টার্কিশ এয়ারলাইন্সের বাংলাদেশ অফিসের তরুণ জেনারেল ম্যানেজার এমরাহ কারাজা। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মিডিয়া টিমের সদস্য হিসেবে প্রথম সাক্ষাতের পর থেকে তার একটাই কথা ‘লেটস এনজয় দ্য ট্রিপ।’
Advertisement
সারাক্ষণ মুখে হাসি লেগে আছে। সাংবাদিকদের কখন কী লাগবে না লাগবে তা বলার আগেই ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন।
লেবুর রসসমেত কাঁচা ঝিনুক ভক্ষণ :
সফরের দ্বিতীয় দিনে সকাল ৯টা থেকে শুরু করে মধ্য বিকেল পর্যন্ত বেশ কয়েকটি প্রোগ্রাম শেষে বসফরাস নামে একটি প্রসিদ্ধ স্থানে নৌবিহার ও ডিনারের উদ্দেশে রওনা হয়েছি। গন্তব্যস্থলে পৌঁছালে গাড়ি থেকে প্রথমেই টিম লিডার এমরাহ নিচে নামেন। ক্লান্ত দেহে তাকে অনুসরণ করে সবাই বাস থেকে নামছি।
Advertisement
এরই মাঝে ফুটপাতে একজন বিক্রেতাকে খাবার বিক্রি করতে দেখে এমরাহ সফররত গণমাধ্যমকর্মীদের তা চেখে দেখার জন্য অনুরোধ জানালেন।
কী খাবার প্রথমে তা ঠিক ঠাওর করতে পারল না কেউ। ট্রেতেতে রাখা লেবু দেখে মনে করেছিলাম লেবুর শরবত জাতীয় কিছু একটা হবে।
সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘন ঘন পিপাসা লাগায় লেবু দেখে মনে মনে এমরাহকে ধন্যবাদ দিচ্ছিলাম। বাস থেকে সবাই নামতে নামতে এমরাহ নিজেই প্রথমে খাবারটি তৃপ্তিভরে মুখে পুরলেন। ভালো করে লক্ষ্য করতেই দেখলাম বিক্রেতা ঝিনুকের মুখ খুলে ভেতর থেকে মাংস জাতীয় খাবারটি চামচ দিয়ে তুলে তাতে লেবুর রস চিপে এমরাহের হাতে দিচ্ছেন। তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছেন এমরাহ।
এরপরই আমার পালা। ঝিনুকের মাংস খেতে কখনোই অভ্যস্ত না থাকায় নো থ্যাঙ্কস বলে পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম। এরপরই সময় টিভির তুষার আবদুল্লাহ ভাইয়ের পালা। তিনিও আমার মত নো থ্যাঙ্কস পার্টির দলে। একে একে নয়জনের সবাই কাঁচা ঝিনুক খেতে অস্বীকৃতি জানানোয় হতবাক হলেন এমরাহ। তবে তিনি যে তৃপ্তি করে খেলেন একবার মনে করেছিলাম খেয়ে দেখব কিনা। আবার পেট খারাপ হওয়ার ভয়ে সে ভাবনা দূরে সরিয়ে রাখলাম।
Advertisement
হোস্টের আইডি কার্ড সিজ করল পুলিশ :
স্বল্প সময়ের মধ্যে এশিয়া ও ইউরোপের ভূমিতে পা রাখার গোঁ ধরেছিলেন চট্টগ্রামের সাংবাদিক এজাজ ভাই। চেইন স্মোকার মজার মানুষ। অভ্যাসবশত ঘন ঘন সিগারেট টানা ও মোবাইলে নানা ভঙ্গিতে ছবি তোলার বাতিক তার। দুই মহাদেশে মাটিতে পা রাখার আবদার তো ছিল তার। তিনি টিম লিডার এমরাহকে বলে রাজি করালেন। সড়ক পথে আমরা ছুটে চললাম সে গন্তব্যে। পাহাড়ের উঁচুতে গিয়ে থামল বাস। বাস থেকে নামতেই সামনে এসে দাঁড়ালো ট্যুরিস্ট পুলিশ। কোমরেও অস্ত্র গুঁজে রাখা পুলিশ কর্মকর্তা টার্কিশ ভাষায় টিম লিডারের সঙ্গে কী যেন বলছিলেন। ভাষা বুঝতে না পারলেও পুলিশ কর্মকর্তার ভাবভঙ্গি দেখে খুব সুবিধার মনে হচ্ছিল না। টিম লিডার তাকে সফরের বিষয়ে কিছু একটা বলছিলেন তা বুঝতে পারছিলাম। তিনি তাকে যত বোঝান পুলিশ কর্মকর্তার তত গম্ভীর হতে দেখা যায়। ভাবখানা এমন বেটা কাদের নিয়ে এসেছিস দেখাচ্ছি মজা।
একপর্যায়ে টিম লিডারকে দেখলাম তার আইডি কার্ড বের করে দিতে। পুলিশ কর্মকর্তা আইডি কার্ড নিয়ে একটি রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলেন। মোবাইলের বোতাম চেপে গম্ভীর মুখে কি যেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছিলেন।
টিম লিডারকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি মৃদু হেসে জানালেন, এখানে টিম নিয়ে আসলে সাধারণত তাদের আগে থেকে অবহিত করতে হয়। কিন্তু এ বিষয়টি জানা না থাকায় সে নানা সন্দেহ করছে। তবে তিনি জানালেন উপরে পাহাড়ে যাওয়ার অনুমতি অবশ্যই পাওয়া যাবে। বেশ কিছুক্ষণ পর গম্ভীর সে পুলিশ কর্মকর্তা হাসিমুখে এগিয়ে এলেন তার কার্ড ফিরিয়ে দিয়ে সবাইকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। কিছু সময়ের জন্য টিম লিডারের চেহারায় কিছুটা সংখ্যার ছাপ দেখলেও তিনি তা গোপন করে হাসিমুখে সবার সঙ্গে কথা বলছিলেন।
ইংরেজি জানা সাক্ষাৎকারদাতা খুঁজতে খুঁজতে হয়রান :
সময় টেলিভিশনের সিনিয়র সাংবাদিক তুষার আবদুল্লাহ বিভিন্ন স্টোরি কিংবা ডকুমেন্টেশন বানানোর জন্য আসার পর থেকেই ইংরেজি জানা টার্কিশদের খুঁজছিলেন। দিনভর নির্দিষ্ট শিডিউলের বাইরে তিনি রাস্তাঘাট রেস্টুরেন্ট যেখানে যান সেখানেই টার্কিশ কাউকে দেখলে এগিয়ে গিয়ে আলাপ জমানোর চেষ্টা করেন কিন্তু ইংরেজি জন্য সাক্ষাৎকারদাতা আর খুঁজে পান না। আমি জিজ্ঞেস করি তুষার ভাই কয়জনের সঙ্গে আলাপ করলেন? তিনি হেসে জানান, এই তো আর ক’জন হলেই হাফ সেঞ্চুরি হয়ে যাবে।
নৌবিহার শুরু হওয়ার আগে ঘণ্টাখানেক সময় থাকায় টিম লিডার মর্মর সমুদ্র সৈকতের পাশে সুন্দর একটি পার্ক ঘুরে সময় কাটানোর পরামর্শ দিলেন। আমরা যে যার মতো ঘুরছি ছবি তুলছি। শিশুদের ছোট্ট একটি পার্কে বিভিন্ন রাইডে খেলা করতে দেখে আমি ছবি তুলছি। হঠাৎ করে এক শিশুর বাবা-মা আমাকে দেখে তাদের সন্তানের ছবিগুলো ডিলিট করতে অনুরোধ জানান।
তিনি জানালেন, তিনি চান না তাদের সন্তানের ছবি মিডিয়াতে আসুক। আশ্চর্য হলো তুষার আবদুল্লাহ ভাই ইংরেজি বলা কাউকে খুঁজে না পেলেও এ দম্পতি কিন্তু ইংরেজিতে আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন। যেহেতু তারা মিডিয়াতে কথা বলতে চান না তাই ইংরেজি জানা দম্পতির সন্ধান পেলেও তুষার ভাইকে আর সে কথা জানালাম না। ছবি তুলে কী বিপদেই না পড়ছিলাম তা নিজেই চেপে গেলাম।
হাজার হাজার গাড়ি চলছে কিন্তু হর্ন বাজে না :
দু’দিন ধরে ইস্তাম্বুল শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছি। রাস্তাঘাটে হাজার হাজার যানবাহন চললেও কাউকে হর্ন বাজাতে দেখলাম না। যে যার মতো গন্তব্যে ছুটে চলেছেন। এমনটা নয় যে ফাঁকা রাস্তা। মাঝে মাঝে ঢাকার মতো দীর্ঘ যানজটও চোখে পড়েছে কিন্তু কাউকে হর্ন বাজিয়ে সামনে ওভারটেক করতে দেখলাম না। কৌতূহলবশত টিম লিডারকে জিজ্ঞাসা করলাম, এখানে কি হর্ন বাজে না।
তিনি বললেন, একেবারেই নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ গাড়ির হর্ন বাজায় না, তারা হর্ন বাজানোকে এক ধরনের অপরাধ বলে মনে করে। এমরাহ বলছিলেন, তিনি ঢাকা শহরে গত সাত মাসে দেখেছেন কারণে-অকারণে সবাই হর্ন বাজায়। রাস্তায় কেউ নিয়মের ধার ধারে না। হর্ন না বাজালে আজেবাজে কথা বলে। এ কারণে তিনি ঢাকা শহরে গাড়ি নিয়ে চলতে ভয় পান।
এমইউ/এনডিএস/পিআর