প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, সমাজের সবচেয়ে নির্যাতিত-নিপীড়িত ব্যক্তি বিশেষভাবে নারী ও শিশুরা লিগ্যাল এইড থেকে যেন বঞ্চিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
Advertisement
রোববার সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে ‘উচ্চ আদালতে সরকারি আইনি সেবা : চলমান প্রক্রিয়া ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ন্যায়বিচার প্রাপ্তি এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকার একটি সার্বজনীন মৌলিক মানবাধিকার। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার সংরক্ষণ এবং দরিদ্রবান্ধব ও জনকল্যাণকর বিচার ব্যবস্থার অন্যতম শক্তি হলো লিগ্যাল এইড তথা আইনগত সহায়তা প্রদান। আইনের দৃষ্টিতে সমতার যে অমীয় বাণী আমরা বারবার প্রতিধ্বনি করি, আইনগত সহায়তা ব্যতিরেকে তা কখনই বাস্তবায়িত করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ‘সরকারি ব্যবস্থাপনায় আইনগত সহায়তা পাওয়া কোনো দান বা করুণা নয়; এটা দরিদ্র ও অসহায় মানুষের অধিকার, আর রাষ্ট্রের এক অপরিহার্য দায়িত্ব। আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন এবং বিচারপ্রাপ্তিতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থী জনগণকে আইনগত সহায়তা প্রদানকল্পে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০ প্রণীত হয়। এটি সত্যিই একটি নন্দিত আইন। বর্তমানে সরকারি এবং বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এর কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে এবং এর সুফল ক্রমান্বয়ে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। এ ফলপ্রসূ কার্যক্রম ইতোমধ্যে সর্বমহলে অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছে।’
Advertisement
পরিসংখ্যান উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত সারাদেশে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৯০ জনকে বিভিন্নভাবে লিগ্যাল এইড প্রদান করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি ২০১৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর থেকে যাত্রা শুরু করে। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি ১৩ হাজার ৮৩১ জনকে লিগ্যাল এইড প্রদান করেছেন। যা সত্যিই প্রশংসনীয়।
তিনভাবে আইনজীবীরা আইন সহায়তা কার্যক্রমে অবদান রাখতে পারে বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি। এগুলো হলো-
এক. বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আইন সহায়তা বিষয়ে আইনজীবীদের উদ্বুদ্ধ করার নিমিত্তে নানাবিধ নীতি প্রণয়ন করতে পারে যেমন- প্রত্যেক আইনজীবীকে বছরে কমপক্ষে দুইটি মামলা বিনা ফিতে পরিচালনা করতে হবে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয়ভাবে লিগ্যাল এইড বিষয়ক কর্মসূচি চালু করতে পারে।
দুই. স্থানীয় বার অ্যাসোসিয়েশন বারের সদস্যদের আইন সহায়তার বিষয়ে উৎসাহিত করতে পারে এবং
Advertisement
তিন. আইনজীবীগণ স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিনা ফিতে অথবা নামমাত্র ফিতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আইনি সেবা দিতে পারে।
সুপ্রিম কোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এতে বক্তব্য রাখেন- অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার ড.মো.জাকির হোসেন, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক আমিনুল ইসলাম ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী শাহীন আনাম।
এফএইচ/এনএফ/পিআর