পুরোপুরি সমসাময়িক না হলেও দীর্ঘদিন একই সময়ে খেলেছেন পাকিস্তানের শহিদ খান আফ্রিদি আর ভারতের শচীন টেন্ডুলকার। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেরা ব্যাটসম্যান হলেন লিটল মাস্টার শচীন। ৬টি বিশ্বকাপ খেলে তার নামের পাশে লেখা ২২৭৮ রান। ২০০৩ সালে করেছেন কোনো একক বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৬৭৩ রানের ইতিহাস। শুধু তাই নয়, করেছেন সর্বোচ্চ ৬টি সেঞ্চুরিও।
Advertisement
কিন্তু বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা একাদশ বাছাই করতে গিয়ে পাকিস্তানের বুমবুম খ্যাত আফ্রিদি তার দলেই ঠাঁই দিলেন না শচীন টেন্ডুলকারকে। অথচ, নিজের সর্বকালের সেরা একাদশে রেখেছেন ভারতের বর্তমান অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে। উইকেটরক্ষক হিসেবে মহেন্দ্র সিং ধোনির চেয়ে আফ্রিদি এগিয়ে রাখলেন অ্যাডাম গিলক্রিস্টকেই। তবে শচীন এবং ধোনিকে তিনি রেখেছেন দলের দ্বাদশ এবং ত্রয়োদশ ব্যক্তি হিসেবে।
আফ্রিদির একাদশে স্বাভাবিকভাবেই প্রাধান্য পেয়েছে পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা। যদিও নিজেকে এই একাদশে রাখলেন না আফ্রিদি। ওপেনার হিসেবে নিজ দেশের সাঈদ আনোয়ার, মিডল অর্ডারে ইনজামাম-উল হক, ওয়াসিম আকরাম, শোয়েব আখতার এবং সাকলায়েন মোস্তাককে একাদশে রাখলেন আফ্রিদি।
এবার দেখে নেয়া যাক বিশ্বকাপে আফ্রিদির চোখে সর্বকালের সেরা একাদশ
Advertisement
সাঈদ আনোয়ার (ওপেনার): নব্বইয়ের দশকের বিশ্বের অন্যতম সেরা বাঁ-হাতি ওপেনার। আমির সোহেলের সঙ্গে আনোয়ারের ওপেনিং জুটি সেই সময় ত্রাস ছিল অনেক দলের কাছেই। ১৯৯৬, ’৯৯ এবং ২০০৩- বিশ্বকাপ খেলেছেন সাঈদ আনোয়ার। ২১ ম্যাচে মোট রান ৯১৫। সর্বোচ্চ রান অপরাজিত ১১৩। ১৯৯৭ সালে উইজডেনের বিচারে বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হন তিনি।
অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (ওপেনার): বিশ্বকাপ ইতিহাসে ৫০টি বেশি ডিসমিসালের জন্য শীর্ষস্থানে ছিলেন তিনি। যদিও বর্তমানে তিনি দ্বিতীয় স্থানে। বিশ্বকাপের একটি ইনিংসে সরফরাজ আহমদের সঙ্গে সর্বাধিক ডিসমিসালের (৬) যৌথ রেকর্ডও রয়েছে তার। গিলির অধিনয়াকত্বে ১৫টি ওয়ানডের মধ্যে ১১টি জিতেছে অস্ট্রেলিয়া।
রিকি পন্টিং (টপ অর্ডার) : ২০০৩ ও ২০০৭ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক। ১৯৯৯ সালে বিশ্বজয়ী দলের সদস্য ছিলেন। বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বলা হয় তাকে। দশকের সেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সফল অধিনায়ক রিকি পন্টিং। তার নেতৃত্বে ৩২২টি ম্যাচের মধ্যে ২১৯টি ম্যাচে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া।
বিরাট কোহলি : একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে তিনটি আইসিসি পুরস্কার পেয়েছেন। প্রথম ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ৫২ বলে দ্রুততম সেঞ্চুরি করার রেকর্ড রয়েছে তার। আন্তর্জাতিক এক দিনের ক্রিকেটে দ্রুততম ১০ হাজার রানের অধিকারীও বিরাট। ওয়ানডেতে ৩৫টি সেঞ্চুরি রয়েছে তার। ভারত অধিনায়কই আফ্রিদির দলের একমাত্র ভারতীয়।
Advertisement
ইনজামাম-উল হক : ক্রিকেট দুনিয়ায় ইনজি নামেই বেশি পরিচিত। ১৯৯২ বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নজর কেড়েছিলেন। নব্বইয়ের দশকে পাকিস্তান দলের ব্যাটিং স্তম্ভ ছিলেন তিনি। ২০০৩-এ অধিনায়ক হন। ২০০৭-এ পাকিস্তান বিশ্বকাপ হারার পর তিনি অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেন।
জ্যাক কালিস : বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজার রান রয়েছে তার। ওয়ানডে ও টেস্ট- দুটিতেই রয়েছে ২৫০টিরও বেশি উইকেট। ওয়ানডেতে ১৩১টি ক্যাচও ধরেছেন তিনি। ২০০৮-এ উইজডেনের বিচারে বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হন।
ওয়াসিম আকরাম: বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা বাঁ-হাতি পেস বোলার। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার হিসেবেও বিবেচিত হন আকরাম। ৩৫৬টি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচে ২৩ বার ৪টি বা তার বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ড রয়েছে তার।
গ্লেন ম্যাকগ্রা: বিশ্বের অন্যতম সেরা ফাস্ট মিডিয়াম পেস বোলার। জেমস অ্যান্ডারসনের পর অন্যতম সফল ফাস্ট বোলার ম্যাকগ্রা। ওয়ানডে ইন্টারন্যাশনালে ৩৮১টি উইকেট নেওয়ার রেকর্ড রয়েছে তার। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ৭১টি উইকেট নেওয়ার রেকর্ডও এই অসি পেসারের।
শেন ওয়ার্ন: বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা লেগ স্পিনার। ১৯৯৪-এ উইজডেনের বিচারে বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টেস্ট এবং ওয়ানডে মিলিয়ে ১ হাজারের বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ড রয়েছে তার।
শোয়েব আখতার: বলের গতির জন্য শোয়েবকে রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস বলা হত। বিশ্বের সবচেয়ে গতিময় বোলার হয় তাকে। ২০০৩-এর বিশ্বকাপে ঘণ্টায় ১৬১.৩ কিলোমিটার বেগে বল করার আন্তর্জাতিক রেকর্ড রয়েছে তার। ১৯৯৩ এবং ২০০৩-এর বিশ্বকাপে খেলেছেন তিনি।
সাকলায়েন মোস্তাক: বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা স্পিনার। তার ‘দুসরা’ ডেলিভারি ছিল বিশ্ববিখ্যাত। ১৯৯৫-২০০৪ সালের মধ্যে ৪৯টি আন্তর্জাতিক টেস্ট ও ১৬৯টি ওয়ানডে খেলেছেন।
শচীন টেন্ডুলকার (দ্বাদশ): ৬ টি বিশ্বকাপ খেলেছেন শচীন। যার মধ্যে ১৬টি হাফ সেঞ্চুরি এবং ৬টি সেঞ্চুরি রয়েছে। ৪৪টি ইনিংসে তার সংগৃহীত রান ২২৭৮। ব্যাটিং গড় ৫৬.৯৫। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বকাপে শচীনের যা ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে, তার পরেও এই তালিকা থেকে বাদ পড়াটা সত্যিই আশ্চর্যজনক।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি: ভারতীয় দলের সেরা ফিনিশার বলা হয় মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে। শুধু ব্যাট হাতে নয়, উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে একের পর এক ব্যাটসম্যানের ক্যাচ তালুবন্দি করেছেন। তার নেতৃত্বেই ২০১১ সালে বিশ্বকাপ জেতে। এমন এক ক্রিকেটারের সর্বকালের সেরা দল থেকে বাদ পড়াটাও অত্যন্ত আশ্চর্যের বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আইএইচএস/এমকেএইচ