খেলাধুলা

স্বপ্নপূরণের মঞ্চে দলের জন্য বাইরে থাকতেও আপত্তি নেই মিরাজের

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলছেন বছরদুয়েকের বেশি সময় ধরে। এরই মধ্যে টেস্ট দলে নিজেকে পরিণত করেছেন অপরিহার্য সদস্য হিসেবে। ধীরে ধীরে রঙিন পোশাকের ক্রিকেটেও পরিণত হচ্ছেন দলের নিয়মিত সদস্য হিসেবে। মাঠের মধ্যে তার চলন-বলন কিংবা সতীর্থদের সঙ্গে মেলবন্ধনে লক্ষ্য করা যায় নেতাসুলভ একটি ব্যাপার।

Advertisement

যা তিনি আয়ত্ব করেছেন বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে খেলার সময়েই। অনেকেই তার মধ্যে দেখেন টাইগারদের পরবর্তী অধিনায়কের ছায়া। বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৯ দলকে দুইটি বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেয়ার পর এবার বড়দের বিশ্বকাপে খেলার অপেক্ষায় রয়েছেন ২১ বছর বয়সী অফস্পিনিং অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ।

যার কাছে বিশ্বকাপের মঞ্চে সুযোগ পাওয়াটা স্বপ্নপূরণের মতোই একটি ব্যাপার। তিনি বলেন, ‘আমি যুব বিশ্বকাপে খেলেছি। তবে সবারই স্বপ্ন থাকে বড়দের বিশ্বকাপ খেলার। আমারও স্বপ্ন ছিল এক সময় মূল বিশ্বকাপ খেলব। এবার স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে।’ তাই বলে স্বপ্নপূরণ হলেই যে কাজ শেষ তা অবশ্য মানতে রাজি নন মিরাজ। তার মতে বিশ্বকাপে সুযোগ পেলে দলকে ভালো সার্ভিস দিতে পারাই আসল। সেজন্য নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করছেন মিরাজ। কেননা বড়দের এ বিশ্বকাপে চ্যালেঞ্জটাও থাকবে অনেক বেশি।

আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচের আগে সংবাদমাধ্যমে নানান বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। যার সিংহভাগ জুড়েই ছিলো আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপ। মিরাজ বলেন, ‘বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়াই শেষ কথা নয়। সেখানে ভালো কিছু করা ও দলকে ভালো সার্ভিস দিতে চাই। বিশ্বকাপে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ থাকবে। সবারই ভালো করার প্রত্যাশা থাকবে। নিজেকে মানসিকভাবে আরও প্রস্তুত করতে হবে কিভাবে কি করতে পারি।’

Advertisement

বিশ্বকাপের স্কোয়াডে সুযোগ পাওয়ায় মিরাজের স্বপ্নপূরণ হয়েছে ঠিক। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ইংল্যান্ডের মাটিতে হতে যাওয়া বিশ্বকাপে হয়তো খুব বেশি ম্যাচে খেলার সুযোগ হবে না তার। উইকেট ও কন্ডিশন বিবেচনায় বাড়তি পেসার নিয়ে খেলার সিদ্ধান্ত হলে বাইরে বসতে হবে এ অফস্পিনিং অলরাউন্ডারকেই।

তবে দলের ভালোর জন্য বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে বাইরে বসে থাকতেও আপত্তি নেই মিরাজের। ম্যাচে সুযোগ পেলে নিজের শতভাগ ঢেলে প্রত্যয়ই জানান খুলনার এ তরুণ। তিনি বলেন, ‘আমরা দলের জন্য খেলি। টিম কম্বিনেশনের কারণে যদি আমাকে বসে থাকতে হয়, তাহলে অসুবিধা নেই। চেষ্টা করব, যখনই সুযোগ পাই ভালো কিছু করার; দলের জন্য শতভাগ দেওয়ার।’

মিরাজের মতে বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য আয়ারল্যান্ডের এ ত্রিদেশীয় সিরিজটি আদর্শ একটি টুর্নামেন্ট। তিনি বলেন, ‘আয়ারল্যান্ডের এই টুর্নামেন্ট আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে নিজেদের প্রস্তুতি যাচাই করে নেয়ার সবচেয়ে ভালো সুযোগ। অবশ্যই বিশ্বকাপে আরো অনেক চ্যালেঞ্জ থাকবে। সবারই ভালো করার প্রত্যাশা থাকবে। সেখানে কিভাবে ভালো করতে হবে, সে বিষয়ে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

Advertisement

এখনো বিশ্বকাপে নিজের ব্যক্তিগত কোনো লক্ষ্য ঠিক করেননি মিরাজ। দলের প্রয়োজন নিজের সেরাটা দেয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছেন তিনি। মিরাজের ভাষ্যে, ‘ব্যক্তিগত কোনো লক্ষ্য এখনো ঠিক করিনি। যেটি সব সময় বলে আসছি, দলের প্রয়োজনে যতটা সম্ভব করতে চাই। দল আমার কাছ থেকে আশা করে যেন বোলিংটা ভালো করি। আর নিচের দিকে ব্যাটিংয়ে নেমে ২০/৩০ রান করি। তা যেন করতে পারি, সে চেষ্টা করছি।’

জাতীয় দলে ঢোকার পর থেকেই বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে বিশেষজ্ঞ স্পিনারের তকমাটা গায়ে সেঁটে গেছে মিরাজের। অথচ বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে মিরাজ ছিলেন পুরোদস্তুর টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান। যার প্রমাণ তিনি রেখেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বেশ কিছু ইনিংসেও। তবু দলের কম্বিনেশনের কারণেই মূলত ব্যাট হাতে খুব বেশি কিছু করার সুযোগ হয় না।

তাই এ বাস্তবতা মেনে নিয়ে দলের প্রয়োজনে ওপরের ব্যাটসম্যানদের যথাযথ সাহায্য করার দিকেই বেশি মনোযোগী মিরাজ, ‘জাতীয় দলে ব্যাটিংয়ে হয়তো ওপরের দিকে তেমন সুযোগ পাচ্ছি না। তবে দল থেকে আমাকে যে ভূমিকা দেওয়া হয়েছে, সেটি দলের জয়ের দিক বিবেচনায় কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। শেষ দিকে ৪০/৫০ রান প্রয়োজন, এমন সময় নেমে আমি যদি অন্য প্রান্তের ব্যাটসম্যানকে সমর্থন দিতে পারি, এটি বড় ব্যাপার। দল আমার কাছে ওই সময় ২০/৩০ রানই চায়। এসব নিয়ে আমি কাজ করছি। বিশ্বকাপের আগের সময়টাতে আরো কাজ করে শতভাগ প্রস্তুতি নিয়ে টুর্নামেন্টে যেতে চাই।’

এসএএস/পিআর