বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে অস্থিরতা, টানাপোড়েন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে একের পর এক বেরিয়ে আসছে ছোট দলগুলো। জাতীয় পার্টির (এরশাদ) নেতৃত্বে কে আসবেন, তা নিয়ে দেবর-ভাবির প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব যেমন দেখা যাচ্ছে তেমনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যে নিশ্চিন্তে আছে সেটাও বলা যাচ্ছে না।
Advertisement
কারণ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে স্পষ্ট বিভেদ দেখা দেয়। এই বিভেদ কাটিয়ে আসন্ন জাতীয় সম্মেলন, মুজিব বর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে চায় টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসা দলটি। এ কারণে আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে ফের ঐক্যবদ্ধ করতে নতুন মিশনে নামার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য বেছে নেয়া হয়েছে পবিত্র রমজান মাস।
আরও পড়ুন >> আ.লীগের পরিকল্পনায় ‘ঐক্যবদ্ধ সংগঠন’
দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কাছ থেকে জানা গেছে, ইতোমধ্যে গত ১৯ এপ্রিল আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের যৌথ সভায় এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় উপস্থিত নেতাদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, তৃণমূলে অনেক কোন্দল ও গ্রুপিং আছে। যে কারণে উপজেলা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হেরে গেছে অনেক জায়গায়। অতীতে আওয়ামী লীগ যখনই বিপদে পড়েছে এ তৃণমূলই কিন্তু দলকে রক্ষা করেছে। সে কারণে যত দ্বন্দ্ব, সংঘাত বা গ্রুপিং থাকুক না কেন সবকিছু মিটিয়ে ফেলে আওয়ামী লীগকে তৃণমূল পর্যায়ে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।
Advertisement
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের আসন্ন জাতীয় সম্মেলন, মুজিব বর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের আগেই তৃণমূল আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। এজন্য শিগগিরই সাংগঠনিক সফর শুরু করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
নেতারা জানান, আট বিভাগের জন্য আটটি কমিটি গঠন করে তৃণমূলে সফর শুরু হবে। উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা এসব টিমের নেতৃত্বে থাকবেন। বিভাগীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা এসব সফরের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা সাংগঠনিক সম্পাদকদের কাছে আট বিভাগীয় কমিটির বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। কমিটিতে কাদের রাখা হবে, সে বিষয়ে সবার মতামত নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি।
দলটির নেতারা জানিয়েছেন, তৃণমূলে সফরকালে বর্তমান সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি সরকার আগামীতে যেসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে সেগুলো সম্পর্কে জনসাধারণকে ধারণা দেয়া হবে। একই সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে মুজিব বর্ষ উদযাপন ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে এসব সাংগঠনিক সফরে।
Advertisement
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, তৃণমূল সফরের শুরুতেই সাংগঠনিক বিরোধপূর্ণ জেলাগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। বিভিন্ন বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলা সদরে সভা-সমাবেশ করা হবে। তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ করতে প্রতি জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়ার চিন্তা-ভাবনাও চলছে।
গত ২৯ এপ্রিল খুলনা বিভাগের সব জেলা/মহানগর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং সংসদ সদস্যদের নিয়ে এক যৌথ সভা করেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। এর মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ মিশনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির এক নেতা।
আরও পড়ুন >> ৩ টার্গেট বাস্তবায়নে সরকার
তার ভাষ্য অনুযায়ী, আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। রমজান মাসে এবং ঈদের পরও আমাদের সাংগঠনিক এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, তৃণমূলে দলকে আরও শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করার নির্দেশনা রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি।
দলটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আমাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চলমান। আমরা নিয়মিতভাবেই বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করি। সেগুলোও চলমান থাকবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময়ই সক্রিয়। সবসময়ই আমাদের কর্মসূচি থাকে। উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে কিছু জায়গায় নেতাকর্মীদের মাঝে দূরত্ব তৈরি হয়। সেগুলো দূর করে ফের তাদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। এজন্য আমরা কাজ করব।
এইউএ/এমএআর/পিআর