আন্তর্জাতিক

মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন রণতরী কী ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি?

যুক্তরাষ্ট্র হঠাত্ করেই মধ্যপ্রাচ্যে একটি বিমানবাহী রণতরী পাঠিয়েছে ইরানকে হুঁশিয়ার করে দেয়ার জন্য। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন বলেছেন, তারা ইরানের দিক থেকে বেশ কিছু হুমকির মোকাবেলায় এ পদক্ষেপ নিয়েছেন।

Advertisement

মার্কিন সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বাহিনীর ওপর সম্ভাব্য হামলা মোকাবেলায় সেখানে এই রণতরী পাঠানো হয়েছে। বোল্টন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, তারা যে কোনো ধরনের হামলা নির্মম শক্তি দিয়ে মোকাবেলা করবেন।

এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, বিমানবাহী জাহাজ ইউএসএস আব্রাহাম লিংকন এবং একটি বোমারু টাস্ক ফোর্স মোতায়েন করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে; ইরানের কাছে একটি স্পষ্ট এবং সন্দেহাতীত বার্তা পৌঁছে দেয়া। যদি ইরান যুক্তরাষ্ট্রের বা তার মিত্রদের কোনো স্বার্থে আঘাত হানে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই নির্মম শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে এর জবাব দেয়া হবে।

আরও পড়ুন > শ্রীলঙ্কায় মুসলিমদের বাড়িঘর দোকানপাটে খ্রিস্টানদের হামলা-ভাঙচুর

Advertisement

তিনি বলেন, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ বাধাতে চায় না যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু আমরা যে কোনো হামলা মোকাবেলায় পুরোপুরি প্রস্তুত। সেটি ছায়া যুদ্ধই হোক অথবা ইসলামিক রেভ্যুলেশনারি গার্ড অথবা নিয়মিত ইরানী বাহিনীর হামলাই হোক। একটি যুদ্ধ মহড়ায় অংশ নেয়ার জন্য এই মার্কিন রণতরী গত এপ্রিল থেকেই ইউরোপে ছিল।

উপসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন রণতরী ইউএসএস আব্রাহাম লিংকন মোতায়েনের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। কিন্তু এবার রণতরী পাঠানোর ঘটনা ঘটলো এমন এক সময় যখন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে।

গত বছর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে ইরানের সঙ্গে সম্পাদিত পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যান। ২০১৫ সালে এই চুক্তিটি হয়েছিল। ইরানের দিক থেকে এমন কী হুমকি তৈরি হলো যে হঠাত্ করে যুক্তরাষ্ট্র রণতরী পাঠিয়ে দিল উপসাগরীয় অঞ্চলে? তবে কথিত এই হুমকির ব্যাপারে খুব কম তথ্যই যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করেছে।

আরও পড়ুন > সময় মতো অফিস আসতে বলায় বসের মাথায় বন্দুক ঠেকালো কর্মী

Advertisement

গত কিছুদিন ধরেই আসলে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর চাপ বাড়ানোর একটা কৌশল নিয়েছে। তারা ইরানের রেভ্যুলেশনারি গার্ড বাহিনীকে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর তালিকাভুক্ত করেছে। ইরানের তেল বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা কঠোর করেছে।

বিবিসির কূটনৈতিক সংবাদদাতা জোনাথান মার্কাস বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসন আসলে কী করতে চায় তা স্পষ্ট নয়। একদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের মুখপাত্র বলছেন, তারা ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ চান না। কিন্তু অন্যদিকে ইরানের সরকারের পতন ঘটিয়ে নতুন কাউকে ক্ষমতায় আনার ব্যাপারে তাদের উত্সাহ কিন্তু চাপা থাকছে না।

যুক্তরাষ্ট্র কি বর্তমানে যে পরিস্থিতিতে ইরান আছে, সেটিকেই বজায় রাখতে চায়? নাকি ইরানকে আরও খারাপ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে চায়?

ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচকরা আশঙ্কা করছেন, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের যে দামামা বাজানো শুরু করেছে, দুর্ঘটনাবশত বা পরিকল্পনামাফিক সেরকম একটি যুদ্ধ বেধে যাওয়া অসম্ভব নয়।

আরও পড়ুন > ইরানকে মোকাবিলায় মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ

ইরানের সঙ্গে বিশ্বের ক্ষমতাবান দেশগুলোর যে পরমাণু চুক্তি হয়েছিল, তার লক্ষ্য ছিল ইরান যেন পরমাণু অস্ত্র তৈরির কাজে তার পরমাণু কর্মসূচি ব্যবহার করতে না পারে। এই চুক্তির অধীনে ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করতে এবং আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের সেগুলো পরিদর্শন করতে দিতে রাজি হয়। বিনিময়ে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে নতুন করে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরানের অর্থনীতিতে সংকট তৈরি হয়েছে। ইরানি মূদ্রার মান পড়ে গেছে। তাদের মূদ্রাস্ফীতি বেড়ে গেছে। সেখানে জন অসন্তোষ বাড়ছে এবং অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী ইরান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

এসআইএস/জেআইএম