দেশজুড়ে

গরমে পুড়ছে রাজশাহীর মানুষ, দু-তিন দিনের মধ্যে বৃষ্টির আভাস

বরেন্দ্র অঞ্চলে বেশ কয়েকদিন ধরেই চলছে তাপপ্রবাহ। তেজালো রোদে পুড়ে যাচ্ছে চারপাশ। নেই বৃষ্টির ছিটেফোটাও। বৃষ্টির জন্য প্রতিক্ষা বাড়ছে এ অঞ্চলের প্রাণ-প্রকৃতির।

Advertisement

মঙ্গলবার রাজশাহীতে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘরে-বাইরে প্রচণ্ড গরমে কাহিল বরেন্দ্রের জনজীবন। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে-খাওয়া শ্রমজীবী মানুষগুলো। পথে নেমে ভোগান্তিতে পড়ছেন কাজের সন্ধানে ঘরছাড়া মানুষজন। রাজশাহী আবহাওয়া অফিস বলছে, এ অবস্থা বিরাজ করবে আরও কয়েকদিন। নিম্নচাপ থেকে বৃষ্টি নামলেই প্রাণ পাবে প্রকৃতি।

মঙ্গলবার নওগাঁর বদলগাছীতে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বগুড়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিন পাবনার ঈশ্বরদীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সিরাজগঞ্জের তাড়াশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

Advertisement

আবহাওয়া অফিস আরও জানিয়েছে, এপ্রিলে রাজশাহী বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ৮২ মিলিমিটার। পুরো মাসে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস ছিল ৭৫ থেকে ৯০ মিলিমিটার। তবে পূর্বাভাস ছাড়িয়ে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১২১ দশমিক ১ মিলিমিটার। সর্বশেষ ২১ এপ্রিল বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। এরপর থেকে বৃষ্টির দেখা নেই এ অঞ্চলে। নিম্নচাপের প্রভাবে দু-তিন দিনের মধ্যেই বৃষ্টির আভাস দিচ্ছে আবহাওয়া দপ্তর। তখন থেকে সহনীয় হয়ে উঠবে পরিবেশ। আগামী মে মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত এবং জুন থেকে বর্ষা নামবে বলেও জানাচ্ছে আবহাওয়া দপ্তর।

রাজশাহী আবহওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক রাজিব খান জানিয়েছেন, গত কয়েকদিন ধরেই রাজশাহী অঞ্চলে তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে। মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় ২৯ এপ্রিল। ওই দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তবে মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সামান্য কমে দাঁড়িয়েছে ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এর আগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৮ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৯, ২৭ এপ্রিল ৩৫ দশমিক ৬, ২৬ এপ্রিল ৩৬ দশমিক ২ এবং ২৫-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ক’দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা উঠানামা করেছে ২৪ দশমিক ৬ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে।

ঢাকা আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে রাজিব খান জানান, এপ্রিলে এ অঞ্চলে অন্তত একটি তীব্র তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস ছিল। দিনের সর্বোচ্চ মাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে গেলে সেটি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে ধরে নেয়া হয়। তাপপ্রবাহ মৃদু থেকে মাঝারিতে উঠেছিল। এমন এক থেকে দুটি তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস ছিল এপ্রিলে।

Advertisement

তবে আগামী মে মাসেও অন্তত একটি তীব্র এবং অন্তত দুটি মৃদু বা মাঝারি তাপপ্রবাহ হানা দিতে পারে এ অঞ্চলে। থাকছে কালবৈশাখী ও বর্জ্রঝড়ের আভাসও। তবে মৌসুমী বায়ুর সক্রিয়তায় জুনের শুরুর দিকেই বর্ষা নামবে প্রকৃতিতে।

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে স্মরণকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে রেকর্ডকৃত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এরপর ২০০৫ সালের ১২ জুন রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এছাড়া ২০১৪ সালের ২১ মে তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২০১৬ সালের ২৯ এপ্রিল উঠেছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এমএএস/এমকেএইচ