সিংহাসনে আনুষ্ঠানিকভাবে আরোহণ করেছেন থাইল্যান্ডের নতুন রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন (৬৬)। তিন দিনব্যাপী অভিষেক অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন রোববার চার মাইল দৈর্ঘ্যের এক রাজকীয় শোভাযাত্রায় অংশ নেন রাজা। দেশটির রাজ পরিবারের প্রথা অনুযায়ী, স্বর্ণখচিত জামা পরে ১৬ ব্যক্তির কাঁধে চেপে ব্যাংকক শহর ঘুরে দেখেন তিনি। এ সময় রাজা শহরের তিনটি বৌদ্ধ উপাসনালয়ে প্রার্থনা করেন এবং প্রজাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
Advertisement
শনিবার রাজা হিসেবে শপথ নেয়ার পর নতুন রাজা রাজপরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, থাই প্রথা অনুযায়ী, রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন শোভাযাত্রায় যোগ দিতে স্বর্ণখচিত জামা পরেন। এ সময় রাজার মাথায় শোভা পাচ্ছিল রাজকীয় টুপি। একই পোশাক ও টুপি করে সিংহাসনে আরোহণ করেন নতুন রাজার বাবা ভূমিবল আদুলাদেজ।
৭০ বছর সিংহাসনে থাকার পর ২০১৬ সালের অক্টোবরে মহা ভাজিরালংকর্নের বাবা রাজা ভূমিবল আদুলাদেজ মারা যান। আদুলাদেজের মৃত্যুর ৫০ দিন পর নতুন রাজা হিসেবে ওই সময়ের যুবরাজ মহা ভাজিরালংকর্নের নাম ঘোষণা করা হয়। দেশটির পার্লামেন্টের আমন্ত্রণে রাজসিংহাসনে বসতে সম্মত হন মহা ভাজিরালংকর্ন। শনিবার সিংহাসনে অভিষেকের মধ্য দিয়ে তিনি হলেন চকরি রাজবংশের দশম রাজা। তিনি রাজা রামা এক্স নামেও পরিচিত।
Advertisement
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বিশাল এই শোভাযাত্রায় প্রায় দেড় হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও অংশ নেন প্রায় অন্তত দুই লাখ মানুষ। দেশটির জনগণ রাজার পোশাকের রঙের সঙ্গে মিল রেখে হলুদ পোশাক পরে শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
সরকারের তরফ থেকে বলা হয়, শনিবার থেকে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী রাজার অভিষেক অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত ৩১.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (আড়াইশো কোটির বেশি) অর্থ খরচ হয়েছে। রাজা স্বর্ণখচিত যে রাজকীয় মুুকুট পরেন তার ওজন ১৬ পাউন্ড। তিনি থাইল্যান্ডকে সঠিক পথে পরিচালিত করার শপথ নেন।
রাজা রামা এক্স ব্রিটেন ও অষ্ট্রেলিয়া থেকে উচ্চশিক্ষা নেন। তিনি ১৯৭২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজপরিবারের উত্তরাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি পান। ২০১৮ সালে রাজপরিবারের পক্ষ থেকে রাজার পক্ষে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (৩ হাজার কোটি টাকা) অর্থসম্পদ লিখে দেয়া হলে তিনি পরিণত হন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী রাজায়।
সিংহাসনে বসার কয়েক দিন আগে বিয়ে করলেন থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন। গতকাল বুধবার তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর উপপ্রধান সুথিদাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পরই স্ত্রীকে নতুন রানি উপাধি দিয়েছেন তিনি। রাজপরিবারের বিবৃতিতে বলা হয়, রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন রানি সুথিদা ভাজিরালংকর্ন আয়ুধ্যাকে রাজপরিবারে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন থেকে সুথিদা রাজপরিবারের সদস্য হিসেবে সব ধরনের মর্যাদা ভোগ করবেন।
Advertisement
এর আগে রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন বিয়ে করেছিলেন তিনবার। তিন বিয়েতেই বিচ্ছেদ ঘটেছে। তার সাত সন্তান।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে রয়েল থাই সেনাবাহিনীর একজন পূর্ণ জেনারেল হিসেবে সুথিদাকে পদোন্নতি দেন রাজা। এরপর ২০১৭ সালে তাকে তার ব্যক্তিগত প্রহরীদের উপকমান্ডার নিয়োগ করেন। এ ছাড়া তিনি তাকে থানপুইং বিশেষণে ভূষিত করেন। থাইল্যান্ডে এটি হলো একটি রাজকীয় পদবি, যার অর্থ হলো লেডি।
বলা হচ্ছে, থাই রাজা এমন এক সময়ে রাজা হিসেবে শপথ নিলেন যখন থাইল্যান্ডে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এতদিন সামরিক শাসন চলার পর ২০১৪ সালের মার্চে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশটিতে। তবে নির্বাচিতরা এখনো ক্ষমতায় বসতে পারেনি।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, যে দেশটিতে দীর্ঘদিন সামরিক শাসন জারি ছিল, সেই সামরিক শাসকরা কি গণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবেন?
এসআর/এমকেএইচ