এ বছর শরীয়তপুর জেলায় ১৫ কোটি ৮৭ লাখ ৫৪ হাজার কেজি (১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৫৪ মেট্রিক টন) ধান উৎপাদন হচ্ছে। প্রত্যেক কেজি ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয়েছে ১৭ টাকা। আর বর্তমান বাজার মূল্য পাচ্ছে ১৩ টাকা। প্রতিকেজি ধানে কৃষকের লোকসান গুনতে হচ্ছে চার টাকা। এমন পরিস্থিতিতে ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছে কৃষক।
Advertisement
শরীয়তপুর থেকে চলতি মৌসুমে খাদ্য বিভাগ ১ লাখ ৬৭ হাজার কেজি (১৬৭ মেট্রিক টন) ধান কেনার বরাদ্দ পেয়েছে। দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতিকেজি ২৬ টাকা। গত ২৫ এপ্রিল থেকে ধান কেনার কথা থাকলেও কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। জেলায় উৎপাদনের এক শতাংশ ধান সরকারিভাবে কেনা হচ্ছে। বাকি ৯৯ শতাংশ ধান কৃষককে স্থানীয় বাজারে কম দামে বিক্রি করতে হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুরে চলতি মৌসুমে ২৭ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। ওই পরিমাণ জমিতে ধান উৎপাদন হবে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৫৪ মেট্রিক টন। যার মধ্যে জেলা খাদ্য বিভাগ ১৬৭ মেট্রিক টন ধান কৃষকের কাছ থেকে আর ৩৫৫ মেট্রিক টন চাল মিল মালিকদের কাছ থেকে কিনবেন। ধানের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতিকেজি ২৬ টাকা। আর চালের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ টাকা। ২৫ এপ্রিল থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে।
> আরও পড়ুন- ক্ষতির আশঙ্কায় আগাম ধান কাটছে কৃষকরা
Advertisement
নড়িয়া উপজেলার বিঝারি ইউনিয়নের কন্ডা গ্রামের কৃষক বকসু মাদবর ১০ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। তার প্রতিবিঘায় খরচ হয়েছে হালচাষ বাবদ ১ হাজার ৫০০ টাকা, চারা ৫০০ টাকা, রোপণ করার শ্রমিক ১ হাজার ৫০০ টাকা, সার ৩ হাজার ২শ টাকা, জমি নিড়ানিতে শ্রমিক খরচ ২ হাজার ৪শ টাকা, সেচ খরচ হয়েছে ২ হাজার ৫শ টাকা ও ধান কাটতে খরচ হয়েছে ২ হাজার টাকা। তার মোট খরচ হয়েছে ১৩ হাজার ৬০০ টাকা। তিনি বিঘাপ্রতি ধান পেয়েছেন ৮০০ কেজি। সে হিসেবে প্রতি কেজিতে বকসু মাদবরের খরচ হয়েছে ১৭ টাকা।
বকসু মাদবর বলেন, ‘সারা বছরের খাদ্য নিশ্চয়তার জন্য লোকসান দিয়ে ধানের আবাদ করি। বাজারে ৫২০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা দামে প্রতি মণ ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রতি কেজি ধানে ৪ টাকা লোকসান দিচ্ছি। অথচ এই জমি ভাড়া দিলেও বিঘাপ্রতি বছরে ১০ হাজার টাকা ভাড়া পেতাম।’
ভেদরগঞ্জ উপজেলার পাপরাইল গ্রামের কৃষক মকবুল বেপারী বলেন, ‘আমি ৫ বিঘা জমিতে ২৮ জাতের বোরো ধান আবাদ করেছি। এক আত্মীয়ের কাছ থেকে টাকা ঋণ নিয়ে জমিতে ধানের আবাদ করেছিলাম। টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য কম দামে ধান বিক্রি করে দিচ্ছি। কম দামে বিক্রি করাতে আমার ১৬ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। শুনেছি খাদ্য বিভাগ ২৬ টাকা দামে ধান কিনবে। কিন্তু তারা তো আমাদের কাছ থেকে ধান কিনছে না। সরকার আমাদের ধান কিনলে লোকসান হতো না।’
> আরও পড়ুন- বৈশাখের আনন্দ নেই বোরো চাষিদের মনে
Advertisement
সদর উপজেলার দাদপুর গ্রামের কৃষক মোসলেহ উদ্দিন বলেন, ‘উৎপাদনের এক শতাংশ ধান খাদ্য বিভাগ কিনছে। তা-ও আবার ফরিয়াদের কাছ থেকে কিনছে। সরকারও আমাদের ধান কিনছে না। আবার খোলা বাজারেও ধানের দাম কম। আমরা কোথায় যাবো? অথচ খোলা বাজারে চালের দামও বেশি।’
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক খোন্দকার নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য কৃষি বিভাগে তালিকা চাওয়া হয়েছে। তারা তালিকা ও উৎপাদনের তথ্য দিলে খাদ্য বিভাগ ধান কেনার কার্যক্রম শুরু করবে। কৃষি বিভাগ থেকে তালিকা না পাওয়ায় এখনো ধান-চাল কেনার কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক রিফাতুল হোসাইন বলেন, ‘ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে, যা কৃষককে আনন্দিত করেছে। আবার ধানের দাম কম থাকায় কৃষকের চোখে পানি আছে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনার জন্য। সরকারিভাবে খুবই সামান্য ধান-চাল শরীয়তপুর থেকে সংগ্রহ করা হবে। তবে শিগগিরই খাদ্য বিভাগের কাছে তালিকা হস্তান্তর করা হবে।’
মো. ছগির হোসেন/এসইউ/এমকেএইচ