‘বাচ্চাকালে বিয়া হয় আমার। ৭ বছর বয়স। তখন মেয়েদের দাম আছিল। আমার বাপে ৯ শ টাকা দিয়ে আমারে বিক্রি করলো স্বামীর কাছে। স্বামীর নাম সুধীর হালদার। তখন তো আমি অনেক ছোট। স্বামীর মর্ম বুঝতাম না। স্বামীকে দেখে চৌকীর তলে পালিয়েছি। আমার কাছেই আসতে পার তো না সে। যখন বিয়ের ফুল ফোটার মতো বয়স হলো, যখন স্বামীর মর্ম বুঝলাম, তখন স্বামী বেহাত হয়ে গেছে।’
Advertisement
নন্দিত লোকসংগীতশিল্পী কাঙালিনী সুফিয়া নিজের বিয়ের গল্পটা এভাবেই বললেন। কথায় কথায় তুলে ধরলেন নিজের জীবনের বড় একটি ক্যানভাস, যে ক্যানভাসে উঠে এসেছে তার শিল্পী হয়ে ওঠা ও ব্যক্তিগত জীবনের নানা সংগ্রামের গল্প। এ বুঝি এক জীবনে অনেক জীবনের গল্প বলা। যেমন গল্প সচরাচর শোনা যায় না অন্য কোনও শিল্পীর মুখে।
নিজের প্রসঙ্গে কাঙালিনী বললেন, ‘এত ছোট বয়সে বিয়া হইছে, স্বামীর দরদটা তখন বুঝিনাই। বড় হওয়ার পর যখন দরদটা বুঝতে শুরু করলাম, তখন স্বামী আমার বেহাত হয়ে গেছে। স্বামী আরেকটা বিয়া করছে। সেই মনের জ্বালায় গানে নামলাম। সেই গানের রাস্তায় আইজও আছি।’
আরেকটি প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ‘এখন আমিই আছি, আর কেউ নাই আমার। মা, বাপ, গুরু, কেউ নাই। আমি দুনিয়ার বড় এতিম।’
Advertisement
আর এই জীবন ঘনিষ্ঠ আলাপগুলো উঠে এসেছে ‘কাঙালিনী : এক জীবনে অনেক জীবন’ নামের তথ্যচিত্রের মাধ্যমে। বাংলাঢোল প্রযোজিত তথ্যচিত্রটি অন্তর্জালে উন্মুক্ত হয়েছে ৪ মে।
সোমেশ্বর অলির চিত্রনাট্য ও আল আমিন রংপুরিয়ানের পরিচালনায় ৩২ মিনিট ব্যাপ্তির এই তথ্যচিত্রে উঠে এসেছে কাঙালিনী সুফিয়ার সংগ্রামী জীবনের অজানা অনেক গল্প। যেখানে তিনি অকপটে বলেছেন বিয়ে, সংসার, বিচ্ছেদ, ধর্মান্তরিত হওয়া ও গানের জগতে আসার নানা চড়াই-উতরাইয়ের গল্প।
ভিন্ন মাত্রার এই কাজটি প্রসঙ্গে এর চিত্রনাট্যকার সোমেশ্বর অলি বলেন, ‘আমরা শুধু জানি, আমাদের সময়ে, একই আলো বাতাসে বেঁচে থাকা এই মহীয়সী নারীর গানের কাছে আমাদের অনেক ঋণ। আমরা মনে করি, কাঙালিনী সুফিয়ার এই তথ্যচিত্র কঠিন সময়েরই দগদগে এক প্রামাণ্য দলিল।
আমরা চেষ্টা করেছি একজন কাঙালিনীর জীবনের কিছু ঘাত-প্রতিঘাত সবার সামনে তুলে ধরতে। জানি, সেটি তুলে ধরার জন্য ৩২ মিনিট মোটেও যথেষ্ট নয়। তবুও চেষ্টা করেছি। দেশের গুণী মানুষদের নিয়ে আমাদের এই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
Advertisement
বাংলাঢোলের ইউটিউব চ্যানেল ছাড়াও তথ্যচিত্রটি উন্মুক্ত করা হয়েছে বাংলাফ্লিক্স, রবিস্ক্রিন, এয়ারটেলস্ক্রিন, টেলিফ্লিক্স ও বিডিফ্লিক্স অ্যাপগুলোতে। এখান থেকে দর্শকরা বিনামূল্যে তথ্যচিত্রটি উপভোগ করতে পারছেন।
এমএবি/এমএস