গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে সাবেক সেনা সদস্যের মরদেহ নিয়ে টানাটানি চলছে হিন্দু ও মুসলিম স্ত্রীর। উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের নেকটগাড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। পরে উভয়পক্ষকে নিয়ে স্থানীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে সোমবার বিকেলে মুসলিম স্ত্রীর পরিবারের কাছে মরদেহ হস্থান্তর করা হয়েছে।
Advertisement
এলাকাবাসী জানান, নেকটগাড়ী গ্রামে তিলকা রবিদাসের ছেলে দিলীপ চন্দ্র রবিদাস বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি নেয়। একপর্যায়ে তিনি একই সম্প্রদায়ের গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ফতুল্লাপুর এলাকার অর্জুন চন্দ্র রবিদাসের মেয়ে রাজবসিয়া রানীকে বিয়ে করে সংসার করে। এ সংসার জীবনে দিলীপ চন্দ্রের ৪ সন্তান।
তারা জানান, দিলীপ চন্দ্র মিশনে ইরাক, কুয়েতসহ বিভিন্ন দেশে যাওয়ার সময় হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে দিলীপ চন্দ্র নাম পরিবর্তন করে মো. আবু বক্কর সিদ্দিক নাম ধারণ করে যান। পরে আবু বক্কর সিদ্দিক রংপুর সদরের বাহাদুরপুর গ্রামের মো. আ. রাজ্জাকের মেয়ে রুনা লায়লাকে বিয়ে করে বগুড়ার জাহাঙ্গীরাবাদ এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন। একই সময় তিনি প্রথম স্ত্রীর সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করেন এবং ২য় বিয়ে ও ধর্ম বদলে মুসলিম হওয়ার বিষয়েও জানান। তবে ২য় স্ত্রীর ২১ বছরের সংসারেও কোনো সন্তান হয়নি।
এদিকে আবু বক্কর সিদ্দিক ২০০৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন। অবসরের পর বেশ কিছুদিন হলো তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গত ২১ এপ্রিল তিনি হার্ট আ্যটাক করলে ২য় স্ত্রী স্বামীকে বগুড়া সিএমএমএইচ এ ভর্তি করান এবং তিনি সুস্থও হন। ২য়বার অসুস্থ হলে প্রথম স্ত্রীর ছেলে অমল চন্দ্র রবিদাস তার বাবাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেবার পথিমধ্যে গতকাল রোববার রাত ১২টার দিকে তিনি মারা যান।
Advertisement
পরে অমল চন্দ্র তার বাবার লাশ পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের নেকটগাড়ী গ্রামে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন।
এ খবর ২য় স্ত্রী রুনা লায়লা জানতে পেরে স্বামীর বাড়িতে এসে মুসলিম রীতি অনুসারে দাফন ও জানাজা করে কবরস্থ করার কথা বলেন। এতে আপত্তি জানান প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও সন্তানরা। তারা হিন্দু (রবিদাস) শাস্ত্র অনুযায়ী লাশের সৎকারের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিলে নানা জল্পনা কল্পনার সৃষ্টি হয়।
মরদেহ নিয়ে দু'পক্ষের বিরোধের কারণে বিষয়টি নিয়ে পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেজবাউল হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু বকর প্রধান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, পুলিশ, গণমাধ্যমকর্মী উভয় পরিবারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যান। আলোচনা শেষে সর্বসম্মতিক্রমে যেহেতু মৃত ব্যক্তি দীর্ঘদিন হলো মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করে নামাজ কালাম ও হজ পালন করেছেন বিধায় তাকে মুসলিম শরীয়ত মোতাবেক দাফনে দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে মরদেহ প্রদান করা সিদ্ধন্ত নেয়া হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাবেক সেনা সদস্য অবু বক্করের মরদেহ নিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী রুনা লায়লা তার বাবার বাড়ি গঙ্গচড়ায় নিয়ে যাও অনুমতি পায়।সন্ধ্যায় সেখানে মরদেহ দাফন হওয়ার কথা রয়েছে।
Advertisement
এ ঘটনায় পলাশবাড়ী থানা অফিসার ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত) মতিউর রহমান জানান, সকল প্রমাণাদি যাচাই বাছাই করে সর্বসম্মতিক্রমে দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
জাহিদ খন্দকার/এমএএস/পিআর