প্রবাস

‘বাংলাদেশে ঢুকলেই শামীমাকে ফাঁসিতে ঝুলতে হবে’

আইএস বধূ শামীমা যে কোনো কৌশলে বাংলাদেশে ঢুকলেই তার কৃতকর্মের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসিতে ঝুলতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। ব্রিটিশ প্রভাবশালী টিভি চ্যানেল আইটিভি নিউজকে দেয়া সাক্ষাতকারে বৃহস্পতিবার তিনি এ মন্তব্য করেন।

Advertisement

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কাউকে রাষ্ট্রবিহীন করা যায় না, ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল হলে শামীমা রাষ্ট্রহীন হয়ে যাবে, এমন তথ্য দিয়ে আইটিভি নিউজের সিকিওরিটি এডিটর রোহিত কাচরো জানতে চান এক্ষেত্রে বাংলাদেশের করণীয় কি হবে? জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের ভাবার বিষয় নয়। সে ব্রিটেনের বোঝা, বাংলাদেশের নয়।’

আরও পড়ুন> আইএসের শামীমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে বাবার আকুতি

তিনি আরও বলেন, ‘শামীমা বাংলাদেশের নাগরিক নয়, নাগরিকত্বের জন্য কখনও আবেদনও করেনি। তার মা একজন ব্রিটিশ নাগরিক। সুতরাং এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কিছুই করার নেই।’

Advertisement

এথনিক অরিজিনের সুযোগ নিয়ে যদি শামীমা বাংলাদেশে ঢুকে যায় তাহলে কি হতে পারে?

আইটিভি নিউজ সিকিওরিটি এডিটরের পাল্টা এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘সর্বোচ্চ শাস্তি ভোগ করতে হবে তাকে’। টেরোরিজমের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নিজস্ব আলাদা আইন আছে। এই আইনে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ‘শামীমা বাংলাদেশে ঢোকার কোনো প্রশ্নই আসে না, যদি কোনো কৌশল নিয়ে ঢোকেনও তাহলে সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ ফাঁসি কাষ্টে ঝুলতে হবে তাকে।’

উল্লেখ্য, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক শামীমা বেগম। ২০১৫ সালে আরও দুই বান্ধবীসহ পালিয়ে সিরিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দেন। সে সময় সশস্ত্র ওই জঙ্গি সংগঠনটি তাদের দলে যোগ দিতে অনলাইনে প্রচারণা চালাচ্ছিল। আর তাতে আকৃষ্ট হয়ে শামীমা তুরস্ক সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে সিরিয়ায় যান। সেখানে গিয়ে দলটির একজন যোদ্ধাকে বিয়ে করেন।

Advertisement

শামীমা বেগম এখন ১৯ বছর বয়সী একজন মা। আশ্রয় নিয়েছেন সিরিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে। সম্প্রতি তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি তার দেশে ফিরতে চান। কিন্তু আইএসে যোগ দেয়া নিয়ে তার কোনো অনুশোচনা না থাকায় তা নিয়ে যুক্তরাজ্যে সমালোচনা হচ্ছে। শামীমার পরিবারও তার এমন আচরণে অবাক হয়েছেন।

শামীমার বাবা ৬০ বছর বয়সী আহমেদ আলী এখন তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলায় বসবাস করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি ব্রিটিশ সরকারকে অনুরোধ করব তারা যেন আমার মেয়ের নাগরিকত্ব বাতিল না করে। তারা যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে তাহলে তাকে যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে এনে শাস্তি দেয়া হোক।’

শামীমার বাবা আহমেদ আলী জানান, তিনি ১৯৭৫ সালে যুক্তরাজ্যে যান। তারপর ১৯৯০ সালে দেশে ফিরে আসমা বেগম নামে তার প্রথম স্ত্রীকে বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রীর চারটি কন্যা সন্তান ছিল। শামীমা তার চার বোনের মধ্যে সবার ছোট। তবে পরে শামীমার বাবা আহমেদ আলী দেশে ফিরে দ্বিতীয় বিয়ে করেন।

লন্ডনের বেথনাল গ্রিন একাডেমির ছাত্রী শামীমা বেগম মাত্র ১৫ বছর বয়সে তার আরও দুই বান্ধবীসহ তুরস্ক সীমান্ত হয়ে সিরিয়ার আইএস ঘাঁটিতে যান। সেখানে যাওয়ার পর নেদারল্যান্ডস থেকে আসা এক আইএস যোদ্ধাকে বিয়ে করেন।

কিন্তু তার স্বামী সম্প্রতি সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার পর একা হয়ে যান শামীমা। এরপরই তিনি যুক্তরাজ্যে ফেরার কথা বলেন। ১৯ বছর বয়সী শামীমা বেগম এখন সিরিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছেন।

ফিরোজ আহম্মেদ (বিপুল)/এমআরএম/এমকেএইচ