শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টার আগে ভারতের ওড়িশার গোপালপুর এবং পুরীতে আঘাত হানে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ফণী। সে সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার।
Advertisement
সেখানকার পরিস্থিতির এতটাই অবনতি হয়েছে যে, জেলা প্রশাসন এখনও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেনি। কারণ তা জানতে গেলে যে মোবাইল বা ল্যান্ডলাইনের সংযোগ প্রয়োজন সেটা আপাতত নেই। কোথাও নেই। তবে এখন পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিকল হয়ে পুরী বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে অবশ্য আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, যত দ্রুত সম্ভব পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু সেটা কখন হবে, কত দিনে হবে, কেউই জানে না।
এমনিতেই কার্যত জনমানবশূন্য ছিল পুরী। রাস্তাঘাট বৃহস্পতিবার থেকেই ফাঁকা। যারা সেখানে ছিলেন তারা নিজেদের হোটেল বা ঘরে বন্দি হয়েই দেখলেন প্রায় চার ঘণ্টা ধরে চলা তাণ্ডবলীলা।
Advertisement
একের পরে এক বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়া, কাঠ-বাঁশের কাঠামো ভেঙে মাটিতে গুঁড়িয়ে গেছে, প্রায় খেলনা ঘরের মতো চেয়ার-টেবিল বাতাসে ভাসতে-ভাসতে বহু দূরে উড়ে গেছে, কাচের দরজা-জানালা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। মোবাইলের টাওয়ারগুলো যেন কেউ খেলনার মতো ভেঙে রেখেছে রাস্তাঘাটে। সর্বত্র শুধু ধ্বংসস্তূপ পড়ে আছে।
পুরীর হোটেলে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন চঞ্চল সেন। মোবাইলে নেটওয়ার্ক নেই। বাড়িতে জানাতেও পারেননি ঠিক আছেন কিনা। তিনি বলেন, বাড়িতে সবাই খুব চিন্তা করছে। কিন্তু কিভাবে খবর দেব? এরকম ঝড়ই তো কোনদিন দেখিনি।
শুধু চঞ্চল নন, পুরীর বাসিন্দাদের অনেকেরই বক্তব্য এটাই। ১৯৯৯ সালে সুপার সাইক্লোন দেখার ইতিহাস রয়েছে পুরীর। তারপরেও একাধিক ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। তার ঝাপ্টাও এসেছে। কিন্তু ফণীর মতো এমন তাণ্ডব দেখা যায়নি। সেখানে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভূমিধসের ঘটনাও ঘটেছে।
শিকাগোর বাসিন্দা টিনা হাজরা চৌধুরী পুরীতে এসেছিলেন মায়ের সঙ্গে জগন্নাথের পূজা দিতে। সেখানে ঝড়ে আটকা পড়েছেন তিনি। টিনা বলেন, ঘূর্ণিঝড় ক্যাটরিনার ধ্বংসলীলা দেখেছিলাম। কিন্তু সেটা দেখেছি ঝড়ের পরে, ফ্লোরিডায় ঘুরতে গিয়ে। সরাসরি ঝড়ের মধ্যে পড়ার কোনও অভিজ্ঞতাই ছিল না। এবারই প্রথম এমন ঝড়ের কবলে পড়তে হলো। হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন ফকিরচন্দ্র মোহান্তি। হাসপাতালের পরিষেবা পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় অটোয় করে বাড়ি আনা হয়েছে তাকে।
Advertisement
টিটিএন/আরআইপি