প্রবাসী বাংলাদেশিসহ বিদেশ থেকে এনসিসি ব্যাংকে পাঠানো ডলার নিয়ম অনুয়ায়ী ভেঙে টাকায় পরিশোধ করা হতো। এই সুযোগ নিয়ে অবৈধভাবে ডাটা ইনপুটের মাধ্যমে ডলারের দাম কমা-বেশি করে সিদ্দিকুর রহমান (৩২) নামে ব্যাংকটির হেড অফিসের এক কর্মকর্তা আট কোটি ৯৮ লাখ টাকা জালিয়াতি করে আত্মসাৎ করেন।দীর্ঘ পাঁচ বছর এভাবে জালিয়াতি করে টাকা আত্মসাতের পর ব্যাংকটির নজরে আসে। বিষয়টি নিজেও বুঝতে পেরে গা ঢাকা দেন সিদ্দিকুর। পরে ব্যাংটির অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার রাতে কমলাপুরের একটি বাসা থেকে সিদ্দিকুরকে আটক করে র্যাব-৩ ব্যাটালিয়ন।এ ব্যাপারে র্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল সরোয়ার আলম বলেন, এনসিসি ব্যাংকের প্রায় ৯ কোটি টাকা জালিয়াতির ঘটনায় ব্যাংক কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান ছাড়াও অভ্যন্তরীণ অন্যান্য কর্মকর্তারা জড়িত থাকতে পারে। তিনি মনে করেন, গত পাঁচ বছর ধরে ব্যাংকের একজন মাত্র কর্মকর্তা অনিয়ম করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এর পেছনে আরো অনেকেই জড়িত রয়েছেন।র্যাব-৩ সূত্রে জানা যায়, সিদ্দিকুর রহমান ২০০৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর সহকারী অফিসার হিসেবে এনসিসি ব্যাংকে যোগদান করেন। এ সময় তিনি ওই ব্যাংকের হেড অফিসে ডাটা প্রসেসর হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি পদোন্নতি পেয়ে অফিসার হন।বিদেশ থেকে আসা ডলারের দাম কমিয়ে ও বাড়িয়ে দেখাতেন তিনি। এভাবে তিনি কর্মরত থাকাকালীন অবৈধভাবে ডাটা ইনপুটের মাধ্যমে ব্যাংকের ৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা নিজের এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেন।এনসিসি ব্যাংকের ডিএমডি ফজলুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিনের এই জালিয়াতি নজরে আসে পাঁচ বছর পর। এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে গা ঢাকা দেন সিদ্দীকুর। পরে গত ২৪ জুন মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। এরপর র্যাবকেও জানানো হয়। পরে র্যাব-৩ সিদ্দিকুর রহমানকে গত রাতে কমলাপুর থেকে আটক করে।তিনি আরো জানান, বিদেশ থেকে যখন টাকা আসতো সেই সময় কম্পিউটারে ডাটা ইনপুটের মাধ্যমে টাকাগুলো নিজের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করতেন সিদ্দিকুর। মোট পাঁচটি অ্যাকাউন্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইএফটি ফান্ডের মাধ্যমে টাকাগুলো স্থানান্তর করা হয়। তার বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা ছাড়া দুদকেও একটি মামলা করা হয়েছে।এক প্রশ্নোত্তরে তিনি বলেন, পাঁচকোটি টাকা খরচ করে ফেলেছেন। ফরিদপুর এলাকায় জমি কেনা, সুন্দর একটি বাড়ি কেনা এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের ঘুষ প্রদান করার মাধ্যমে এসব টাকা খরচ করেছেন তিনি। বাকি টাকা তার মা এবং স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে রয়েছে।ব্যাংকটির ডিএমডি আরো বলেন, এই জালিয়াতির সঙ্গে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ অডিট কর্মকর্তারাও জড়িত থাকতে পারে। কারণ এতো বছরেও কেন ধরতে পারলেন না তারা? এ ব্যাপারে ব্যাংকের একটি তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।অপর এক প্রশ্নের জবাবে ফজলুর রহমান বলেন, কোনো গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেননি সিদ্দিকুর রহমান। সম্পূর্ণভাবে ব্যাংকের লভ্যাংশ থেকে এ টাকা আত্মসাৎ করেছেন সিদ্দিক।র্যাব সূত্রে জানা যায়, সিদ্দিকুর রহমান ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে অ্যাকাউন্টিংয়ে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি এনসিসি ব্যাংকে ২০০৯ সালে সহকারী অফিসার হিসেবে যোগ দেন।র্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল সরোয়ার আলম বলেন, এনসিসি ব্যাংকটিকে দেখে অন্য ব্যাংকগুলো সতর্ক হবে। এ ধরনের ঘটনায় সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকটির অন্য কারো জড়িত থাকার বিষয়ে প্রমাণ মিললে তাদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।জেইউ/বিএ
Advertisement