খেলাধুলা

পিচের ধাঁধা মেলাতে বরফ ঠান্ডাতেও ঘাম ছুটছে টাইগারদের

দেশে যে কয়েকদিন অনুশীলন করেছেন তামিম-মুশফিকরা, সে কয়েকদিন প্রচণ্ড গরমের তীব্র দাবদাহে দুপুরের আগেই শেষ করতে হয়েছে ব্যাটিং-বোলিংয়ের ঝালিয়ে নেয়ার কার্যক্রম। অথচ আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে গিয়ে টাইগার ক্রিকেটারদের মুখোমুখি হতে হয়েছে পুরোপুরি বিপরীত কন্ডিশনের।

Advertisement

হাড় কাঁপানো শীতের সঙ্গে কনকনে বাতাসে ব্যাট-বল হাতে নামার আগে নিজেদের শরীর গরম করে নেয়াটাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে দলের ক্রিকেটারদের জন্য। এর সঙ্গে আবার আয়ারল্যান্ডের উইকেটের গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খাওয়ার অবস্থা হয়েছে তামিম-মুশফিকদের।

তাই তো আয়ারল্যান্ড ‘এ’ তথা ওলভসের বিপক্ষে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে ৮৮ রানের বড় ব্যবধানে হেরে গিয়েছে বাংলাদেশ দল। এক সাকিব আল হাসানের ৫৪ ব্যতীত আর কেউই বলার মতো রান করতে পারেননি, বল হাতেও তেমন প্রভাব ফেলতে পারেননি রুবেল-তাসকিনরা।

প্রস্তুতি ম্যাচের এমন ভরাডুবির কারণ হিসেবে বিরুপ কন্ডিশন এবং উইকেটের ধরনকে দাঁড় করিয়েছেন ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জি। তার মতে দলের অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা বিরুদ্ধ কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার টোটকা জানলেও বাকিদের জন্য এটি খুব বড় চ্যালেঞ্জ। এর সঙ্গে আবার উইকেটের পার্থক্যটাও কাজ আরও কঠিন করে দিচ্ছে বলে জানান সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান এ ক্রিকেটার।

Advertisement

রোববার প্রস্তুতি ম্যাচ শেষে সংবাদমাধ্যমে ম্যাকেঞ্জি বলেন, ‘ভিন্ন ভিন্ন কন্ডিশনে খেলার অভিজ্ঞতা ও কৌশলটা সিনিয়র খেলোয়াড়দের রয়েছে। এখানের আবহাওয়ার অনেক ঠান্ডা। তবে এর চেয়েও বড় সমস্যা হলো উইকেট। যে কারণে আপনার লাইন-লেন্থে পরিবর্তন আনতে হয় এবং স্কোরিং অপশনগুলাও বদলে যায়। তাই আমার মনে হয় আবহাওয়ার চেয়েও উইকেটের ধাঁধা মেলানোটাই এখানে বড় চ্যালেঞ্জ। এখানের পিচ কন্ডিশন আলাদা হওয়ার কারণে বিভিন্ন ধরনের বোলারদের মোকাবেলা করতে হয়।’

এসময় দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা অস্ট্রেলিয়ার পিচের সঙ্গে ইংল্যান্ডের পিচের তুলনা করতে গিয়ে টাইগার ব্যাটিং কোচ বলেন, ‘আমাদের খেলোয়াড়দের নিজেদের সামর্থ্যের প্রতি আস্থা রাখতে হবে। আপনি জানেন ইংল্যান্ডের উইকেট কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়ার মতো গতিময় নয়। তাই আমার মনে হয় না টেকনিক্যাল দিকগুলো নিয়ে চিন্তার কিছু রয়েছে। অবশ্যই ইংল্যান্ডে বোলিং করার সময় স্লো বাউন্সারগুলো উইকেটে গ্রিপ করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে আপনি দূর থেকেই লেগসাইডে বলের দিকে ব্যাট চালাতে পারবেন। কিন্তু ইংল্যান্ডে আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে, বলের পিচ পর্যন্ত পৌঁছে সময় নিয়ে শট খেলতে হবে। এজন্য আমরা বিভিন্ন টেকনিক্যাল দিক নিয়ে কাজ করেছি।’

বাংলাদেশের প্রধান কোচ স্টিভ রোডস নিজেই ইংল্যান্ডের নাগরিক। এছাড়া বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ এবং ব্যাটিং কোচ ম্যাকেঞ্জিও ইংল্যান্ডে খেলেছেন লম্বা সময়। তাদের এ অভিজ্ঞতা জাতীয় দলের বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারবে বলে মনে করেন ম্যাকেঞ্জি।

Advertisement

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান কোচ স্টিভ রোডস ইংল্যান্ডের নাগরিক হওয়ায় এদেশের কন্ডিশন সম্পর্কে তার ধারণা বেশ ভালো। এছাড়া বোলিং কোচ (কোর্টনি) ওয়ালশও ইংল্যান্ডে লম্বা সময় খেলেছে। তাদের এদেশে উইকেট এবং কন্ডিশন সম্পর্কে ধারণা রয়েছে। আমি নিজেও এখানে পাঁচ বছর খেলেছি। তো আমরা চেষ্টা করবো ভিন্ন ভিন্ন কন্ডিশন এবং উইকেটের জন্য আলাদা আলাদা পরিকল্পনা নিয়ে খেলার। আমরা চেষ্টা করবো ছেলেদেরকে সেভাবেই দীক্ষা দিতে। তবে মাঠের কাজটা অবশ্যই তাদের নিজেরই করতে হবে।’

ম্যাকেঞ্জির শেষ সংলাপ, ‘আমাদের দলের খেলোয়াড়দের মান সম্পর্কে কোনো সন্দেহ নেই। তারা যদি উইকেটে সময় কাটাতে পারে, তাহলে নিজেরাই বুঝতে পারবে কীভাবে খেলতে হবে। আমরা শুধু চেষ্টা করছি তারা যাতে এ কাজটি দ্রুততার সঙ্গে করতে পারে। আমরা কিছুদিন আগেই নিউজিল্যান্ডে খেলেছি। এখন আমরা ত্রিদেশীয় সিরিজ এবং কিছু প্রস্তুতি ম্যাচ পাচ্ছি। তাই আগামী তিন সপ্তাহে সেরা প্রস্তুতিটাই নিতে হবে। আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেয়াও অনেক বড় একটা ব্যাপার। আমরা এখানে বেশ কিছুদিন সময় পাচ্ছি। চেষ্টা করছি ছেলেদের ফ্রেশ রাখতে। আশা করছি তারা বিশ্বকাপের সময় সঠিক ছন্দে থাকবে।’

এসএএস/পিআর