খেলাধুলা

স্মৃতিময় সেই মাঠে দু’বছর পর আইরিশদের সঙ্গে দেখা টাইগারদের

দুই বছর পর আবারো ডাবলিনের সেই মালাহাইডের ‘দ্য ভিলেজে’ টাইগারদের সাথে দেখা হচ্ছে স্বাগতিক আইরিশদের। বৃহস্পতিবার মাশরাফির দল আইরিশ বিপক্ষে মাঠে নামবে ত্রিদেশীয় সিরিজে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে। সেই মাঠে, যে মাঠে ২০১৭ সালের ১৯মে শেষ দেখা হয়েছিল দু’দলের।

Advertisement

সেবারও আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ঠিক আগে দিয়ে নিউজিল্যান্ড আর স্বাগতিক আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন জাতি আসরে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশ। এবারের মতই ছিল তার ফরম্যাট। প্রতি দলের সাথে খেলা হয়েছিল দুইবার করে। ২০১৭ সালের ১২মে বৃষ্টির কারণে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ মাঠেই গড়ায়নি।

ফিরতি পর্বে আবার দেখা হয়েছিল বাংলাদেশ আর আয়ারল্যান্ডের। সেই ম্যাচে হেসেখেলে জিতেছিল মাশরাফিরা। মাত্র ২৪ ঘন্টা আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে যে ব্যবধানে জিতেছে টাইগাররা, ২০১৭ সালে ঠিক সেই ৮ উইকেটে আইরিশদের হারিয়েছিল বাংলাদেশ।

মঙ্গলবার ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে যেমন টিম পারফরমেন্সে ধরা দিয়েছিল সহজ ও অনায়াস জয়। দু’বছর আগে এই ‘দ্য ভিলেজেও’ আইরিশদের বিপক্ষে তেমন সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও দারুণ টিম পারফরমেন্সে জিতেছিল বাংলাদেশ।

Advertisement

সে ম্যাচের হিরো ছিলেন দু’জন; মোস্তাফিজুর রহমান আর সৌম্য সরকার। কাটার মাস্টার বল হাতে জ্বলে উঠে প্রথম সেশনেই আইরিশদের ব্যাটিং মেরুদন্ড ভেঙ্গে গড়ে দিয়েছিলেন জয়ের ভিত।

আয়ারল্যান্ডের বিপজ্জনক ওপেনার স্টারলিংকে নিজের প্রথম ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে শূন্য রানে ফেরত পাঠিয়ে বোলিং তান্ডব শুরু করে কাটার মাস্টার। এরপর মিডল অর্ডারের ওপরও আঘাত হানেন এ বাঁ-হাতি পেসার। তার বিষাক্ত সুইং ও কাটারে (৯-২-২৩-৪) আয়ারল্যান্ডের একজন ব্যাটসম্যানও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি।

অবশ্য অধিনায়ক মাশরাফি (৬.৩-১-১৮-২) ও বাঁ-হাতি স্পিনার সানজামুল ইসলাম (৫ ওভারে ২/২২) দারুণ সমীহ জাগানো বোলিং করেন। মোটকথা, টাইগারদের সাঁড়াসি বোলিং তোড়ে ১৮১ রানের মামুলি সংগ্রহে শেষ হয় আয়ারল্যান্ডের ইনিংস।

এরপর সৌম্য সরকার ব্যাট হাতে আইরিশ বোলারদের কড়া শাসন করলে ৮ উইকেট হাতে রেখে ১৩৭ বল (২২.৫ ওভার) আগেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। সৌম্যর ব্যাট অপরাজিত থাকে ৮৭ রানে ৬৮ বলে (১১ বাউন্ডারি আর দুই ছক্কায়)। তামিম ইকবাল (৫৪ বলে ৪৭) অল্পের জন্য হাফ সেঞ্চুরি মিস করলেও দলকে ৯১ রানের জুটিতে (১৩.৫ ওভারে) এক শক্ত ভিত গড়তে রাখেন কার্যকর ভূমিকা।

Advertisement

প্রস্তুতি ম্যাচে আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দলের কাছে হারের পর বড় ধরনের হৈ চৈ হয়নি। উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ভর করেনি। তারপরও একটা চাপা সংশয় এসে বাঁধা বেধেছিল। তার যৌক্তিক কারণও ছিল। দুই বছর আগে এই আয়ারল্যান্ডের মাটিতে আইরিশ এ দলকে প্রস্তুতি ম্যাচে উড়িয়ে (১৯৯ রানে হারিয়ে) তিন জাতি ট্রফি শুরু করেছিল মাশরাফির দল। এবার সেই দলের কাছে উল্টো ৮৮ রানের হার।

একটু হলেও চিন্তার খোরাক ছিল বৈকি। কিন্তু টাইগাররা জায়গামত বল ও ব্যাট হাতে জ্বলে উঠে সে চিন্তা ও সংশয় দুর করেন। প্রস্তুতি ম্যাচের অনুজ্জ্বল বাংলাদেশের বদলে ক্রিকেট বিশ্ব দেখেছে দারুণ উজ্জিবীত, উদ্দিপ্ত আর ভাল খেলে জয়ের দূর্নিবার আকাঙ্খার মাশরাফি বাহিনীকে।

অধিনায়ক মাশরাফি, মোস্তাফিজ, সাইফউদ্দিন আর ওপেনার সৌম্য সরকারের অন্তর্ভুক্তিতেই পাল্টে গেছে গোটা দলের চেহারা। তাদের তেজোদ্দীপ্ত নৈপুণ্যের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি ক্যারিবীয়রা।

মঙ্গলবারের ম্যাচে অনেকদিন পর বাংলাদেশের বোলিং, ব্যাটিং আর ফিল্ডিং- একসাথে জ্বলে উঠেছে। যা সচরাচর দেখা যায় না। বেশিরভাগ ম্যাচে দেখা যায়, বোলিং ভাল হয়তো ব্যাটিং ভাল হয় না। আবার ব্যাটিং ভাল হলে বোলিং-ফিল্ডিং-ক্যাচিং হয় খারাপ; কিন্তু মঙ্গলবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সব ডিপার্টমেন্টেই দারুণ ভাল খেলেছেন টাইগাররা।

প্রত্যেকের শরীরের ভাষাও বলে দিচ্ছিল, ‘আমরা জিততে মরিয়া। জেতার জন্য যা যা দরকার, আমরা তা ঠিকমত করতে বদ্ধপরিকর।’ মাঠে তার প্রমাণও মিলেছে। আগের ম্যাচে স্বাগাতিক আইরিশ বোলারদের সাধারণ মানে নামিয়ে এনে উদ্বোধনী জুটিতে ৩৬৫ রানের বিশ্ব রেকর্ড গড়ে আকাশছোঁয়া আত্মবিশ্বাস ও প্রগাঢ় আস্থায় মাঠে নেমেছিলেন ক্যারিবীয় ওপেনার শাই হোপ।

ইনজুরির কারণে ক্যাম্পবেল খেলতে পারেননি। তার পরিবর্তে সাই হোপের সাথে ওপেন করেন সুনিল আম্ব্রিস। মঙ্গলবার শুরুতে তাদের সেই জুটি ভাঙ্গতে কষ্ট হয়েছে। বিলম্বও ঘটেছে। তারপরও এক সময় মনে হয়েছে ক্যারিবীয়দের রান ৩০০ পেরিয়ে যাবে। ৪০ ওভার শেষে রান ছিল ২ দুইকেটে ২০৫। এরকম অবস্থায় অধিনায়ক মাশিরাফি ম্যাজিকে বদলে যায় চালচিত্র।

মাশরাফি এক ওভারে সেঞ্চুরিয়ান সাই হোপ (১০৭) আর অধিনায়ক জেসন হোল্ডারকে (৪) ফিরিয়ে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেন। তারপর সাইফউদ্দিনও শেষ স্পেলে দুই উইকেটের পতন ঘটালে ২৬১-তে আটকে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

সেই রান টপকাতে দরকার ছিল সতর্ক-সাবধানী আর আত্ববিশ্বাসী ব্যাটিং। কারণ উইকেট শতভাগ ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি ছিল না। ওদিকে ক্যারিবীয় ফ্রন্টলাইন বোলিংও ছিল বেশ ধারালো। শেল্ডন কটরেল, কেমার রোচ, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল আর জেসন হোল্ডারের বিপক্ষে সৌম্য সরকার আর তামিম শুরুতে যথার্থ ব্যাটিং অ্যাপ্রোচটাই দেখিয়েছেন।

তেড়েফুঁড়ে ব্যাট না চালিয়ে, উচ্চাভিলাসি ও ঝুঁকিপূর্ণ শট না খেলে, উইকেটের গতি আর প্রকৃতি ঠাউরে একদম প্রথাগত ব্যাটিং করে প্রথম উইকেটেই খেলার পুরো নিয়ন্ত্রন হাতের মুঠোয় নিয়ে নিয়েছেন তামিম ও সৌম্য। বোঝাই গেছে দুজনার দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ ছিল ভিন্ন। তামিম একদিক আগলে রেখে খেলেছেন ৫০-এর আশপাশে স্ট্রাইকরেটে।

আর সৌম্য প্রায় শুরু থেকে ১০০’র আশ-পাশে স্ট্রাইকরেটে খেলে হিসেব সহজ করে ফেলেন। তাদের সাজানো পথে সাকিব ও মুশফিক হাঁটলে খুব সহজেই জয়ের বন্দরে পৌছে যায় বাংলাদেশ।

আয়ারল্যান্ডকে তুলোধুনো করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ক্যারিবীয়দের উড়িয়ে দিয়েছে মাশরাফির দল। সাধারণ সমীকরণে আইরিশদের পেরে ওঠার কথা নয়। খাবি খাওয়ার কথা; কিন্তু খেলাটি ক্রিকেট। যার পরতে পরতে অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে থাকে। আগের ম্যাচের চালচিত্র এখন অতীত। ইতিহাস।

বাংলাদেশ আগের দিন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পাত্তাই দেয়নি। আর আয়ারল্যান্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি। এই ভেবে হিসেব-নিকেশ করলে চলবে না। বাংলাদেশকে বৃহস্পতিবার ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে সামর্থ্যের সেরাটা উপহার দিতে হবে। সেটাই শেষ কথা।

এআরবি/আইএইচএস/এমকেএইচ