মতামত

বেশি ভাড়া আদায় চলবেই?

একটি জনহিতকর সরকারের কাজ হচ্ছে জনদুর্ভোগ লাঘব করা। কিন্তু দুর্ভোগ যেন আমাদের পিছু ছাড়ছে না। গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি জনসাধারণের ভোগান্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আর এই মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে নিত্যপণ্যের বাজারসহ পরিবহন খাতেও। বিশেষ করে গণপরিবহনের ভাড়া ইতিমধ্যেই বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও সরকার এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে। অন্যদিকে যাত্রীদের ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। এ কারণে প্রশ্ন উঠেছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের স্বেচ্চাচারিতা বন্ধ করার কি কোনো কর্তৃপক্ষ নেই ?সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ৫ থেকে ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাসভাড়া সমন্বয়ের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে ইতিমধ্যেই ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষজন যারপরনাই ক্ষুদ্ধ।গ্যাসের দাম ইউনিট প্রতি পাঁচ টাকা বেড়েছে। কিন্তু পরিবহন মালিকরা এ অজুহাতে পরিবহনের ভাড়া ২৫ ভাগ বাড়িয়ে দিয়েছে।  এক্ষেত্রে মন্ত্রীর নির্দেশের কোনো তোয়াক্কা করছে না তারা। আমাদের দেশে মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে অতি আগ্রহের কোনো কমতি নেই। তার ওপর কোনো উসিলা পেলে তা আরও বেড়ে যায়। এমনিতেই আমাদের গণপরিবহনের ভাড়া জ্বালানির মূল্যের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়া ‘সিটিং’-এর নামে ‘চিটিং’ তো অতি পরিচিত একটি বিষয়। এভাবে ‘ভাড়াসন্ত্রাস’ চালানোর পরও পরিবহন মালিকরা সন্তোষ্ট থাকতে পারছেন না। তাই সরকারি আদেশের আগেই বাড়িয়ে দিয়েছেন ভাড়া। জ্বালানির মূল্য বাড়লে অবশ্যই পরিবহন ভাড়া বাড়তে পারে। তবে তা  হতে হবে জ্বালানির মূল্যের সাথে সমন্বয় সাপেক্ষে। এর ব্যত্যয় কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।   ভাড়া নির্ধারণের জন্য বাসের ব্যয় বিশ্লেষণ করা হয়ে থাকে। এজন্য বাসের ক্রয়মূল্য, দৈনন্দিন খরচ, নিবন্ধন ফি ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়। এর মধ্যে বাসে কতজন যাত্রী বহন করা হয় সেটিও সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে ধরা হয়। একটি বড় বাসে ৫২টি আসন থাকে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, এর দ্বিগুণ যাত্রী উঠানো হয় এসব বাসে। এছাড়া সিটিং বাসগুলোতেও দাঁড়িয়ে যাত্রী বহন করা হয়। এসব কারণে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও যাত্রীরা প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। আর সিএনজিচালিত অটোরিকশার দৌরাত্ম্য তো সর্বজনবিদিত। মিটারে তো চলেই না, বাড়তি ভাড়া দিয়েও এসব যানবাহন পাওয়া রীতিমতো সোনার হরিণ হাতে পাওয়ার মতোই ব্যাপার।এমননিতেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনসাধারণ দিশেহারা। তারওপর পরিবহন ভাড়া বাড়লে তার প্রভাব পড়ে সর্বত্র। এছাড়া সরকার নির্ধারিত ভাড়া নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত ভাড়ায়ই যাতে নেওয়া হয় সেটি নিশ্চিত করাতো সরকারের দায়িত্ব। পরিবহন খাতের এই নৈরাজ্য মেনে নেয়া যায় না। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্টের অভিযান চালিয়ে যে কোনো মূল্যে যাত্রী হয়রানি বন্ধ করতে হবে।  এইচআর/এমএস

Advertisement