জাতীয়

ফুটপাতে ‘প্যাকেজ ইফতার’

কর্মব্যস্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বল্প মূল্যে ও সহজে ইফতারে জন্য রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা বিশেষ ‘প্যাকেজ ইফতার’র ব্যবস্থা করেছেন। ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে এই প্যাকেজ ইফতার বিক্রি করা হয়।

Advertisement

রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত অঞ্চল মতিঝিল, ফকিরাপুল অঞ্চলে একাধিক ব্যবসায়ী এভাবে প্যাকেজ ইফতার বিক্রি করেন। খেজুর, ছোলা, মুড়ি, বেগুনি, পেঁয়াজু ও আলুর চপের সমন্বয়ে তৈরি করা হচ্ছে এ বিশেষ প্যাকেজ ইফতার।

মতিঝিলে প্যাকেজ ইফতার সামগ্রী বিক্রি করা ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন মো. খায়রুল। তিনি বলেন, যে কেউ আমাদের কাছ থেকে প্যাকেজ ইফতার কিনে এখানেই ইফতার করতে পারবেন। খেজুর, ছোলা, মুড়ি, বেগুনি, পেঁয়াজু ও আলুর চপের সমন্বয়ে তৈরি এই ইফতার প্যাকেজের জন্য দিতে হবে ২০ টাকা।

তিনি বলেন, রাজধানীর মানুষগুলো অনেক ব্যস্ত। কে কখন কোথায় ইফতার করবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই স্বল্প আয়ের ও কর্মব্যস্ত মানুষগুলোর জন্য আমরা এমন বিশেষ ইফতারির ব্যবস্থা করেছি। কেউ চাইলে প্যাকেজ না নিয়ে আলাদা আলাদা আইটেমও কিনতে পারবেন।

Advertisement

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি অঞ্চলের ফুটপাতেই রয়েছে ইফতার সামগ্রী বিক্রির প্রতিষ্ঠান। অস্থায়ী এসব দোকানে অভিজাত হোটেলের মতো দামি ইফতার সামগ্রী না থাকলেও বাহারি ইফতার সামগ্রীর অভাব নেই। বেগুনি, পেঁয়াজু, ছোলার ঘুঘনি, মুড়ি, জিলাপি, জালি কাবাব, চিকেন হালিম, গরু ও খাসির হালিম, আলু সমুচা, বিফ সমুচা, আলুর চপ, শাকের চপ, ভেজিটেবল রোলসহ বাহারি ইফতার আইটেম বিক্রি করছেন ফুটপাত ব্যবসায়ীরা।

বাণিজ্যিক এলাকা থেকে পাড়া-মহল্লার গলির ফুটপাতেও আছে খণ্ডকালীন এই ইফতার বিক্রেতারা। কোথাও কোথাও সারিবদ্ধভাবে রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে বসানো হয়েছে ইফতারির দোকান। ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে এসব দোকানি রাস্তার ওপর টেবিল পেতে বসে পড়েছেন। সেখান থেকে স্বল্পমূল্যে পছন্দের ইফতার সামগ্রী কিনে নিচ্ছেন রোজদাররা।

রাজধানীজুড়ে গড়ে ওঠা এসব ইফতারির দোকানগুলোতে দুপুরের পর থেকেই শুরু হয় কর্মব্যস্ততা। দোকানিরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন জিলাপি, ছোলার ঘুঘনি, বেগুনি, পেঁয়াজু, আলুর চপ, ডিমের চপ, জালি কাবাব, হালিম, সমুচা, ভেজিটেবল রোল, ভেজিটেবল চপসহ নানা রকমের ইফতার আইটেম, যা আসরের নামাজের পর থেকেই শোভা পেতে থাকে দোকানের সামনে রাখা টেবিলের ওপর।

পাড়া-মহল্লা, বাণিজ্যিক এলাকা ও ব্যস্ততম সড়কগুলোর ফুটপাত ঘিরে গড়ে ওঠা ইফতারির দোকানগুলোতে এলাকাভেদে বেগুনি, পেঁয়াজু, সমচা, আলুর চপ বিক্রি হয়েচ্ছে ৫-১০ টাকা পিস হিসেবে। ডিমের আলুর চপ ১০ থেকে ২০ টাকা, জালি কাবাব ১৫ থেকে ২৫ টাকা, ভেজিটেবল রোল ২০ থেকে ২৫ টাকা, জিলাপি প্রতিকেজি ১২০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা। এছাড়া ৫ টাকা দিয়ে এক পিস জিলাপিও কেনা যাচ্ছে ফুটপাতের এসব দোকান থেকে।

Advertisement

যাত্রাবাড়ী শহীদ ফারুক সড়কের ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বলেন, আমাদের কাছে বেগুনি, পেঁয়াজু, আলুর চপ, খুরমা খেজুর, শাকের চপ, হালিম, জিলাপি, সমুচা, ভেজিটেবল রোল, মুড়ি, ছোলার ঘুঘনিসহ নানা রকমের ইফতার আইটেম রয়েছে। চপ, পেঁয়াজু, শাকের চপ, জিলাপি, সমুচার পিস ৫ টাকা করে বিক্রি করছি। ভেজিটেল রোল ২০ টাকা। আর হালিমের বাটি ৪০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায় পাওয়া যাবে।

ধলপুর কমিউনিটি সেন্টারের পাশে ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসা মো. হালিম বলেন, আমাদের কাছ থেকে ৫ টাকা পিস হিসেবে বেগুনি, পেঁয়াজু, আলুর চপ, সমুচা, শাকের চপ পাওয়া যাবে। ডিমের চপ আছে ১৫ টাকা দামের। একই দামে পাওয়া যাবে ভেজিটেলব রোল। হালিম আছে ৬০ টাকা থেকে ২০০ টাকা বাটি। এছাড়া বুন্দিয়া, জিলাপি, ঘুঘনিও আছে।

এই ব্যবসায়ী বলেন, অনেকে আছেন বাসায় ইফতারি বানাতে পারেন না। তারা আমাদের কাছ থেকে ইফতর সামগ্রী কিনে নিয়ে যায়। আবার কেউ কেই আছেন যারা বাসায় পেঁয়াজু, আলুর চপ বানান, তারা আমাদের কাছ থেকে জিলাপি, বুন্দিয়া, হালিম কিনে নিয়ে যায়।

দিলকুশার ইফতার বিক্রেতা রাশেদ বলেন, আমাদের কাছ থেকে যারা ইফতারি কেনেন তাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন অফিসে চাকরি করেন। আমাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ইফতার আইটেম কিনে নিয়ে গিয়ে অফিসে সবাই মিলে ইফতারি করেন। কয়েকটি অফিসে আমার নিয়মিত কাস্টমার আছে। গত বছর প্রতিটি রোজাই তারা আমার কাছ থেকে ইফতারি কিনেছেন। এবারও প্রথম দুই রোজায় তাদের অনেকে আমার কাছ থেকে ইফতারি কিনেছেন।

এমএএস/এমবিআর/পিআর