বিশেষ প্রতিবেদন

উৎকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে হাতিরঝিলের পানি

>>১৩টি পথ দিয়ে আসা পানির অধিকাংশ থাকে পয়োবর্জ্য মিশ্রিত>>তীব্র দুর্গন্ধে ওয়াটার ট্যাক্সিতে যাতায়াত এখন অস্বস্তিকর>>আশপাশ এলাকার পচা আবর্জনা ঝিলে প্রবেশ করে নষ্ট করছে পানির স্বচ্ছতা>>সমস্যা সমাধানে ৪৯ কোটি টাকার প্রকল্পটি প্রক্রিয়াধীন

Advertisement

ইট-পাথরে আর কংক্রিটে ঘেরা যান্ত্রিক জীবনে একটু বুকভরে নিশ্বাস নিতে প্রতিদিনই মানুষ আসে হাতিরঝিলে। যানজটের জালে বন্দি রাজধানীবাসীর জন্য পরিবহন ব্যবস্থায় হাতিরঝিলে যুক্ত হওয়া নতুন বাহন ওয়াটার ট্যাক্সিতেও প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করেন। তবে এই মানুষগুলো ইদানীং পড়েছেন সীমাহীন বিড়ম্বনায় আর বিপাকে। কারণ হাতিরঝিলের পানিতে থেকে ভেসে আসছে তীব্র দুর্গন্ধ।

রাজধানীর অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র হয়ে ওঠা হাতিরঝিলের পানি ফিরে যাচ্ছে তার পুরনো রূপে। উৎকট গন্ধ ছড়াচ্ছে এখন এই পানিতে। দুর্গন্ধে লেকের পানিতে বোটিং কিংবা পাশ দিয়ে হেঁটে বেড়ানো দুষ্কর হয়ে উঠেছে। নগরবাসীর নির্মল শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার এ মুক্ত বিনোদনকেন্দ্রের পানি দূষিত হয়ে ওঠায় হতাশ এই পথে চলাচলকারীরা। বর্তমানে এই দুর্গন্ধ এতই তীব্র আকার ধারণ করেছে যে, নাকে রুমাল চাপা ছাড়া কেউই ওয়াটার ট্যাক্সিতে চলাচল করতে পারছেন না।

জানা গেছে, মহাখালী, পান্থপথ, কারওয়ান বাজার, কাঁঠালবাগান, নিকেতন, রামপুরা, বাড্ডা, তেজগাঁও, মগবাজার, বেগুনবাড়ী, মধুবাগ এলাকার ১৩টি পথ দিয়ে পানি আসে হাতিরঝিলে। এই পানির অধিকাংশ থাকে পয়োবর্জ্য মিশ্রিত। এ সমস্যা সমাধানের জন্য হাতিরঝিলে পানি নামার ৯টি পথে বর্জ্যশোধনের যন্ত্র বসানো হয়েছিল কিন্তু ইতোমধ্যেই কয়েকটি যন্ত্র নষ্ট হয়ে গেছে। আর পানির চাপ বেশি থাকলে এই যন্ত্রগুলো কাজ করে না। ফলে হাতিরঝিলের পানি থেকে উৎকট দুর্গন্ধ সৃষ্টি হচ্ছে। ড্রেন দিয়ে আশপাশে এলাকার পচা আবর্জনা ঝিলে প্রবেশ করে নষ্ট করছে পানির স্বচ্ছতা। এ পানি অনেক দিন ঝিলে আটকে থাকায় ক্রমেই পানির রঙ কালো, সবুজ, ধূসর রঙ ধারণ করেছে। যে কারণে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র দুর্গন্ধের।

Advertisement

হাতিরঝিলের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি সহজে যাতায়াত করতে হাতিরঝিলে ‘ওয়াটার ট্যাক্সি’ সার্ভিসটি খুব অল্প সময়েই জনপ্রিয়তা পায়। হাতিরঝিলে চারটি স্থান থেকে ওয়াটার ট্যাক্সি চলাচল করে। গুলশান-১ গুদারাঘাট, এফডিসি মোড়, রামপুরা ব্রিজ ও পুলিশ প্লাজা থেকে চলাচল করে ওয়াটার ট্যাক্সি। এসব স্থান থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। কিন্তু হাতিরঝিলের পানিতে তীব্র দুর্গন্ধের কারণে এসব যাত্রীদের কাছে দুর্গন্ধের বিড়ম্বনা প্রকোপ আকার ধারণ করেছে।

গুলশান-১ সংলগ্ন গুদারাঘাট থেকে ওয়াটার ট্যাক্সিতে করে প্রতিদিন এফডিসি-সংলগ্ন ঘাট পর্যন্ত চলাচল করেন শরিফ আহমেদ নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বলেন, ‘আমার বাসা বাড্ডা আর অফিস কারওয়ান বাজার, যে কারণে প্রতিদিনই ওয়াটার ট্যাক্সিতে করে চলাচল করি।’ তিনি বলেন, ‘যানজটহীনতার কারণে সবার কাছেই জনপ্রিয় ওয়াটার ট্যাক্সির রুটগুলো। তবে ইদানীং হাতিরঝিলে পানিতে এতটাই তীব্র দুর্গন্ধ যে, রুমাল দিয়ে নাক ঢেকে চলাচল করতে হয়।’

ওয়াটার ট্যাক্সির একজন চালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘পুরো হাতিরঝিলের পানিতে এখন দুর্গন্ধ। রঙ-ও কালচে হয়ে গেছে। এর মধ্যে দিয়ে যখন ওয়াটার ট্যাক্সি চলাচল করে তখন ইঞ্জিনের কারণে সৃষ্ট ঢেউয়ে অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। তখন দুর্গন্ধের কারণে যাত্রীদের ওয়াটার ট্যাক্সিতে বসে থাকাই কষ্টকর হয়ে পড়ে। সবাই ওয়াটার ট্যাক্সিতে নাক চেপে ধরে হাতিরঝিল পার হন। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের যাত্রী কমে যাবে। তাই এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।’

জানা গেছে, হাতিরঝিলের পানিতে দুর্গন্ধ সমস্যা সমাধানের জন্য পানি পরিশোধনের একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় পানিশোধনের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় তৈরি হাই-ক্যাপাসিটি এয়ার কম্প্রেসর স্থাপনসহ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। দূষণের প্রধান উৎস পান্থপথ বক্স কালভার্ট থেকে আসা পয়োবর্জ্য যাতে ঝিলে ছড়িয়ে না পড়ে, সে ব্যবস্থা করা হবে। প্রায় ৪৯ কোটি টাকার প্রকল্পটি আগামী বছরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

Advertisement

হাতিরঝিলে পানিতে দুর্গন্ধ বিষয়ে হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক (রাজউক) এস এম রায়হানুল ফেরদৌস জাগো নিউজকে বলেন, ‘হাতিরঝিলের পানিতে দুর্গন্ধ দূর করার জন্য আমরা কাজ করছি। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটির জন্য বেশ কিছু যন্ত্রপাতি অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করতে হবে। এটি প্রক্রিয়াধীন আছে। এটি বাস্তবায়ন হলে আশা করা যায় হাতিরঝিলের পানিতে আর কোনো দুর্গন্ধ থাকবে না।’

এএস/এসআর/এমকেএইচ