তীব্র গরমে নাভিশ্বাস হয়ে উঠছে জনজীবন। প্রতিদিনই বাড়ছে তাপমাত্রা। ঘরে-বাইরে, দিন কি রাত; প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। এ গরমে একটু স্বস্তি পেতে চাহিদা বেড়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র এয়ারকন্ডিশনারের (এসি)। অসহনীয় গরমে এসি এখন শুধু এলিট শ্রেণি নয়; মধ্যবিত্তেরও প্রয়োজনীয় গৃহসামগ্রী হয়ে উঠেছে।
Advertisement
রাজধানীতে ফ্রিজের প্রধান বাজার স্টেডিয়াম মার্কেট, কারওয়ান বাজার, বিজয় সরণি, মালিবাগ, মুগদা সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গরমের কারণ এসির শো-রুম গুলোতে ক্রেতাদের ভিড়। কেউ বুকিং দিয়ে যাচ্ছে। কেউ আবার কেনার জন্য বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এসির দরদাম শুনছেন। সাধ্যের মধ্যে দাম আর মান সমন্বয়ে করে কিনছেন পছন্দের এসি। আর এ সুযোগে ক্রেতা আকর্ষণের জন্য নগদ মূল্য ছাড়ের পাশাপাশি নানা অফার দিচ্ছে বিভিন্ন ব্র্যান্ড। রাখছে কিস্তির সুবিধাও।
দেশের বাজারে এসি বিক্রি করে এমন ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে- ভিশন, জেনারেল, গ্রি, ওয়ালটন, ইউনিটেক, ক্যালভিনেটর, তোশিবা, কনিয়ন, কনকা, মিনিস্টার, সিঙ্গার, হিটাচি, ট্রান্সটেক, স্যামসাং, শার্প, প্যানাসনিকসহ বিভিন্ন কোম্পানি।
ব্র্যান্ড ও মানভেদে সাধারণত ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় এক টন, ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় দেড় এবং ৫০ থেকে এক লাখ টাকায় দুই টনের এসি পাওয়া যায়।
Advertisement
এসি আমদানিকারক, দেশীয় প্রস্তুতকারক, পাইকারি এবং খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছরই গরমে এসির চাহিদা ও বিক্রি বাড়ে। তবে এবার গরমের তীব্রতা বেশি হওয়ায় চাহিদা একটু বেশি।
তারা জানান, মার্চের প্রথম থেকেই এসি বিক্রি শুরু হয়েছে। এপ্রিলের শেষের দিকে বিক্রি ব্যাপকহারে বেড়েছে। মে মাসে এসি বিক্রি আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরএফএল ভিশন ইলেকট্রনিক্সের মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) মাহবুবুল ওয়াহিদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতিবছরই গরমে এসির চাহিদা বেড়ে যায়। কিন্তু এবার তাপমাত্রা একটু বেশি হওয়ায় এসির চাহিদাও বেশি। ফলে গত বছরের তুলনায় বিক্রিও বেড়েছে।’
তিনি জানান, গত মাস থেকেই এসি বিক্রি শুরু হয়েছে। এপ্রিলে বিক্রি ব্যাপকহারে বেড়েছে। মে মাসে এসি বিক্রি আরও বাড়বে বলেও প্রত্যাশা এ বিপণন কর্মকর্তার।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘এক সময় বিলাসী পণ্য ছিল এসি। উচ্চবিত্তরা এটি ব্যবহার করতো। এখন এসি আর বিলাসী পণ্য নয়, এটি জীবনযাপনের অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ গরমের স্বস্তি পেতে মধ্যবিত্তরাও এখন এসি কিনছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী সেরা মানের এয়ারকন্ডিশনার এনেছে ভিশন ব্র্যান্ড। সাধারণ ক্রেতার কথা মাথায় রেখে সুলভ মূল্যে এসি বিক্রি করা হচ্ছে। এর মধ্যে মাত্র ৩৬ হাজার টাকায় এক টনের এসি, দেড় টন বিক্রি হচ্ছে ৫৬ হাজার টাকা এবং দুই টনের ইনভার্টার এসি বিক্রি হচ্ছে ৬৯ হাজার টাকায়।’
এদিকে রাজধানীর সবুজবাগের স্যামসাং শো-রুমের বিক্রয়কর্মী মুশফিক জানান, ‘গ্রীষ্মে এসিতে বিশেষ মূল্যছাড় দিয়েছে স্যামসাং। এ ছাড়া ফ্রি ডেলিভারিসহ বিনামূলে এসি লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে। গত এক মাসে গরমের কারণে এসি বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ।’ গরমের তীব্রতা থাকলে এসি বিক্রি আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।
দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্যামসাং একটি বিশ্বমানের ব্র্যান্ড তাই দামও একটু বেশি। এক টনের স্যামসাং এসির দাম ৫৩ হাজার ৯০০ টাকা এবং ইনভার্টার এসির দাম ৬৩ হাজার ৪০০ টাকা।’
গুলিস্তান স্টেডিয়াম মার্কেটের সিঙ্গারের শো-রুমে এসি দেখছেন মুনর হোসেন নামে এক ক্রেতা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘তাপমাত্রা প্রতিদিনই বাড়ছে। বাসায় আব্বা-আম্মা অসুস্থ। তারা এ গরমে আরও অসুস্থ হয়ে গেছেন। তাই এসি ছাড়া উপায় দেখছি না। বাধ্য হয়ে কিনতে এসেছি। মান ও দাম যাচাই-বাছাই করছি। কারণ এসি তো আর একদিনে জন্য নয়। পছন্দ আর দাম মিললে কিনব।’
গরমে এসির বিক্রি সম্পর্কে জানতে চাইলে ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক উদয় হাকিম জাগো নিউজকে জানান, কয়েক বছর ধরে গরমের সময় দেশব্যাপী বিভিন্ন ধরনের শীতল যন্ত্রের চাহিদা ও বিক্রি ব্যাপক বেড়ে যায়। এ চাহিদার সিংহভাগ পূরণে এগিয়ে ছিল দেশীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটন। সেই ধারাবাহিকতা এ গরমে বজায় রাখতে আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়েছে ওয়ালটন। বরাবরের মতো এবারও পণ্যের ডিজাইন ও কালারে এনেছে বৈচিত্র্য। ওয়ালটন প্লাজা ও পরিবেশক শোরুমগুলোতে গড়ে তুলেছে পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ। বিভিন্ন পণ্যে বাড়তি ক্রেতা সুবিধাও দিচ্ছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় এবারও শীতল যন্ত্রের সিংহভাগ চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে ওয়ালটন।
প্রতিষ্ঠানটির সেলস ও মনিটরিং বিভাগের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর ৩৫ হাজার ৯০০ টাকা থেকে ৭৬ হাজার ৪০০ টাকার মধ্যে এক টন, দেড় ও দুই টনের মোট ১৫ মডেলের এসি এনেছে ওয়ালটন। এসব এসিতে রয়েছে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত সব ফিচার। ফলে এ বছর গরম শুরু হওয়ার আগেই এসি বিক্রি উল্লেখযোগ্যহারে বেড়ে গেছে।’
এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর সূত্র জানায়, ২৯ এপ্রিল (সোমবার) এ বছরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল মান্নান জানান, ‘আজকে সারাদেশেই তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি কমেছে। আজকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর কাছাকাছি সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ঈশ্বরদীতে ৩৭ দশমিক ২, চুয়াডাঙ্গায় ৩৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল রাজশাহীতে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
এসআই/এনডিএস/জেআইএম