বিসিআইএম (বাংলাদেশ, চীন, ভারত, মায়ানমার) অর্থনৈতিক করিডোর বাস্তবায়নের মধ্যে চলমান রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান লুকিয়ে আছে বলে মনে করে চীন। বুধবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জু।
Advertisement
গত মাসে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) ফোরামের সম্মেলনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ বিআরআই উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারের মর্যাদা পাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন চীনের রাষ্ট্রদূত।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ইস্যু চীন গভীরভাবে লক্ষ্য করছে। আমরা আশাকরি বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডোর বাস্তবায়নে সমস্যাটির খুব ভালো সমাধান আসবে।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধান ও প্রত্যাবাসন শুরুর ওপর জোর দেন তিনি। চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশের প্রয়োজন অনুযায়ী গঠনমূলক সহযোগিতায় চীন প্রস্তুত। তিনি বলেন, রাখাইনে উন্নয়ন হলে রোহিঙ্গা সংকট থাকবে না।
Advertisement
এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্টদূত ঝ্যাং জু বলেন, দক্ষিণ এশিয়া থেকে চীনের এক বলয় এক অঞ্চল পরিকল্পনায় যোগ দেয়া প্রথম দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বিআরআই উদ্যোগে বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারের মর্যাদা দেয়া হচ্ছে।
বিসিআইএম করিডোরের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সড়ক যোগাযোগসহ বহুপাক্ষিক যোগাযোগব্যবস্থার বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। আর বিআরআই উদ্যেগের মাধ্যমে বহুমাত্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যৌথ অংশীদারিত্ব স্থাপনের বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে।
চীনের ওই পরিকল্পনায় ভারতের যোগ না দেয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত বছর চীন সফরকালে প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং তাকে বলেছেন যে ভারত ও চীন একসঙ্গে মিলে কোনো কাজ করলে তার ফল এক আর এক দুই নয়, বরং এগারো বা তার চেয়ে বেশি কিছু হবে।
২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের ঢাকা সফরকালে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু হয় এবং প্রায় ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের উন্নয়নের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বিআরআই উদ্যোগের আওতায় এসব উন্নয়ন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
Advertisement
অপর এক প্রশ্নের জবাবে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন বিভিন্ন দেশে সহজ শর্তে মাত্র দুই থেকে তিন শতাংশ সুদে উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ দেয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই সুদের হার প্রযোজ্য। এটা বাণিজ্যিক ঋণের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
তিনি বলেন, ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে চীন কঠিন শর্ত দেয় বলে যে ধরনের অভিযোগের কথা বলা হয়, তা একেবারেই ঠিক নয়। চীন কখনই কঠিন শর্ত আরোপ করে না বরং বন্ধু দেশগুলোর উন্নয়ন প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়নকে গুরুত্ব দেয়।
চীন বাংলাদেশকে কত ঋণ দিয়েছে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশ সহজ শর্তে ১২ দশমিক তিন বিলিয়ন আরএমবি ও বায়ার্স ক্রেডিট হিসেবে তিন দশমিক নয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পেয়েছে। এই ঋণগুলোর সুদের হার দুই থেকে তিন শতাংশ, যা অন্য যেকোনো বাণিজ্যিক ঋণের চেয়ে কম। তিনি বলেন, চীনের অর্থায়নে বাংলাদেশে নয়টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। আরও পাঁচটি প্রকল্প প্রস্তাব পর্যালোচনা পর্যায়ে আছে।
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশই মনে করে এ ঘাটতির কারণ বাংলাদেশের অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা।
রাষ্ট্রদূত জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ ও চীন দু’দেশের জনগণের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য সফর বিনিয়ম অনেক বাড়িয়েছে। গত বছর প্রায় এক হাজার সফর বিনিময় হয়েছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
জেপি/বিএ