আন্তর্জাতিক

শ্রীলঙ্কায় মুসলিমদের বাড়িঘর দোকানপাটে খ্রিস্টানদের হামলা-ভাঙচুর

শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর উত্তরাঞ্চলের নেগোম্বো শহরে মুসলিমদের বাড়ি-ঘর, দোকানপাট ও যানবাহনে হামলা করেছে দেশটির উগ্রপন্থী খ্রিস্টানরা। সোমবারের ওই হামলার পর শহরটিতে কারফিউ জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। মুসলিমদের ওপর এই হামলার ঘটনার পর দেশটির রোমান ক্যাথলিক চার্চের যাজক উভয় সম্প্রদায়কে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

Advertisement

ফরাসী সংবাদমাধ্যম এএফপি এক প্রতিবেদনে বলছে, শ্রীলঙ্কার রোমান ক্যাথলিক চার্চের যাজক নেগোম্বোর খ্রিস্টান ও মুসলিম সম্প্রদায়কে শান্ত থাকার ও মদ নিষিদ্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।

গত ২১ এপ্রিল ইস্টার সানডের সকালে নেগোম্বো শহরেও আত্মঘাতী হামলা হয়। ওই হামলার পর অনেক মুসলিম তাদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে গেছেন। এর মাঝেই সোমবার মুসলিমদের দোকানপাট, বাড়িঘর ও যানবাহনে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

এএফপি বলছে, মুসলিমদের কয়েক ডজন বাড়ি-ঘর, দোকানপাট ও যানবাহন আক্রান্ত হওয়ার কারফিউ কার্যকর করার জন্য শহরটিতে নিরাপত্তাবাহিনীর শত শত সদস্য প্রবেশ করেছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন : স্বর্ণখচিত জামা পরে ১৬ ব্যক্তির কাঁধে চেপে শহর ঘুরলেন থাই রাজা

গত ২১ এপ্রিল দেশটির যে তিনটি গীর্জা ও তিনটি বিলাসবহুল হোটেলে আত্মঘাতী হামলা হয়েছিল; রাজধানী কলম্বো থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরাঞ্চলের সেন্ট সেবাস্তিয়ান গীর্জাও সেগুলোর একটি। ইস্টার সানডের ওই হামলায় অন্তত ২৫৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। হামলার চারদিন পর দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)।

কলম্বোর আর্চবিশপ কার্ডিনাল ম্যালকম রনজিৎ বলেছেন, ‘একজন মুসলিমকেও যেন আঘাত করা না হয়, আমি সকল ক্যাথলিক ও খ্রিস্টান ভাই-বোনদের সেই আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ তারা আমাদের ভাই, তারা আমাদের ধর্মীয় সংস্কৃতির অংশ।’

এক ভিডিও বার্তায় কলম্বোর এই আর্চবিশপ বলেন, ‘এমন অবস্থায় দয়া করে তাদের আঘাত করা থেকে বিরত থাকুন এবং শ্রীলঙ্কার সব সম্প্রদায়ের মধ্যে ভালো সম্পর্ক এবং বোঝাপড়া তৈরির চেষ্টা করুন।’ ইস্টার সানডের হামলায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে নেগোম্বো শহরে। নেগোম্বোর সেন্ট সেবাস্তিয়ান গীর্জায় আইএসের আত্মঘাতী বোমা হামলায় একশ’ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন : ভারতের ভোটে মা-ছেলের ভাগ্য নির্ধারণ আজ

দেশটির পুলিশের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেছেন, সোমবারের সংঘর্ষের পর নেগোম্বো থেকে অন্তত দু’জনকে গ্রেফতার এবং আরো কয়েকজন সন্দেহভাজন হামলাকারীকে ভিডিও ফুটেজ দেখে সনাক্ত করা হয়েছে। ইস্টার সানডের পর দেশটির পার্লামেন্টে পাস হওয়া জরুরি আইনে এই হামলাকারীদের বিচার হবে বেলে জানিয়েছেন তিনি।

লঙ্কান এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘খ্রিস্টান-মুসলিমদের সংঘর্ষে অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন। যদিও আমরা এই মুহূর্তে মাত্র দু’জনকে গ্রেফতার করেছি। আরো বেশ কয়েকজনকে সনাক্ত করা হয়েছে; শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করা হবে।’

সোমবার রাতের হামলায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে বলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, উত্তেজিত খ্রিস্টানরা নেগোম্বোর মুসলিমদের দোকানপাটে হামলা, তাদের বাড়ি-ঘরের আসবাবপত্র ও জানালা ভাঙচুর এবং যানবাহন উল্টে দিয়েছেন।

তবে এই ভিডিও ফুটেজের সত্যতা নিশ্চিত হতে পারেনি এএফপি। পরে গভীর রাতে শহরটি কারফিউ কার্যকর করার জন্য শত শত নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।

এসআইএস/পিআর