দেশজুড়ে

১৩ বছর ধরে তোরে খুঁজেছি, কোথায় ছিলি বাবা!

সাত বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়া নাঈম এখন ২০ বছরের যুবক। ১৩ বছর ধরে তাকে খুঁজে ফিরেছেন তার বাবা-মা। অবশেষে রোববার মায়ের কোলে ফিরলেন নাঈম।

Advertisement

বাকপ্রতিবন্ধী নাঈমকে ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তার বাবা-মা। রোববার দুপুরে যশোর সার্কিট হাউস চত্বরে বাবা-মা ও সন্তানের এ মিলনে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ছেলেকে পেয়ে মা বলেন, ১৩টি বছর ধরে তোরে খুঁজেছি, কোথায় ছিলি বাবা!

আবেগঘন পরিবেশে জড়িয়ে যাওয়া কণ্ঠে আধো-আধো বোলে নাঈম বলেন, মা, বাড়ি যাবো...। মায়ের কোলে ঘুমাবো। বাড়ি গিয়ে মাঠে যাব। ছাগলের জন্য ঘাস কাটব। নাঈমের এই অভিব্যক্তিতে কাঁদলেন বাবা-মা; হৃদয় সিক্ত হলো উপস্থিত সবার।

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ২০০৬ সালের ৮ এপ্রিল ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে নিখোঁজ হয় সাত বছর বয়সী বাকপ্রতিবন্ধী নাঈম। ২০০৭ সালের মে মাসে মাগুরার শ্রীপুর থেকে উদ্ধার হয় সে। ওই বছরের ১৪ মে মাগুরার তৎকালীন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে তাকে পাঠানো হয়। ১২ বছর ধরে নাঈম এখানে ছিল। সে কথা বলে অস্পষ্ট। নিজের নাম ছাড়া পরিচয় বলতে পারতো না। সে খুব চঞ্চল। এক মাস আগে কেন্দ্রের এক আনসারের মাধ্যমে তার পরিবারের সন্ধান মিলেছে। দীর্ঘদিন পরে হলেও তাকে পরিবারে ফিরিয়ে দিতে পারলাম। এটা খুবই আনন্দের।

Advertisement

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার সুবর্ণখোলা গ্রামের ওমর আলী বিশ্বাস ও আছিয়া বেগম দম্পতির ছেলে নাঈম হাসান। ২০০৭ সালের ১৪ মে মাগুরার তৎকালীন প্রথম শ্রেণির আদালতের নির্দেশে তাকে যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। দীর্ঘদিন ধরে এখানে বন্দি জীবন ছিল নাঈমের। চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল মাগুরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নির্দেশে নাঈম হাসানকে তার পরিবারে ফিরিয়ে দেয়া হলো। এ সময় সমাজসেবা অধিদফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

নাঈমের মা আছিয়া বেগম বলেন, ঢাকার মোহাম্মদপুর বসবাস করতাম। ২০০৬ সালের ৮ এপ্রিল নাঈম সেখান থেকে হারিয়ে যায়। এরপর অনেক জায়গায় তাকে খুঁজেছি। থানায় জিডি করেছিলাম। কিন্তু কোথাও সন্ধান পাইনি। এক মাস আগে আমাদের বাড়ির পাশের একজন আনসার সদস্য যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে বদলি হয়ে এসেছেন। তিনি নাঈমকে দেখে আমাদের সন্ধান দেন। এরপর এখানে এসে তাকে চিনতে পেরেছি। কর্মকর্তাদের জানালে, তারা প্রমাণপত্র দিতে বলে। এরপর জন্মসনদ, চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র জমা দিয়েছি। আদালতের নির্দেশে ছেলেকে ফিরে পেলাম। খুব খুশি হয়েছি। সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।

নাঈমের বাবা ওমর আলী বিশ্বাস বলেন, আমার চার ছেলে-মেয়ে। নাঈম মেজ। তাকে ফিরে পেয়ে আমরা খুব খুশি। সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।

যশোরের জেলা প্রশাসক আবদুল আওয়াল বলেন, দীর্ঘদিন পর শিশু নাঈম তার পরিবারকে ফিরে পেয়েছে। তারা খুবই আনন্দিত। তাদেরকে মিলিত করতে পারায়, আমারও খুশি। নাঈম ভালো থাকুক, এটাই প্রত্যাশা করি।

Advertisement

অনুষ্ঠানে নাঈমের বাবা-মায়ের হাতে ১০ হাজার টাকা তুলে দেয়া হয়। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সমাজসেবা অধিদফতর যশোরের উপ-পরিচালক অসিত কুমার সাহা, প্রেস ক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, জেলা সমাজসেবা অফিসের সহকারী পরিচালক আসাদুল ইসলাম, প্রবেশন অফিসার মাসুম বিল্লাহ ও যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সাইকো সোস্যাল কাউন্সেলর মুশফিকুর রহমান।

মিলন রহমান/এএম/জেআইএম