জঙ্গিবাদ ইস্যুতে দেশের স্বার্থে লাইভ টেলিকাস্টের ক্ষেত্রে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া।
Advertisement
তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় আমরা সে দেশের সাংবাদিকদের ক’টা লাশের ছবি প্রচার করতে দেখেছি? তারা তাদের দেশের স্বার্থকে সব কিছুর ঊর্ধ্বে দেখেছেন। আমাদের দেশের অবস্থা ও শ্রীলঙ্কার অবস্থা এক রকম না হলেও জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা আসলে জঙ্গিবাদসহ সকল ইস্যুতে গণমাধ্যমের সেলফ সেন্সরশিপ দরকার।
সোমবার (৬ মে) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘রিপোর্টিং অন টেররিজম’ শীর্ষক এক কর্মশালার উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্রাব) ও ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) যৌথ উদ্যোগে অপরাধ বিষয়ক সাংবাদিকদের নিয়ে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
Advertisement
ডিএমপি কমিশনার বলেন, উন্নত বিশ্ব উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করেও সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করতে পারেনি। আমরা পেরেছি। আমরা সন্ত্রাসবাদ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করতে পেরেছি, আপামর জনসাধারণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, কারণ আমাদের গণমাধ্যম সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, দেশীয় নয়, জঙ্গিবাদ বৈশ্বিক সমস্যা। মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে পশ্চিমাদের রাজনৈতিক টানাপোড়েনে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছে। সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডে ও শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি হামলা দেখলো বিশ্ব। শ্রীলঙ্কায় একাধিক হামলা হলো, ক’টা বীভৎস লাশের ছবি আমরা দেখেছি? কারণ শ্রীলঙ্কান সাংবাদিকরা তাদের জাতীয় স্বার্থ বড় করে দেখেছে। তাদের স্যালুট। আমাদের দেশে এমন সব ইস্যুতে সময় এসেছে চিন্তা-ভাবনা করার। বিশেষ করে টেলিভিশন লাইভ টেলিকাস্টের ক্ষেত্রে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, জঙ্গিদের লক্ষ্যই হচ্ছে- ভীতির পরিবেশ তৈরি করা, জনমনে নিজস্ব মতামত চাপিয়ে দেয়া, নিজেকে হিরো হিসেবে উপস্থাপন করা, হিরোইজমের মাধ্যমে জঙ্গিবাদের প্রচার ও মোটিভেশন করে নতুনদের মধ্যে জঙ্গিবাদের প্রচার করা, নতুন জঙ্গি তৈরি করা। জঙ্গিরা চায় মেইনস্ট্রিম প্রচারণা। সুতরাং এমন কোনো রিপোর্টিং করা উচিত হবে না, যে রিপোর্টে জঙ্গিবাদের পক্ষে প্রচার পায়, বা সন্ত্রাস কিংবা জঙ্গিদের হিরো হিসেবে যেন উপস্থাপিত না হয়। বরং উচিত জঙ্গিরা যে দেশের শত্রু, মানবতার শত্রু তা প্রচার করা।
গণমাধ্যমের বিশেষ করে ক্রাইম রিপোর্টার আর পুলিশ একে অপরের পরিপূরক। জাতির গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এক্ষেত্রে ক্রাইম রিপোর্টাররা অগ্রবর্তী। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের অবস্থার ভিন্নতা আছে। আমাদের দেশে স্বাধীনতাবিরোধী আছে, দেশবিরোধী আছে। তারা সব সমময় সক্রিয় অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করারা। সেটা আমরা সব সময় মোকাবেলা করে আসছি। এর পাশাপাশি জঙ্গিবাদও মোকাবেলা করেছি। এর সব সম্ভব হয়েছে গণমাধ্যমের কারণে।
Advertisement
সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষা, উল্টোপথে চলা বন্ধে প্রথম সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়েছি এবং পেয়েছিও। পরে উল্টোপথে চলতে গিয়ে কিন্তু পুলিশ, সাংবাদিক, মন্ত্রী, সচিব, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আমলারা মামলা খেয়েছেন। আমরা থামিনি। ট্রাফিক আইন অমান্যকারী, উল্টোপথে চলাচলকারী সবার বিরুদ্ধে ট্রাফিক প্রসিকিউশন দিয়েছি। যে কারণে ৮০ শতাংশ উল্টোপথে যানবাহন চলাচল কমে এসেছে এবং ৯৫ শতাংশ মানুষ এখন হেলমেট ব্যবহার করছে।
কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিটিটিসি প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম, উপ-কমিশনার মহিবুল ইসলাম, প্রলয় কুমার জোয়ার্দার, মাসুদুর রহমান, ক্রাবের সহ-সভাপতি মিজান মালিক, সাধারণ সম্পাদক দীপু সারওয়ার প্রমুখ।
জেইউ/এআর/এমবিআর/এমকেএইচ