বৈশাখে আগুন ঝরাচ্ছে আকাশ, কাঠফাঁটা রোদে তপ্ত বাতাস। প্রাণ ও প্রকৃতি যখন প্রখর রোদে পুড়ছে, কৃষ্ণচূড়া ফুল তখন জানান দেয় সৌন্দর্যের বার্তা৷ গ্রীষ্মের এ প্রাণহীন রুক্ষতা ছাপিয়ে প্রকৃতিতে কৃষ্ণচূড়া নিজেকে মেলে ধরে আপন মহিমায়৷ যেন রক্ত লাল রঙে হাজারও কৃষ্ণচূড়ার পসরা সাজিয়ে বসে আছে প্রকৃতি৷ প্রাণে আসে নতুন উদ্যম৷ যে কারও চোখে এনে দেবে শিল্পের দ্যোতনা, অবাক চোখে তাকিয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করে সবাই৷ মন ছুঁয়ে রঙিন হয়ে যায় কৃষ্ণচূড়ার রঙে৷ যেন মনের অজান্তেই স্বভাব কবি হয়ে যায় সে৷
Advertisement
এ সময়টাতে গ্রীষ্মের প্রকৃতি চোখ ধাঁধানো টুকটুকে সিঁদুর লাল কৃষ্ণচূড়ায় সাঁজে৷ দূর থেকে দেখলে মনে হয় বৈশাখের চামড়া পোড়া রৌদ্রের সবটুকু গায়ে জড়িয়ে নিয়েছে এ রক্তলাল পুষ্পরাজি ৷ সবুজ পাতার মাঝে যেন আগুনের ফুলকি ছড়াচ্ছে৷ প্রকৃতির এ নিয়মের উল্টো কিছু ঘটেনি ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে৷ ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের পেছনে, পুকুর পাড়ে, শান বাঁধানো পুকুর ঘাটে যেন নিজের সবটুকু উজাড় করে আপন মহিমায় সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া ফুল৷
তাই তো কেউবা দূর থেকে, কেউবা কাছে যেয়ে ক্যামেরাবন্দি করছে এ সৌন্দর্য৷ কেউবা গোসলে নেমে পুকুর জলে ডুব দিয়ে পরক্ষণেই মাথা উঁচিয়ে দেখছে এ সৌন্দর্য৷ বাদ যাচ্ছেন না শিক্ষক, কর্মচারী এমনকি অভিভাবকরাও৷ সন্তানের সাথে ঘুরতে এসে মাথা উঁচিয়ে রক্তবর্ণের কৃষ্ণচূড়া দেখছে আর একে অপরের সাথে বলাবলি করছে, শহুরে জীবনে এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুব কমই দেখা যায়৷
উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায়, কৃষ্ণচূড়া একটি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া (Delonix Regia)৷ এই গাছ চমৎকার পত্রপল্লব ও আগুনলাল কৃষ্ণচূড়া ফুলের জন্য প্রসিদ্ধ৷ এটি ফ্যাবেসি (Fabaceae) পরিবারের অন্তর্গত একটি বৃক্ষ যা গুলমোহর নামেও পরিচিত৷
Advertisement
কৃষ্ণচূড়া গাছের লাল, কমলা, হলুদ ফুল ও উজ্জ্বল সবুজ পাতা এক অন্যরকম দৃষ্টিনন্দন করে তোলে৷ কৃষ্ণচূড়া মাদাগাস্কারের শুষ্কপত্র ঝরা বৃক্ষের জঙ্গলে পাওয়া যায় ৷ যদিও জঙ্গলে এটি বিলুপ্ত, তবুও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি জন্মানো সম্ভব হয়েছে৷ সৌন্দর্যবর্ধক গুন ছাড়াও এ গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত ৷ অবাক করা বিষয় হলো, আমাদের অঞ্চলে সাধারণত এপ্রিল-জুন সময়কালে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফুটলেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এটি ফোটার সময় বিভিন্ন৷
‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরী কর্নে—আমি ভূবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্নে’- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার এমন পঙতি দিয়ে বোঝা যায় কতটা সৌন্দর্য কৃষ্ণচূড়া প্রকৃতিকে দান করেছে৷
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘গন্ধে উদাস হওয়ার মতো উড়ে/তোমার উত্তরী কর্ণে তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জুরী’।
খরতাপ রৌদ্দুরে কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ সৌন্দর্য প্রকৃতির সাঁজ সাঁজ রব আমাদের এক অপার প্রাপ্তির কথা বলে৷ মনে এক অনাবিল সুখ এনে দেয়৷ শহুরে জীবনের রুক্ষতা, যানজট, ভ্যাপসা গরম আর ধুলোবালির বাইরে ক্যাম্পাসের এ কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে এক প্রশান্তির নিশ্বাস নেয়া যায়, কিছুক্ষণের জন্য হলেও মন হারিয়ে যায় প্রকৃতির মাঝে৷
Advertisement
নাহিদ হাসান/এমএআর/পিআর