পণ্যের ভেজাল প্রতিরোধে প্রয়োজনে যুদ্ধ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া খাদ্য নিরাপদ রাখতে প্রয়োজনে দেশে জরুরি অবস্থা জারির জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
Advertisement
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মানহীন ৫২ খাদ্যপণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার চেয়ে দায়ের করা রিটের শুনানি নিয়ে রোববার (১২ মে) হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ অনুরোধ জানান।
ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সরকার, সরকারি দল এবং প্রধানমন্ত্রীকে মাদক নির্মূলের মতো ভেজাল খাদ্যপণ্যের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষণার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন হাইকোর্ট। মাদক দ্রব্য নির্মূলের মতো জিরো টলারেন্স দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
আদালত তার আদেশে বাজার থেকে নিম্নমানের ৫২টি খাদ্যপণ্য প্রত্যাহার করতে বলেছেন। একই সঙ্গে বাজার থেকে এসব পণ্য প্রত্যাহার করে তা ধ্বংস করতে বলা হয়েছে, যাতে এসব পণ্য তৃতীয় কোনো পক্ষের কাছে বা হাতে না যায়। আদেশের প্রতিপালন বিষয়ে আগামী ২৩ মে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
Advertisement
আদালতে রোববার রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম ও বিএসটিআই এর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আর হাসান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।
আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে পর্যবেক্ষণ দিয়ে বলেন, ‘খাদ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণে শুধুমাত্র রমজান মাসেই অভিজান চালানো যথেষ্ট নয়। সারাবছরই খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখা উচিৎ। খাদ্যপণ্যের ভেজাল নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের শুধুমাত্র নিজেদের কর্মকর্তা মনে না করে দেশ প্রেমিক নাগরিক ও জনগণের প্রতি ভালোবাসা থেকে দায়িত্ব পালন করা উচিৎ।’
আদালত আরও বলেন, ‘যদিও এই জাতীয় বিষয়ে হাইকোর্টের নিয়মিত দেখা উচিৎ নয়। কারণ, এর জন্য যথাযথ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ রয়েছে। কিন্তু এ রকম অবস্থায় হাইকোর্ট কিছু না করেও বসে থাকতে পারে না। তাই ভেজাল রোধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টা জরুরি।’
একই সঙ্গে হাইকোর্ট অনুরোধ জানিয়ে বলেন, সরকার ও সরকারি দল এবং প্রধানমন্ত্রীর নিকট অনুরোধ জানাচ্ছি, যেন এসব ভেজাল খাদ্যপণ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে যেমন যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল তেমনি ভেজাল খাদ্যের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষণার অনুরোধ জানাচ্ছি। প্রয়োজনে ভেজাল খাদ্য রোধে জরুরি অবস্থা ঘোষণারও অনুরোধ জানাচ্ছি।
Advertisement
আদালত বলেন, ‘হাইকোর্ট সরকার ও নির্বাহী বিভাগের কাজের অগ্রাধিকার কী হবে তা নির্ধারণ করে দিতে পারে না। কিন্তু খাদ্যে ভেজাল রোধের বিষয়টিকে এক নম্বরে অগ্রাধিকার দেওয়ার অনুরোধ জানানো হলো।’
ভেজালের বিষয়ে আর কোনো আপোষ কিংবা ছাড় দেওয়া হবে না বলেও আদালত তার আদেশে হুশিয়ারি দেন।
গত ৯ মে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় প্রমাণিত ৫২টি ভেজাল ও নিম্নমাণের পণ্য জব্দ এবং এসব পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার ও উৎপাদন বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। কনশাস কনজ্যুমার সোসাইটির (সিসিএস) পক্ষে ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করেন।
রিটের শুনানি নিয়ে আদালত বিএসটিআই ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক নীচে নন এমন দু’জন কর্মকর্তাকে হাইকোর্ট তলব করেন। যার ধারাবাহিকতায় তারা আজ (১২ মে, রোববার) বিএসটিআই এর উপ-পরিচালক মো. রিয়াজুল হক এবং বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিচালক ড. সহদেব চন্দ্র সাহা আদালতে হাজির হন। আদালত উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে বাজার থেকে সংশ্লিষ্ট ভেজাল পণ্য প্রত্যাহারের আদেশ দেন।
এফএইচ/আরএস/জেআইএম