বিশেষ প্রতিবেদন

রমজানে ‘সহনীয় যানজটের’ উদ্যোগ

আজ চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল মঙ্গলবার শুরু হবে মুসলমানদের পবিত্র মাহে রমজান মাস। প্রতি বছরই রমজান মাসে রাজধানীতে রোজাদারদের ভোগান্তি বহুগুণ বাড়িয়ে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় সড়কের ভয়াবহ যানজট। এবারের রমজানে যাতে সেই পরিস্থিতি না হয় সেজন্য বেশকিছু উদ্যোগের পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ।

Advertisement

রমজানে রাজধানীতে নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি কর্মজীবী রোজাদারদের সড়কে চলাচল নির্বিঘ্ন করতে ট্রাফিক বিভাগের মাঠপুলিশের পাশাপাশি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও সড়কে দাঁড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া।

আরও পড়ুন > রাজধানীর ২২ রুটে চলবে ৬ রঙের বাস

ডিএমপি সদর দফতরে গত ২৫ এপ্রিল মাহে রমজান ও পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা মহানগর এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার বিশেষ সমন্বয় সভায় এ নির্দেশনা দেয়া হয়।

Advertisement

ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ফায়ার সার্ভিস, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সেবাদানকারী সংস্থা, দোকান-মালিক সমিতি, বাস-মালিক সমিতি, লঞ্চ-মালিক সমিতি, বিজিএমইএ-বিকেএমইএ, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বিশেষ এ সমন্বয় সভায় উপস্থিত ছিলেন।

ডিএমপি কমিশনার সভায় বলেন, পবিত্র রমজানে যানজট সহনীয় রাখার জন্য যা যা করণীয় তা বাস্তবায়ন করতে হবে। জনসাধারণ যাতে নিরাপদে ইফতারের আগে নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে সে লক্ষ্যে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করবে।

সভায় অংশ নেয়া পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, এবার সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষা, যানজটমুক্ত গতিশীল সড়কের ব্যবস্থা পুলিশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে রাজধানীতে অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চলছে, নতুন নতুন ফুটওভার ব্রিজ হচ্ছে, সড়ক মেরামতের কাজ চলছে। বিশেষ করে মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) কাজের কারণে অনেক রাস্তা সংকুচিত হয়ে গেছে। যে কারণে সড়কে গতি আগের তুলনায় কম। নানা উদ্যোগের মাধ্যমে সড়কের যানজট সহনশীল রাখার চেষ্টা চলছে।

আরও পড়ুন > যানজটে বিশ্বের প্রথম ঢাকা

Advertisement

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের এক উপ-কমিশনার বলেন, এবার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় বাস্তবায়নে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি ক্রাইম ডিভিশনের কর্মকর্তাদেরও সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। সঙ্গে থাকবেন আনসার সদস্যরাও।

নির্দেশনা রয়েছে, সুষ্ঠুভাবে ইন্টারসেকশন ম্যানেজমেন্ট বাস্তবায়ন করা অর্থাৎ ইন্টারসেকশনে কোনো গাড়ি জটলা করে থাকতে পারবে না, নির্ধারিত স্থানে গাড়ি পার্কিং নিশ্চিত করা, ফুটপাতে মোটরসাইকেল উঠলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, গুরুত্বপূর্ণ সড়কে রিকশা-ভ্যান-ঠেলাগাড়ি চলাচল বন্ধ করা- এসব বিষয় নিবিড়ভাবে তদারকির জন্য পিক আওয়ারে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের রাস্তায় থেকে যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে বলা হয়েছে।

এছাড়া চালকদের লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করে টার্মিনাল থেকে গাড়ি বের করা, লক্কর-ঝক্কর গাড়ি রাস্তায় নামানো বন্ধ করা, নির্ধারিত স্থানের বাইরে যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো বন্ধ, বাস টার্মিনালগুলোর প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ যানজটমুক্ত রাখতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

শপিংমলের সামনে বা আশপাশে যানবাহনের পার্কিং বন্ধ রাখতে এবং জটলা কমাতে শপিংমল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে আগাম জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ফুটপাত হকারমুক্ত রাখতে পুলিশের পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশনকে উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন > প্রয়াত মেয়র আনিসুলের উদ্যোগ বাস্তবায়নে কমিটি

এ ব্যাপারে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল আলম জাগো নিউজকে বলেন, বিরূপ আবহাওয়াতেও ট্রাফিকের সাড়ে চার হাজার সদস্য নিরলসভাবে কাজ করছে। এবার রাস্তায় গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসাসহ অন্যান্য সেবাদানকারী সংস্থাকে নতুন করে কোনো রাস্তা না খুঁড়তে এবং পুরাতন খোঁড়া রাস্তা দ্রুত মেরামতের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

তিনি বলেন, রাজধানীতে সবসময়ই যানজট লেগে থাকে। আজও আছে, কালও হতে পারে, ভবিষ্যতেও থাকবে। তবে আমরা যেটা করি সেটা হচ্ছে যানজটকে সহনীয় পর্যায়ে রাখা। এবার রাজধানীর যানজট মোকাবিলা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কঠিন হবে। রাজধানীজুড়ে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। এমআরটির কারণে চ্যালেঞ্জটাও বেশি। যানজটের আশঙ্কা থাকছেই। এসব কিছু মাথায় রেখে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।

জেইউ/এনডিএস/এমএআর/জেআইএম