দেশজুড়ে

বরিশালে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জুলুমের শিকার শত শত শিক্ষার্থী

বরিশালের মুলাদী উপজেলার সরকারি স্কুল-কলেজে নানা ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে সন্তানদের ওপর চাপ সৃষ্টির ভয়ে বেশিরভাগ অভিভাবক প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না। আবার দু’একজন অভিভাবক অভিযোগও দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট দফতরে। তবে প্রতিকার পাচ্ছেন না। তারা অতিরিক্ত ফি বন্ধের দাবিতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Advertisement

উপজেলা সদরে অবস্থিত মুলাদী সরকারি কলেজ, মুলাদী সরকারি মাহমুদজান মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চরকালেখান মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে বিভিন্ন খাত দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে মুলাদী সরকারি কলেজ ও সরকারি মাহমুদজান মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকারিকরণের আদেশ জারি হওয়ার পর থেকে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে নিজেদের খেয়ালখুশি মতো বেসরকারি খাতে আদায় দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে। এতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের থেকে শিক্ষার্থী প্রতি ব্যয় বেড়েছে ৪ থেকে ৫ গুন। ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরাও এ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। তাদের কাছ থেকে সমপরিমাণ টাকা আদায় করা হচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা অবৈতনিক শিক্ষা লাভের সুযোগ পেত কিন্তু সরকারিকরণের ঘোষণার পরে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা আর অবৈতনিক পড়াশুনার সুযোগ পাচ্ছে না।

মুলাদী সরকারি মাহমুদজান মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অভিভাবক আল মামুন জানান, চলতি বছর ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১২০০ টাকা আদায় করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দেয়া বেতন কার্ডে সরকারি খাতে আদায় দেখানো হয়েছে মাত্র ২০টাকা। বাকি ১১৮০ টাকা নেয়া হয়েছে বেসরকারি খাতে।

Advertisement

এছাড়া জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে সরকারি খাতে মাসিক ১০ টাকা ও বেসরকারি খাতে মাসিক ১২৫ টাকা আদায় করা হয়েছে। মাসিক আদায়ের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মিলাদ, বিদায়, মাসিক পরীক্ষার নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। শুধু ৬ষ্ঠ শ্রেণিই নয় ওই বিদ্যালয়ের সকল শ্রেণির ভর্তি ও মাসিক বেতনের ক্ষেত্রে এ ধরনের অর্থ আদায় করছে বিদ্যালয়টি। ধনি-গরিব নির্বিশেষে কোনো শিক্ষার্থীই টাকা ছাড়া পড়াশুনার সুযোগ পাচ্ছে না।

মুলাদী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী অভিভাবক আব্দুর রব জানান, তার মেয়েকে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য কলেজ প্রায় সাড়ে ৩ হাজার টাকার একটি তালিকা দিয়ে শিউর ক্যাশ মোবাইল মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করতে বলেন। একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার বিভিন্ন ফি বাবদ ১৬৮০ টাকা শিউর ক্যাশের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়েছে। যেখানে পার্শ্ববর্তী হিজলা উপজেলার হিজলা সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ফি ধরা হয়েছে ৭৫০ টাকা। একই সময়ে সরকারিকরণকৃত দুইটি কলেজে দুই ধরনের ফি ধার্য্য হওয়ায় শিক্ষার্থী অভিভাবকদের মাঝে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তারা অতিরিক্ত ফি বন্ধের দাবিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এছাড়া মুলাদী সরকারি কলেজে ফরম পূরণে মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা ব্যাংকে ফি পরিশোধের মাধ্যমে অতিরিক্ত ফি আদায় করা হচ্ছে। মুলাদী কলেজ সরকারিকরণ হওয়ায় আগে শিক্ষার্থীদের কাছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা আদায় করা হতো। তখন গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়া হতো। কিন্তু সরকারি ঘোষণা হওয়ার পর থেকে ওইসব শিক্ষার্থী সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্নাতক পাস কোর্সের শিক্ষার্থী ইউসুফ জানান, ভর্তির জন্য কলেজে ৪ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এর আগের বছরগুলোতে স্নাতক কোর্সে ভর্তির জন্য আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা নেয়া হতো।

Advertisement

এদিকে মুলাদী সরকারি মাহমুদজান মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও চরকালেখান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক অতিরিক্ত ফি বন্ধের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আবেদন করেছেন।

মুলাদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, তার কলেজে সরকারি নিয়মমত টাকা নেয়া হচ্ছে।

পাশ্ববর্তী হিজলা উপজেলার হিজলা সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ফি ধরা হয়েছে ৭৫০ টাকা। মুলাদী সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার বিভিন্ন ফি বাবদ নেয়া হচ্ছে ১৬৮০ টাকা, এর কারণ জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মো. দেলোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে জানান, তার কলেজের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফরম ফিলাপের সময় বোর্ড নির্ধারিত টাকা নেয়া হবে। তখন কোনো ফি নেয়া হবে না। আর তখন হিজলা সরকারি কলেজ অতিরিক্ত ফি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করবে বলে অধ্যক্ষ মো. দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম জানান, চরকালেখান মাধ্যমিক বিদ্যালয় অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ পেয়েছি। মঙ্গলবার ওই স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মুলাদী সরকারি মাহমুদজান মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মুলাদী সরকারি কলেজের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাকির হোসেন জানান, মাহমুদজান মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ পেয়েছি। শিক্ষার্থীদের বেতন কার্ড ও রশিদ এবং রেজিস্ট্রি বই নিয়ে আসতে কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। কোন অনিয়ম পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাইফ আমীন/এমএএস/এমএস