জাতীয়

দাবদাহে পুড়ছে দেশ, অতিষ্ঠ জনজীবন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন রাজু ভাস্কর্য়ের সামনের রাস্তা এক্কেবারে ফাঁকা। প্রচণ্ড রোদের কারণে যান চলাচল নেই বললেই চলে। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় সদামুখরিত টিএসসির ক্যান্টিন চত্বরটিতেও হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষার্থী গাছের ছায়ায় বসে আছেন। পাশেই বেলি ফুলের মালায় সুতা গাঁথছেন এক নারী। রোকেয়া হলের সামনে এক ভ্যানচালককে ঘর্মাক্ত দেহে গন্তব্যে ছুটতে দেখা যায়। ক্লান্ত দেহে বেশ কয়েকজন রিকশাচালককে বিশ্রাম নিতে দেখা যায়। সামনে এগুতেই জহুরুল হক হল গেট থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত তীব্র যানজট দেখা যায়।

Advertisement

এ দৃশ্যপট আজ দুপুর ১২টার। রাজধানীর একদিকে রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকলেও শপিং মল, বিপণিবিতানসহ বিভিন্ন ব্যস্ততম রাস্তায় প্রচণ্ড যানজটের বিপরীত দৃশ্যে দেখা যায়। রাজধানীসহ সারাদেশে প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে বিভিন্ন বয়সী লাখ লাখ নারী, পুরুষ ও শিশুরা ঘরে-বাইরে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সবার মুখে একটাই প্রশ্ন এত গরম কেন? গরম কমবে কখন, বৃষ্টি নামবে কি?

আবহাওয়া অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, আজ (রোববার) থেকে তাপমাত্রা কমবে। আগামীকাল নাগাদ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হতে পারে। অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, আজ দুপুর ১২টায় ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে বেলা যত গড়াবে তাপমাত্রা তত বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন আবহাওয়াবিদরা।

বেলা ১টা থেকে পরবর্তী ছয় ঘণ্টা রাজধানী ঢাকার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দুপুর ১২টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৫২ শতাংশ। গতকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

Advertisement

এদিকে আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে।

এদিকে টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নোয়াখালী, রাজশাহী ও পাবনা অঞ্চলসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং কিছু কিছু জায়গায় তা প্রশমিত হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা ২/১ ডিগ্রি হ্রাস পেতে পারে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রাজশাহীতে ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।

আজ সরেজমিন রাজধানীর ধানমন্ডি, লালবাগ ও রমনা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে কিছু কিছু রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি অপেক্ষাকৃত কম। প্রয়োজন ছাড়া অনেকেই ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। অনেকেই ছাতা মাথায় বের হলেও তবুও গরমে ঘামছেন। তবে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। দিন আনে দিন খায় এ মানুষগুলো গরমের মধ্যেও হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করছেন। ট্রাফিক পুলিশকে রোদে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠতে দেখা যায়। এছাড়া কোথাও কোথাও ট্রাফিক পুলিশকে ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নিতে দেখা যায়।

কোন কোন সড়কে প্রচণ্ড যানজটে যানবাহনকে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে যাত্রীদের ঘামে ভিজতে দেখা যায়।

Advertisement

এমইউ/জেএইচ/আরআইপি