জাতীয়

পুলিশের জিরো টলারেন্স : এ যেন অচেনা ফুটপাত!

রাজধানীর মিরপুর রোডে এসে থামল ঢাকা মেট্রোপলিন পুলিশের (ডিএমপি) একটি গাড়ি। গাড়ি থেকে হন হন করে নামলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। এ সময় গেটের সামনে টুল পেতে বসে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে খোশগল্প করতে দেখে ওই পুলিশ কর্মকর্তা ক্ষিপ্ত ও রুঢ় কণ্ঠে চিৎকার করে বলেন, ‘এখানে পোশাক গায়ে কীসের ডিউটি করছো? হকাররা এখানে ঘোরাঘুরি করে ফেরি করে পণ্য বিক্রি করছে কীভাবে? যাও, ওদের ধরে নিয়ে আসো।’

Advertisement

পুলিশ কর্মকর্তার ধমকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় পুলিশ সদস্যরা। দুই তিনজন ভাসমান হকারের পেছনে দৌড়ে দুই তরুণকে ধরে গাড়িতে তুললেন। পুলিশ কর্মকর্তার রাগ যেন কমছেই না। তিনি আবার উচ্চ কণ্ঠে বললেন, ‘কোনো হকার রাস্তায় বসবে না। দিজ ইজ হাই অফিসিয়ালস অর্ডার।’ এ কথা বলেই গট গট বুটের আওয়াজ তুলে গাড়িতে উঠে চলে যান পুলিশের ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। হাফ ছেড়ে যেন বাঁচলেন পুলিশ সদস্যরা।

রোববার রাত ৮টায় বলাকা সিনেমা হলের বিপরীতে পশ্চিম পার্শ্বে নিউমার্কেটের ১ নম্বর গেটের সামনে এ দৃশ্য চোখে পড়ে। অন্যান্য বছর রোজার প্রথম দিন থেকেই নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, গাওছিয়া, চাঁদনীচক, ঢাকা কলেজসহ আশপাশের রাস্তা হকারদের দখলে থাকলেও এ বছর রাস্তাঘাট যানজটমুক্ত রাখার লক্ষ্যে পুলিশের জিরো টলারেন্সের কারণে হকাররা বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসতে পারছেন না।

সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, ফুটপাতগুলো একেবারেই হকারশূন্য। ক্রেতারা ফুটপাত দিয়ে হেঁটে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারছেন। তবে কোনো কোনো হকার পুলিশের টহলের অলক্ষ্যে কিংবা গোপন সমঝোতা করে লুকিয়ে বেচাকেনা করলেও পুলিশের টহল গাড়ি দেখলেই ভো দৌড় দিচ্ছেন।

Advertisement

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক হকার বলেন, রমজান মাসে ফুটপাতে না বসতে দিলে না খেয়ে মরতে হবে। ঈদের সময় বিশেষ করে রোজার মাসে তাদের বেচাকেনা ভালো হয়। তারা নানাভাবে কথিত ‘বড়ভাই’দের কাছে ফুটপাতে বসার অনুমতি পেতে যোগাযোগ করলেও রহস্যজনক কারণে বড় ভাইরাও সাড়া দিচ্ছেন না। তবুও হাল ছাড়ছেন না তারা। হকাররা আশা করছেন মানবিক দিক বিবেচনায় হয়তো ১০ রোজা থেকে তারা ফুটপাতে বসার অনুমতি পাবেন।

এদিকে পবিত্র রমজান মাসে রাজধানীর পাঁচটি স্থানে হলিডে মার্কেট অনুমোদন দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)।

সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে এসব মার্কেট খোলা থাকবে বলে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

যে সব স্থানে হলিডে মার্কেট বসবে- কার্পেট গলি মৎস্য ভবন থেকে শিল্পকলা একাডেমি, নালার পার কাটাবন থেকে শাহবাগের দিকে প্রথম গলি, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের রাস্তা, বক চত্বর থেকে পূবালী ব্যাংক লিঙ্ক রোড পর্যন্ত দিলকুশা রোড এবং যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার পূর্ব পাশে।

Advertisement

কিন্তু হকাররা হলিডে মার্কেট নয়, প্রতিদিনই অফিস ছুটি শেষে ফুটপাতে বসতে চাইছেন। প্রয়োজনে তারা লাগাতার আন্দোলন করে হলেও তাদের দাবি পূরণ করবেন বলে জানিয়েছেন।

এমইউ/এনডিএস/জেআইএম