জাতীয়

ফণীর শঙ্কাতেও বৃষ্টিকে স্বাগত জানালো বন্দরনগরী

উফ… বৃষ্টি! সেই চৈত্রের পর আর এক ফোঁটাও পানিও ঝড়েনি বন্দরনগরী চট্টগ্রামের আকাশ থেকে। তীব্র গড়মে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা ছিল গত পক্ষ জুড়ে। সেই নাভিশ্বাস তোলা পরিস্থিতিতে স্বস্তি নিয়ে এসেছে সুপার সাইক্লোন ‘ফণী’র বয়ে আনা বৃষ্টি।

Advertisement

ফণীর প্রভাবে সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি শুরু হলেও, চট্টগ্রামে তা শুরু হয়েছে দুপুর পৌনে ১টার দিকে। তবে সে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি ছিল না। দমকা হাওয়ার সঙ্গে মিনিট দশেকের প্রকৃতিতে বইয়ে দেয় হিমেল পরশ। সকাল থেকেই পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ও বহির্নোঙ্গরে সাগরে উত্তাল রয়েছে। সাগরে জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে এক থেকে দুই ফুট পর্যন্ত।

জুমার নামাজের আগ মুহূর্তের বৃষ্টি মুসল্লিদের কিছুটা বিপাকে ফেললেও বন্দরনগরীর বাসিন্দারা বেশ স্বস্তির সঙ্গে এই বৃষ্টিকে স্বাগত জানিয়েছে।

নগরের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা জামে মসজিদে নামাজে এসেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তাসনিম। বৃষ্টি নিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘উফ… বৃষ্টি! কাঙ্ক্ষিত কালবৈশাখী এবার আসেনি। তবে টানা পনের দিনের তাবদাহ শেষে ফণীর বয়ে আনা এ বৃষ্টি সব কষ্ট ভুলিয়ে দেয়ার।’

Advertisement

এদিকে উপকূলীয় এলাকার স্থানীয়রা বলছেন, বাতাস নয় ফণীর কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসকেই তারা বেশি ভয় পাচ্ছেন। দুপুরে জোয়ারের পানি বাড়লেও এখনও তা কমেনি। বিষয়টি আশঙ্কা জাগাচ্ছে।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ফণী ধীরে ধীরে উপকূলের কাছাকাছি আসছে। ফলে শুক্রবার দুপুর থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে বৃষ্টি সারাদেশেই পড়া শুরু হবে। আগামীকাল শনিবার (৪ মে) বিকেল পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি পড়তে থাকবে। কোথাও কোথাও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও হালকা থেকে দমকা হাওয়া বইতে থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিকেল থেকেই উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ের প্রভাব বাড়বে। সৈকতে আছড়ে পড়ছে বড় বড় ঢেউ। বাতাসের গতিবেগও ক্রমশ বাড়বে।’

আবহাওয়া অধিদফতরের বরাতে তিনি জানান, দুপুর থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে মাঝারি বাতাস বইতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের উপকূলে শুক্রবার মধ্যরাতে আঘাত হানবে ফণী। সে সময় ঘূর্ণিঝড় ফণীর নিকটবর্তী এলাকায় বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার থেকে ১০০ কিলোমিটার।

Advertisement

এ মুহূর্তে ফণী খুবই শক্তিশালী সাইক্লোন রূপে ২১০ কিলোমিটার/ঘণ্টা বেগে ভারতের ওড়িষার উপকূলীয় এলাকার খুব কাছাকাছি আঘাত হেনে চলেছে।

ফণীর আঘাতে সবচেয়ে বেশি আক্রন্ত হতে পারে দেশের এমন এলাকাগুলো হলো- যশোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, নড়াইল, ফরিদপুর, মেহেরপুর, সাতক্ষীরা, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা, খুলনা, গোপালগঞ্জ, ঢাকা, কিশোরগঞ্জ ও তার আশপাশের এলাকা।

আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তি ৩৬ এ জানানো হয়, ফণী এখন চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪০, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৪৫ ও পায়রাবন্দর থেকে ৫৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। বর্তমানে পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে এর গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮০ থেকে ২০০ কিলোমিটার। তবে বাংলাদেশে আঘাত হানার সময় এর গতি কমে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদফতর আরও জানায়, উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরাঞ্চলে এই জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।

এমবিআর/পিআর