়র্কার করতে হবে। মালিঙ্গা ইয়র্কার তো দিলেনই সঙ্গে মিশিয়ে দিলেন স্লোয়ার। শার্দুল ঠাকুর চেষ্টা করেন শট খেলার। কিন্তু পারলেন না। পায়ে লাগালেন। আবেদন করার আগেই আঙুল তুলে দিলেন আম্পায়ার।

১ রানের অসাধারণ এক জয়ে আইপিএলের মুকুট পরে নিলো মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। এবারের আইপিএলে চারবার মুখোমুখি হলো চেন্নাই-মুম্বাই। চারবারই মুম্বাইয়ের কাছে হেরেছে চেন্নাই সুপার কিংস। দু’বার লিগ পর্বে। একবার কোয়ালিফায়ার এবং শেষবার ফাইনালে।

অথচ, একের পর এক ক্যাচ মিসের মহড়া দিয়ে এই জয়টাই হাতছাড়া করে দিচ্ছিল মুম্বাই। শেন ওয়াটসনের ক্যাচ তিনবার মিস করেন মুম্বাইর ফিল্ডাররা। একবার লাসিথ মালিঙ্গা, অন্য দু’বার রাহুল চাহার। রাহুলের বলে একবার রিটার্ন ক্যাচ দিয়েছিলেন ওয়াটসন। কিন্তু বল ধরে রাখতে পারেননি তিনি। আরেকবার বুমরাহর বলে ক্যাচ উঠলে আবারও ফেলে দেন রাহুল চাহার।

তিনবার জীবন পেয়ে সেটা কাজে লাগান ওয়াটসন। মালিঙ্গার এক ওভারে ২০ রান নেয়ার পাশাপাশি ক্রুনাল পান্ডিয়ার এক ওভারে টানা তিনটি ছক্কা মেরে ২০ রান নেন দিনি। এই দুই ওভারের ৪০ রানেই জয়ের একেবারে দ্বারপ্রান্তে চলে আসে চেন্নাই। শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৮ রান। বুমরাহ দিলেন ৯ রান আর মালিঙ্গা দিলেন ৭ রান। ওয়াটসন ৫৯ বলে ৮০ রান করে রানআউট হন। ৮টি বাউন্ডারির সঙ্গে তিনি ছক্কা মারেন ৪টি।

এর আগে জয়ের জন ১৫০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১৩ বলে ২৬ রান করে আউট হন ফ্যাফ ডু প্লেসি। সুরেশ রায়না ১৪ বল খেলে করেন মাত্র ৮ রান। আম্বাতি রাইডু ৪ বল খেলে আউট হন ১ রান করে।

মহেন্দ্র সিং ধোনি রান আউট হয়ে যান মাত্র ২ রান করে। যদিও ধোনির রান আউট নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। ডোয়াইন ব্র্যাভো করেন ১৫ বলে ১৫ রান। জাদেজা ৫ রানে অপরাজিত থাকলেও শার্দুল ঠাকুর আউট হন ২ রান করে। শেষ পর্যন্ত মুম্বাই থেমে যায় ১৪৮ রানে।

মুম্বাইয়ের বোলাররাও ছিলেন সবচেযে কৃপণ। ৪ ওভার বল করে মাত্র ১৪টি করে রান দেন দুই বোলার রাহুল চাহার এবং জসপ্রিত বুমরাহ। ৪ ওভার বল করে ২৪ রান দেন মিচেল ম্যাকক্লেনঘান। সবচেয়ে খরুচে ছিলেন মালিঙ্গা। ৪ ওভারে তিনি দেন ৪৯ রান। এর মধ্যে শেষ ওভারে দেন মাত্র ৭ রান। জসপ্রিত বুমরাহ হলেন ফাইনাল ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়।

আইএইচএস/