ভ্রমণ

রোমান সাম্রাজ্যের চোখ জুড়‌ানো নিদর্শন ব্লু মস্ক-হাজিয়া সোফিয়া

শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে বসে ইস্তাম্বুল শহরটা দেখতে ভালোই লাগছিল। পাশে বসে গাইড যখন রোম সাম্রাজ্যের ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন তখন মনপ্রাণ রোমাঞ্চিত হয়ে উঠছিল। ইতিহাস শুনে স্বচক্ষে ব্লু মস্ক, হাজিয়া সুফিয়া, তোপকাপি প্যালেস দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠলাম।

Advertisement

সরু রাস্তা। উপর থেকে নিচে নামছে গাড়ি। হঠাৎ করে গাইড বললেন, ‘সামনে একটু যানজট আছে, এখানে নেমে গেলে পায়ে হাঁটা পথে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারব।’ যে কথা সেই কাজ। দ্রুত পা চালিয়ে গাইডের সঙ্গে সঙ্গ আমরা চলতে লাগলাম। দ‌ু’চোখ মেলে দেখতে থাকলাম স্থাপনাগুলো।

ব্লু মস্ক

কৃষ্ণ সাগরের তীরে বসফোরাস নদীর দুইপাড় ঘিরে গড়ে উঠেছে ঐতিহ্য ও ইসলামি আভিজাত্যের নিদর্শনের অন্যতম স্মারক ইস্তাম্বুল। এটি পৃথিবীর একমাত্র শহর যা দুই মহাদেশের (এশিয়া ও ইউরোপ) অংশ। এটি সাত পাহাড়ের শহর নামেও পরিচিত। আর ইস্তাম্বুলে মুসলিম ঐতিহ্যের নিদর্শন বুকে নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সুলতান আহমেদ মসজিদ। নীল গম্বুজের কারণে এটি সবার কাছে ‘ব্লু মসজিদ’ নামেই বেশি পরিচিত। পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের স্থান ইস্তাম্বুলের হাজিয়া সুফিয়া মিউজিয়ামের সামনে এটি অবস্থিত।

Advertisement

গাইড জানালেন, উসমানিয়া সুলতান আহমেদ ১৬০৩ থেকে ১৬০৯ সালের মধ্যে মসজিদটি নির্মাণ করেন। মূলত অটোমান সাম্রাজ্যের নিদর্শন হিসেবে এই মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন তিনি। তৎকালীন অটোমান সুলতানের নামানুসারে এ মসজিদের নাম রাখা হয় ‘সুলতান আহমেদ মসজিদ’। সুলতানের নির্দেশে তুর্কির ঐহিত্যবাহী কারুকাজে হাতের নকশায় প্রায় ২০ হাজার জৌলুশপূর্ণ নীল রঙয়ের টাইলসে গড়ে তোলা হয়েছে মসজিদের ভেতরের দেয়াল। এর নীল গম্বুজেও নীল টাইলসে আবৃত। টাইলসগুলোর রঙ ও সৌন্দর্য সুলতান আহমেদ মসজিদে যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা।

মসজিদের ভেতরে ঢুকলে মনে হবে সমুদের নীল জলরাশি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এখানে সেখানে। মূলত এ কারণেই মূল নামের বদলে এটি সবার কাছে ‘ব্লু মস্ক’ নামেই বেশি খ্যাতি পেয়েছে। ইসলামি ক্যালিওগ্রাফির নিপুণ উপস্থাপনা পুরো মসজিদকে জড়িয়ে রেখেছে শুভ্র পবিত্রতায়।

ছোট ছোট তেলবাতির মৃদু আলো মসজিদের গাম্ভীর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহু গুণ। মসজিদের প্রধান গম্বুজের দৈর্ঘ্য ৪৩ মিটার। সুউচ্চ ছয়টি মিনারের প্রতিটি ৬৪ মিটার লম্বা। সুলতান আহমেদ মসজিদে সাড়ে ২৩ মিটার উচ্চতার আটটি মধ্যম আকৃতির গম্বুজ রয়েছে। জানালা রয়েছে প্রায় চারশ’ টি। নীলের ভেতর সবুজ, সাদা ও মেরুন রঙয়ের কাঁচঘেরা কলাম ছাদের প্রতিটি অংশ চোখ জুড়িয়ে দেয়।

হাজিয়া সুফিয়া

Advertisement

ব্লু মস্কের অদূরেই হাজিয়া সোফিয়া। এটি স্থাপন করা হয়েছিল মূলত অর্থোডক্স গির্জা হিসেবে। গির্জা স্থাপনাটি অর্থোডক্স গির্জা হিসেবে স্থাপনের পর থেকে ১২০৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়, যা ১২৬১ সাল পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়। তারপর এটি পুনরায় অর্থোডক্স গির্জায় রূপান্তর করা হয়। যার মেয়াদকাল ১২৬১ থেকে ১৪৫৩ সাল পর্যন্ত। পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে তুরস্ক মুসলিম সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। ফলে এই স্থাপনাটিকে মসজিদে রূপান্তর করা হয় যার নতুন নামকরণ করা হয় ‘ইম্পেরিয়াল মসজিদ’ যা প্রায় ৫০০ বছর স্থায়ী হয়।

জানা গেছে, ১৯৩৪ সালে হাজিয়া সুফিয়া মসজিদটি মিউজিয়ামে রূপান্তরের পর ইস্তাম্বুলের প্রধান মসজিদে পরিণত হয় ‘ব্লু মসজিদ’। প্রায় ১০ হাজার মুসল্লি এখানে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। আশপাশের চত্বরসহ এ মসজিদকে ইস্তাম্বুলের সবচেয়ে বড় কমপ্লেক্স বলা হয়। কমপ্লেক্সের আওতায় কয়েকটি মাদরাসা, দোকানপাট ও হলরুম রয়েছে।

এমইউ/এসআর/এমকেএইচ