৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপি ও অর্থ পাচারকারী রাঘব-বোয়ালদের সুযোগ দিয়ে কম ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে এনআই অ্যাক্টে মামলা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
Advertisement
খেলাপি ঋণ আদায় না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে এ কথা বলেন হাইকোর্ট।
আদালত বলেন, দেশে বড় বড় রাঘব বোয়াল আছেন, যারা ব্যাংক লুট করে ফেলল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।’
‘আমরা দেখছি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে আরও বেশি করে ঋণ দেয়ার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে।’ এটা কেন? এমন প্রশ্নও তোলেন আদালত।
Advertisement
২০ বছর ধরে ঋণ খেলাপি সংক্রান্ত এক মামলার শুনানিতে মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এসব বলার সঙ্গে সঙ্গে আদেশ দেন।
ঋণখেলাপি ও অর্থপাঁচারকারীদের তালিকা প্রস্তুত হয়েছে কি না, ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি নির্ণয়ের শক্তিশালী কমিশন গঠনের অগ্রগতি হয়েছে কি না, তা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জানতে চেয়েছেন আদালত।
আদালতে আজ রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
মনজিল মোরসেদ ও এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার সাংবাদিকদের জানান, গত ২০ বছরে ব্যাংকের ঋণখেলাপি ও অর্থপাঁচারকারীদের তালিকা প্রস্তুত এবং বিগত বছরগুলোতে ব্যাংকিং খাতে কী পরিমাণ অনিয়ম, দুর্নীতি হয়েছে তা নির্ণয়ে একটি শক্তিশালী কমিশন গঠনের অগ্রগতি জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ওই অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার জন্য বলেছেন আদালত।
Advertisement
এর আগে শুনানিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বারবার সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হলেও বেসরকারি ব্যাংকগুলো তা কার্যকর করছে না।
ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা রোধে কমিশন গঠন এবং অর্থ পাঁচারকারী ও ঋণ খেলাপিদের তালিকা এক মাসের মধ্যে আদালতে দাখিলের জন্য গত ১৩ ফেব্রুয়ারি অর্থ সচিব, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরসহ ছয় বিবাদীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। কিন্তু ওই তালিকা দাখিল ও কমিশন গঠন না করে খেলাপিমুক্ত থাকার সময় তিন মাসের পরিবর্তে ছয় মাস বৃদ্ধি করার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
তিনি বলেন, এ ধরনের সময়সীমা বাড়ানোর ফলে ঋণ খেলাপিরা পার পেয়ে যাচ্ছেন। এ পর্যায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামানের উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, সিআইবি রিপোর্টে যখন নাম আসছে না তখন ঋণ খেলাপিরা অন্য ব্যাংক থেকে লোন নেয়ার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন। ঋণ খেলাপিদের তালিকা চেয়েছি সেটা যাতে দাখিল করতে না হয় সেজন্য কি এই সময়সীমা বাড়ানো?
মনজিল মোরসেদ বলেন, ঋণ খেলাপিদের তালিকা যাতে ছোট থাকে সেজন্যই এই পদক্ষেপ। ব্যাংকের আইনজীবী বলেন, এটা সত্য নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব ব্যাংকের কাছে ঋণ খেলাপিদের তালিকা চেয়েছে।
আদালত বলেন, ৩০ দিনের মধ্যে আমরা কমিশন গঠন করতে বলেছিলাম। সেটার কী অবস্থা? আইনজীবী বলেন, এই আদেশ এখনও পাইনি।
আদালত আরও বলেন, এভাবে উচ্চ আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করবেন? আমরা যদি কাউকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাখি সেটা কি শোভনীয় হবে? আপনি তো আদালতের আদেশ ঠিকভাবে পড়েননি। তাহলে কীভাবে ক্লায়েন্ট ডিফেন্ড করবেন। এরপরই কমিশন গঠনের বিষয়ে কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে ১৫ দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ব্যাংকের আইনজীবীকে নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে ১৩ ফেব্রুয়ারি গত ২০ বছরে দেশের ঋণ খেলাপি ও অর্থ পাচারকারীর তথ্য চেয়েছিলেন হাইকোর্ট।
এফএইচ/জেডএ/এমকেএইচ