‘এটিই কি নারী আইপিএলের সেরা ডেলিভারি?’ - এমন ক্যাপশনেই জাহানারা আলমের করা সোফি ডিভাইনকে বোল্ড আউটের ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছিল আইপিএলের ওয়েবসাইটে। মুহূর্তের মধ্যে তা ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সবাই এক বাক্যে রায় দেন, জাহানারার করা ডেলিভারিটিই আইপিএলের সেরা বল।
Advertisement
অথচ লিগ পর্বে খেলা একমাত্র ম্যাচে ৪ ওভার বোলিং করে ৩৪ রান খরচ করেছিলেন জাহানারা আলম। তাই ফাইনালে তাকে একাদশে সুযোগ দেয়া হবে কিনা তা নিয়েই ছিলো সংশয়। সেসব শঙ্কা কাটিয়ে জাহানারা শুধু খেলেনইনি, রীতিমত আগুনঝরা বোলিংয়ে তাক লাগিয়েছেন উইমেন্স টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জ তথা নারী আইপিএলের ফাইনালে।
শিরোপার লড়াইয়ে জাহানারার দল ভেলোসিটির করা ১২১ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ধীরে সুস্থে এগোচ্ছিলো সুপারনোভা। প্রথম ১০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৫৩ রান সংগ্রহ করে তারা। এর মধ্যে ষষ্ঠ ওভারে বোলিং করে মাত্র ১ রান খরচ করেন জাহানারা।
ইনিংসের ১২তম ওভারে দ্বিতীয় স্পেলে বোলিং করতে আসেন ডানহাতি এ পেসার। বল হাতে নিয়েই যোগ দেন উইকেট শিকারের উৎসবে। সে ওভারের শেষ বলে শার্প ইনসুইংয়ে সরাসরি বোল্ড করে দেন নাতাইল সিভারকে, খরচ করেন মাত্র ৪ রান।
Advertisement
১৪তম ওভারে আবারও আক্রমণে আসেন জাহানারা এবং উইকেটের দেখা পেয়ে যান তৎক্ষণাৎ। ওভারের চতুর্থ বলে উইকেটে থিতু হওয়ার আগেই মারকুটে ব্যাটসম্যান সোফি ডিভাইনের অফস্টাম্প উড়িয়ে দেন বাংলাদেশি তারকা জাহানারা। প্রথমটার মতো এটিও শার্প ইনসুইংয়ে ঢুকে যায় ভেতরে। ১১০ কিমি প্রতি ঘণ্টায় ছোড়া ডেলিভারিটির জবাবে কিছুই করার ছিলো ডিভাইনের, শুধু চেয়ে দেখেছেন তার অফস্টাম্প উড়ে যেতে।
তাই তো এ ডেলিভারিটিকে টুর্নামেন্টের সেরা বল হিসেবেই আখ্যা দেয়া হচ্ছে আইপিএলের ওয়েবসাইটে। তবে জাহানারার এমন বিধ্বংসী বোলিংয়ের পরেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি ভেলোসিটি। প্রতিপক্ষ অধিনায়ক হারমানপ্রিত কৌরের অসাধারণ এক ফিফটিতে ম্যাচের একদম শেষ বলে গিয়ে ম্যাচ জিতে শিরোপা ঘরে তোলে সুপারনোভা।
তবু ম্যাচ শেষে জাহানারার কথা ভোলেনি আয়োজকরা। তাই তো একান্ত সাক্ষাৎকারে জানতে চাওয়া হয় সেরা বল করার অনুভূতি। জবাবে জাহানারা বলেন, ‘একজন পেসার হিসেবে আমার জন্য বেশ আনন্দের ব্যাপার এটি। হ্যাঁ, হয়তো আরও ভালো করতে পারতাম আমি। তবে আমি মনে করি পরেরবার সুযোগ পেলে আরও ভালো করতে পারবো।’
Advertisement
মূলত ডট বল করার লক্ষ্য নিয়েই বোলিংয়ে এসেছিলেন জাহানারা। যে কাজে ছিলেন পুরোপুরি সফল। নিজের প্রথম তিন ওভারে করেন ১৩টি ডট বল, খরচ করেন মাত্র ৮টি রান। আর এমন কিপটে বোলিংয়ের সুবাদেই পেয়ে যান দুইটি উইকেট।
যা শোনা গেল জাহানারার কণ্ঠেও, ‘আমার মূল লক্ষ্য ছিলো যত বেশি ডট বল করা যায়। আমি এটার দিকেই মনোযোগী ছিলাম এবং দুই উইকেট পেয়ে গেলাম। এজন্য আমি বেশ খুশি ছিলাম। কারণ ঐ সময় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে আসছিল।’
প্রথম তিন ওভার ভালো হলেও হারমানপ্রিতের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে শেষ ওভারে ১৩ রান খরচ করে ফেলেন তিনি। যা একদমই ভালো হয়নি বলেই মন্তব্য জাহানারার, ‘তবে আমার শেষ ওভারটা ভালো হয়নি। আমি মনে করি সে ওভারটা ভালো করলে হয়তো ফলাফল আমাদের পক্ষে আসতে পারত। যা হওয়ার হয়ে গেছে, কেউ তার ভাগ্য বদলাতে পারে না। এবার সুপারনোভার ভাগ্যে ছিলো শিরোপা। পরেরবার আমরা পুনরায় চেষ্টা করবো।’
এদিকে দীর্ঘ ১১ বছর ধরে ক্রিকেট খেললেও নারী আইপিএল খেলার অভিজ্ঞতা অন্য সবকিছুর চেয়ে আলাদা জানিয়ে জাহানারা বলেন, ‘আমি ১১ বছর ধরে ক্রিকেট খেলছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কথা হিসেব করলে প্রায় ৮ বছর হয়ে গেছে। তবে আমার মনে হচ্ছে এটা (উইমেন্স টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জ) একদমই ভিন্ন একটা প্ল্যাটফর্ম। এখানে পারফর্ম করা খুব সহজ নয়। কারণ এখানে আপনাকে লড়তে হচ্ছে সব তারকাদের বিপক্ষে।’
এসএএস/পিআর