খেলাধুলা

ঘরের মাঠে ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে খেলার আকুতি মাশরাফির

‘ভালো’ দুই অক্ষরের ছোট্ট শব্দ। তবে এর ব্যাপ্তি বিশাল। ভক্ত-সমর্থকরা টাইগারদের কাছ থেকে ভালো পারফরম্যান্স দেখার আশায় উন্মুখ। সেই সাথে মাশরাফিবাহিনী ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মঞ্চ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলুক- এটাও প্রত্যাশা ।

Advertisement

এ প্রত্যাশাকে আকাশ কুসুম কল্পনা ভাবার কারণ নেই। কারণ এর আগে বাংলাদেশ দুই-দুইবার বিশ্বকাপের সেরা আটে (২০০৭ সালে সেরা আটে আর ২০১৫ সালে প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে) পা রেখেছে। এবার যে দেশের মাটিতে হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ, সেই ইংল্যান্ডে মাত্র দুই বছর আগে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল খেলেছিল মাশরাফির দল।

সেই সাফল্যের সিড়ি বেঁয়ে এবার নিশ্চয়ই বিশ্বকাপে সেরা চারে জায়গা করে নিবে টাইগাররা- এমনটাই প্রত্যাশা সবার। সে প্রত্যাশা শুধু ভক্ত ও সমর্থকদের নয়। অধিনায়ক মাশরাফিও ভেতরে ভেতরে সে স্বপ্নই দেখছেন। মাশরাফি মনে করেন, সেমিফাইনাল খেলা অসম্ভব কর্ম নয়, অবশ্যই সম্ভব। তবে টাইগার অধিনায়কের অনুভব, শেষ চারে পৌঁছানোর পথটা সহজ নয়, বেশ কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কী কী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীণ হতে পারে, কী কী প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করা ছাড়া বড় সাফল্য ধরা দেবে না? আজ ভরদুপুরে শেরে বাংলার কনফারেন্স হলে সংবাদ সম্মেলনে অনেক প্রশ্নের ভীড়ে সেসব প্রশ্নের মুখোমুখি হলেন মাশরাফি।

Advertisement

প্রশ্ন উঠলো, বিশ্বকাপ হবে শতভাগ ব্যাটিং উপযোগী কন্ডিশনে, রান হবে প্রচুর। হয়তো গড়পড়তা ৩০০ বা তারও বেশি রান উঠবে এবং জিততে হলে বা প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে বোর্ডে ৩০০ রানের স্কোর জরুরী। এখন বাংলাদেশের সে সামর্থ্য কতটা?

পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশ ৩০০ বা তার চেয়ে বেশী রান করে কালে ভদ্রে। ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সাকুল্যে ৩০০+ রান করেছে মাত্র ছয়বার। আর এ সময়ে আড়াইশোর ওপরে রান তাড়া করতে গিয়ে ১৪ বারের মধ্যে ১০ বারই পারেনি, মাত্র চারবার ঐ রান টপকে গেছে।

সেই দলকে বিশ্বকাপে ভাল ও বড় কিছু করতে হলে ৩০০-৩৫০ রানের স্কোর গড়তে হবে বা ঐ পরিমাণ রান তাড়া করতে হবে। সেটা কতটা সম্ভব? সে সামর্থ্য কি আছে টাইগারদের? এ প্রশ্নের জবাবে মাশরাফি যে ব্যাখ্যা দিলেন, তা শুনে মনে হলো এমন চিন্তা তার মাথায় আগেভাগেই এসেছে। টাইগার ক্যাপ্টেন সাজিয়ে ফেলেছেন, বিশ্বকাপের মাঠে সফল হতে হলে তার দলকে কিছু বাঁধা টপকাতেই হবে।

যার একটি হলো, তিনশো’র ওপরে রান করা। মাশরাফির ধারণা, বিশ্বকাপের খেলা হবে মূলত জুন-জুলাই মাসে। এই সময়টায় ইংলিশ উইকেটে রান ওঠে প্রচুর। অর্থাৎ পিচ থাকবে শতভাগ ব্যাটিং সহায়ক। সেখানে রান করা ছাড়া সাফল্য পাওয়া কঠিন।

Advertisement

সে কারণেই মাশরাফির মুখে এমন সংলাপ, ‘আগে জানতাম ইংল্যান্ড কিংবা নিউজিল্যান্ডে দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলোতে যে ব্যাটিং করা কঠিন। কিন্তু এখন দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলোতে প্রচুর রান হয়। আর বিশ্বকাপে আইসিসির চাওয়াই থাকে ফ্ল্যাট উইকেট এবং প্রচুর রানের। সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই এখানে বড় রানের খেলা হবে। ইংল্যান্ডে এই সময়ে অনেক রান হয়। যা সব দলের বোলারদের জন্যই চ্যালেঞ্জ।’

তবে টাইগার অধিনায়কের ধারণা, তার দলের বোলারদের চ্যালেঞ্জটা আরও একটু বেশি, কারণ দলে কোন রিস্ট স্পিনার নেই। তিনি বলেন, ‘আমাদের হয়তো বা কোনো রিস্ট স্পিনার নেই, যা আমাদের জন্য আরও বড় চ্যালেঞ্জ। অন্যান্য দলে যাদের আছে তারা রিস্ট স্পিনারের কার্যকরিতা ভোগ করে। রিস্ট স্পিনারররা মাঝখানে ভাইটাল ব্রেকথ্রু দিয়ে দেন। আমাদের দলে যেহেতু কোন রিস্ট স্পিনার নেই, তাই আমাদের জন্য এটা অবশ্যই একটা চ্যালেঞ্জ।’

বড় স্কোর গড়া ও তাড়া করা নিয়ে মাশরাফি খুব যে চিন্তিত- তা নয়। তার কথায় একটা বিষয় পরিষ্কার, জায়গামত টিম বাংলাদেশের ৩০০ ও তার বেশি রান করার রেকর্ড কম। কিন্তু তা করার সামর্থ্য নেই তা মনে করেন না মাশরাফি। আর মনে করেন না বলেই এমন কথা মুখে, ‘আমাদের ৩০০ রান করার সামর্থ্য নেই তা বলবো না। অতীতে হয়তো এরকম রেকর্ড খুব একটা নেই। চেজ করে জিতেছি বা এতো বড় রান করেছি, সে নজিরও কম। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমরা ৩২৯ করেছিলাম। তামিম একশ করেছিল। এরকম যদি ব্যাটিং করি তাহলে পসিবল।’

কিন্তু অন্য দলগুলো তো প্রায় নিয়মিত ৩০০ রান করছে। বাংলাদেশ দলের তো সে রেকর্ড নেই। সেটা কেন?জবাবে মাশরাফি একটি তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলেছেন। নিজ দেশে হওয়া ওয়ানডে উইকেটের সরাসরি সমালোচনা না করলেও এ প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে উইকেটের প্রসঙ্গ টেনেছেন নড়াইল এক্সপ্রেস।

তার ধারণা, দেশের মাটিতে বাংলাদেশ যে সব পিচে ওয়ানডে খেলে, সেখানে তো আর ৩০০+ রান হয় না। তাই তার ভাবটা এমন, ঘরের মাঠে নিয়মিত ৩০০+ রান করার উইকেটে নিয়মিত খেলা হলে অতি অবশ্যই বেশি রান করার অভ্যাসটা জন্মাতো।

এ সম্পর্কে মাশরাফির ব্যাখ্যা, ‘আমাদের নিকট অতীতে এতো বড় স্কোর নাই। একটা কারণ হতে পারে আমাদের হোম কন্ডিশনে তো এতো রান হয়না। এটা একটা ব্যাপার। এর বাইরে তার মনে হয় অভ্যাসেরও একটা ব্যাপার আছে। তবে সামর্থ্য যে নেই তা বলবো না।’

নিজ দলের ব্যাটিং লাইন আপের ওপর আস্থা প্রচন্ড তার, ‘আমাদের ব্যাটিং অর্ডার অনেক অভিজ্ঞ। কিন্তু অনফিল্ডে ২২ গজে যে চাপটা আসবে ওই চাপ সামলাতে হবে। আবার রানও করতে হবে। সেটা করা না করা নির্ভর করবে আসলে মানসিকতার ওপর। কিন্তু সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন নেই।’

এআরবি/এসএএস/জেআইএম