পঞ্চগড় জেলা কারাগারে (কারা হেফাজতে) আইনজীবী পলাশ কুমার রায় অগ্নিদগ্ধ হওয়া এবং পরে হাসপাতালে মৃত্যুর ঘটনায় বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (৮ মে) হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
Advertisement
পঞ্চগড়ের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে একজন বিচারিক হাকিমকে দিয়ে এই তদন্ত সম্পন্ন করে ৩০ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। তদন্ত করার সময় বিচারিক হাকিমকে (ম্যাজিস্ট্রেট) পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক, জেল সুপার ও পুলিশ সুপারকে এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালত এ মামলার পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য আগামী ২৩ জুন দিন নির্ধারণ করেছেন।
আদেশের সঙ্গে সঙ্গে রুল জারি করেছেন আদালত। রুলে কারাগারে কারাবন্দিকে যথাযথ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না -তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইজি প্রিজন, পঞ্চগড় কারা কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান।
Advertisement
আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, আইনজীবী পলাশের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করি। ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত আজ (বুধবার) এ আদেশ দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এ সময় আদালত বলেছেন, এ ব্যক্তি যদি আত্মহত্যা করে থাকেন, তাহলে সেটিও বের হয়ে আসা দরকার। কারাগারের মধ্যে গায়ে আগুন দেওয়ার মত পদার্থ সে কোথায় পেল? সেটি বের হয়ে আসা উচিত।
গত সোমবার (৬ মে) ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন জনস্বার্থে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট দায়ের করেন। রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইজি প্রিজন, পঞ্চগড় কারা কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টেদের বিবাদী করা হয়।
গত ৫ মে পঞ্চগড় জেলা কারাগারে (কারা হেফাজতে) থাকা অবস্থায় আইনজীবী পলাশ কুমার রায়কে পরিকল্পিতভাবে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। ওই বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান তিনি।
Advertisement
এর আগে গত ২৫ মার্চ দুপুরে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে কোহিনুর কেমিক্যাল কোম্পানি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে পরিবারের লোকজন নিয়ে অনশন শুরু করেন পলাশ কুমার রায়। পরে সেখান থেকে ওঠে তারা জেলা শহরের শের-ই-বাংলা পার্ক সংলগ্ন মহাসড়কে মানববন্ধন করেন।
এর একপর্যায়ে রাস্তা বন্ধ করে হ্যান্ডমাইকের সাহায্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে কটূক্তি করেন পলাশ। এছাড়া প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী সম্পর্কেও অশালীন বক্তব্য দেন। পরে ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয়রা তাকে সদর থানা পুলিশের কাছে তুলে দেন। একই দিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করার অভিযোগে স্থানীয় রাজিব রানা নামে এক যুবক তার বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন। এরপর সেদিনই তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
আইনজীবী পলাশকে গত ২৬ এপ্রিল বিকেলে ঢাকা পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু সকালে হঠাৎ হাসপাতালের বাইরে থাকা একটি টয়লেট থেকে সে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় দৌড়ে বের হয়। এ সময় কারারক্ষীরা তাকে উদ্ধার করে এবং শরীরের আগুন নেভান। তার শরীরের ৪৭ শতাংশ পুড়ে যায়। রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরদিনই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। পরে গত ৩০ এপ্রিল দুপুরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এফএইচ/আরএস/জেআইএম